fbpx
হোম অন্যান্য যে ডাক্তার বিনামূল্যে দেড় লাখ মানুষের দৃষ্টি ফিরিয়েছেন !
যে ডাক্তার বিনামূল্যে দেড় লাখ মানুষের দৃষ্টি ফিরিয়েছেন !

যে ডাক্তার বিনামূল্যে দেড় লাখ মানুষের দৃষ্টি ফিরিয়েছেন !

0

নেপালের চক্ষু বিশেষজ্ঞ স্যান্ডুক রুইট নামমাত্র মূল্যে দরিদ্র মানুষদের সেবা করে থাকেন। যেখানে চোখের ছানি অপারেশন করতে প্রয়োজন হয় ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা, সেখানে তিনি তা করেন মাত্র ২৫০ টাকা (৩ ডলারে)। এ পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার জনেরও বেশি মানুষকে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন এই নেপালি চক্ষু বিশেষজ্ঞ।

১৯৫৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর উত্তর-পূর্ব নেপালের তপলজং জেলার তিব্বতের সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রাম ওলংচংগোলাতে রুইটের জন্ম। রুইটের মা- বাবা ছিল গ্রামের অন্যদের মতোই নিরক্ষর। তার গ্রামটি ছিল মাত্র ২০০ জনের একটি ছোট ক্লাস্টার। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১১ হাজার ফুট উপরে অবস্থিত, বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা কোল ঘেঁষেই এর অবস্থান। এটি নেপালের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি অন্যতম গ্রাম। যেখানে বিদ্যুৎ নেই, স্কুল নেই, নেই কোনো স্বাস্থ্য সুবিধা বা যোগাযোগের আধুনিক উপায়। বছরের ছয় থেকে নয় মাস ধরে বরফের নিচে ঢাকা থাকে এখানে। রুইটের পরিবার ক্ষুদ্র কৃষিক্ষেত্র, ক্ষুদ্র ব্যবসায় এবং প্রাণিসম্পদ চাষ থেকে জীবিকা নির্বাহ করেছে। স্যান্ডুক রুইট নিজেও কিন্তু একটি দরিদ্র পরিবারে বেড়ে উঠেছে। সেখানে প্রতিদিনই ছিল বেঁচে থাকার লড়াই। সান্দুকের বাবা তাদের পরিবারের সবার জন্য খাবারের খরচ জোগাড় করতেই হিমশিম খেতেন। সেখানে লেখাপড়া ছিল স্বপ্নের মতো। তার গ্রামের নিকটতম স্কুলটি ছিল দার্জিলিং এ এগারো দিন দূরে। তবে তার বাবা তাদের লেখাপড়ার জন্য উৎসাহ দিতেন সব সময়। রুইট তার বাবা-মায়ের চার সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় ছিল। তবে তার বড় ভাই তিন বছর বয়সে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। আট বছর বয়সে ছোট বোন চুন্দক জ্বরে আক্রান্ত হন। এরপর ১৫ বছর বয়সে বিনা চিকিৎসায় মারা যায় ইয়াংলা। ছোট বোন ইয়াংলার মৃত্যু তাকে খুবই কষ্ট দিয়েছিল। ইয়াংলা ছিল তার শৈশবের সহচর। এতে তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, চিকিৎসা এমনই একটি ব্যয়বহুল ক্ষেত্র, যা সুবিধাবঞ্চিত মানুষের বড্ড প্রয়োজন। সেই থেকেই তিনি সংকল্প করেন সমাজের সুবিধা বঞ্চিত এসব মানুষদের জন্য কিছু করবেন। এভাবেই তার ডাক্তারি পড়তে আসা। তিনি চিকিৎসার একটি নতুন পদ্ধতি গবেষণা ও পরিমার্জন করার জন্য কয়েক বছর ব্যয় করেছেন। এরপর একটি কৃত্রিম লেন্স তৈরি করেন যা আগের তুলনায় অনেক বেশি সাশ্রয়ী। এছাড়াও তার অপারেটিং পদ্ধতিটি আরো দ্রুত এবং কার্যকর করে তোলেন। এতে স্বল্প আয়ের রোগাক্রান্ত রোগীদেরও দৃষ্টি ফিরে পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

বিনা খরচে চিকিৎসা দিতে এবং দরিদ্র গ্রামীণ রোগীদের অপারেশন করার জন্য স্যান্ডুক রুইট নিয়মিত নেপালের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে বেড়ান। মাতৃভূমির পালা শেষ করে চিকিৎসা দিয়ে বেড়ান ভারত, আফ্রিকা, নর্থ কোরিয়াসহ এশিয়ার বিভিন্ন নিম্নআয়ের মানুষদের।

১৯৯৪ সালে রুইট এবং ফ্রেড হলস ফাউন্ডেশন কাঠমান্ডুতে তিলগঙ্গা চক্ষু কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। এটি এখন তিলগঙ্গা ইনস্টিটিউট অফ চক্ষুবিজ্ঞান নামে পরিচিত। পেয়েছেন নানান সম্মাননা এবং পুরস্কার। এমনকি ২০১৮ সালে, ভারত সরকার তাকে ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান পদ্মশ্রী দিয়ে সম্মানিত করেছে।

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *