যে দেশে মানুষের দুধ পানে বড় হয় হরিণ !
ভারতের রাজস্থানে বিষ্ণৈ আদিবাসীদের মধ্যে প্রাণীকুলের প্রতি গভীর মমত্ববোধের নিদর্শন লক্ষ্য করা যায়। সেখানকার মিথ অনুসারে, রাজস্থানের যোধপুরে বসবাসকারী বিষ্ণৈরা দেবতা জাম্বেশরের ২৯টি নির্দেশ মেনে চলেন। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো হরিণ শাবককে নিজ সন্তানের মতো বুকের দুধ খাইয়ে প্রতিপালন করা। এজন্য বিষ্ণৈ নারীরা হরিণ শাবককে বুকের দুধ পান করিয়ে লালন পালন করেন।
বিষ্ণৈদের ধর্মীয় মিথ অনুসারে ‘প্রকৃতিকে তারা দেবজ্ঞানে পূজা করে। আর সেই প্রকৃতির সন্তান হলো হরিণশিশু। প্রকৃতি রক্ষা এবং প্রকৃতির সন্তানদের বিশেষ করে স্তন্যপায়ী প্রাণীদের প্রতিপালন করা নিজেদের ধর্মীয় কাজের অংশ হিসেবেই তারা মনে করে। তাদের পূজনীয় দেবতা বা গুরু জাম্বেশ্বর। গুরুর মতে, সব সৃষ্টির মধ্যেই স্বর্গীয় শক্তি বিদ্যমান। ইতিহাস বলছে, বিষ্ণৈ সম্প্রদায় ১৭৩০ সালে খেজুর গাছ বাঁচাতে রাজার সঙ্গে যুদ্ধ করেছিল। এই যুদ্ধে প্রাণ দিয়েছেন ৩৬৩ জন বিষ্ণৈ যুবক।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণ আর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে ভারতীয় সংস্কৃতি। দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের জীবন ধারার মধ্যে বৈচিত্র্য রয়েছে। এমনই একটি বৈচিত্র্যময় সম্প্রদায় বিষ্ণৈ। এই সম্প্রদায়ের নারীরা তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের অংশ হিসেবে সন্তানদের পাশাপাশি অনাথ কিংবা হরিণশিশুকে বুকের দুধ পান করান। জানা যায়, ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় পাঁচশ বছর ধরে বাস করছে বিষ্ণৈ সম্প্রদায়। তারও আগে তারা বন-জঙ্গলে বাস করতো। বনভূমির সংকট দেখা দিলে রাজস্থানের যোধপুরে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করে। বর্তমানে প্রায় ২০০০ পরিবারের একটি সম্প্রদায় সেখানে বাস করছে। ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন প্রাণীর সঙ্গে খেলাধুলা করে বড় হয় বিষ্ণৈ শিশুরা। শুধু তাই নয়, কেউ যাতে প্রকৃতির সন্তানদের হত্যা করতে না পারে এজন্য প্রাণীহত্যা বন্ধে বিষ্ণৈদের আছে বিশেষ একটি বাহিনী। নাম ‘বিষ্ণৈ টাইগার ফোর্স।’
উল্লেখ্য, এই যোধপুরেই হরিণ হত্যার দায়ে বলিউড সুপারস্টার সালমান খানকে জেলে যেতে হয়েছিল। তার ওপর অভিযোগ ছিল- যোধপুরের কাছে কানকানি গ্রামে দুটি কৃষ্ণসার প্রজাতির হরিণ শিকার করেন। ভারতের একটি আদালত ২০১৮ সালে এ কারণে তাকে পাঁচ বছরের জেল এবং দশ হাজার রুপি জরিমানা করে।