fbpx
হোম অন্যান্য মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা বাংলাদেশি এঞ্জেলের গল্প
মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা বাংলাদেশি এঞ্জেলের গল্প

মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা বাংলাদেশি এঞ্জেলের গল্প

0

একাধিক শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি করোনায় আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ এক মাস হাসপাতালে থেকে অবশেষে বাসায় ফিরেছেন টাইম টেলিভিশনের পরিচালক সৈয়দ ইলিয়াস খসরু।

সুস্থ, সবল ও সুঠাম দেহের অধিকারী সৈয়দ ইলিয়াস খসরু চলতি বছরের গত ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে ওমরাহ হজে যান। ফিরে আসেন ২৮ ফেব্রুয়ারি। তখনো নিউইয়র্কে করোনা আক্রান্ত রোগীর কোনো খবর ছিল না। সৌদি আরব থেকে ফিরে আসার ৪/৫ দিন পরই অসুস্থ বোধ করতে থাকেন। শরীরে ব্যথা, জ্বর ও কাশিতে কাবু হয়ে পড়লে ব্রকলীনের ব্রকডিল হাসপাতালে যান। সেখান থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরে এসে আবার অসুস্থবোধ করেন। পরবর্তীতে ম্যানহাটানের কর্নেল হাসপাতালে যান গত ৯ মার্চ।

 

তিনি জানান, কর্নেল হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তার প্রচণ্ড ক্ষুধা অনুভব হয়। একথা শুনে ছেলে নাদের স্যান্ডউইচ কিনে দেন। খাওয়ার পর কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি ঘুমিয়ে যান। এর পরের ঘটনা তার আর মনে নেই। আগে থেকেই ডায়বেটিক রোগী ইলিয়াস খসরু হাসপাতালে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই অচেতন হয়ে পড়েন। বাসায় ৭৫ বয়সী মা, স্ত্রী সাদিয়া, দুই ছেলে নাদের ও নাহিদ আর এক শিশু কন্যা নাবিদা। ইলিয়াস খসরু হাসপাতালে যাওয়ার পর তার মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি অন্য একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

হাসপাতালে তাকে এক মাসেরও বেশি সময় ভেন্টিলেশনে থাকতে হয়েছে। এত দিন ভেন্টিলেশনে থাকা এমন মাত্র দুজন রোগী করোনা জীবন যুদ্ধে জয়ী হয়েছেন বলে জানা গেছে।

চিকিৎসক জানিয়ে দিয়েছিলেন, ইলিয়াস খসরুর শরীরের সব ফাংশন বিকল হয়ে গেছে। শ্বাস-প্রশ্বাস ও পালস বন্ধ হয়ে পড়েছে। পরিবারের কাছে ভেন্টিলেশন খুলে ফেলার অনুমতি চেয়ে হাসপাতাল থেকে ফোন করাও হয়েছিল। কিন্তু পরিবার রাজি হয়নি। পরদিন হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, ইলিয়াস খসরু বেঁচে আছেন, তাকে নজরে রাখা হচ্ছে। তবে নতুন করে চিকিৎসার কিছু নেই। তার বেঁচে থাকাটা মিরাকল ছাড়া কিছু নয়। যিনি জীবন দিয়েছেন, তাঁর কাছে যেন প্রার্থনা করা হয়। অবশেষে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছেন সৈয়দ ইলিয়াস খসরু।

সৈয়দ ইলিয়াস খসরু জানান, হাসপাতালে যাওয়ার ১০ দিন পরে তার একবার চেতনা ফিরে আসে। এ সময় তার মনে হতে থাকে, হাত-পা যেন কেউ বেঁধে রেখেছে। একজন চিকিৎসক তার করোনা ভাইরাস সংক্রমণের বিষয়টি জানান। এ সম্পর্কে ইলিয়াস খসরুর তেমন কোনো ধারণা ছিল না। তাকে কথা বলতেও বারণ করা হয়। হাসপাতালে যাওয়ার আগে শুধু শুনেছিলেন, চীনে এমন একটা রোগে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এ খবর শুনে ইলিয়াস খসরু তার পরিবারের লোকজনের কথা জানতে চান। এ রোগে কেউ তার কাছে আসতে পারবে না বলে জানানো হয়। হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্সরাই তার সর্বোচ্চ সেবা করছেন। কয়েক দিনের ব্যবধানে আবার অচেতন হয়ে যান ইলিয়াস খসরু। এভাবে মাস চলে যায়। ছেলে সৈয়দ নাদের হাসপাতালে যোগাযোগ রাখেন। তাকে শুধু জানানো হয়, অবস্থার কোনো উন্নতি নেই। এক পর্যায়ে জানানো হয়, ইলিয়াস খসরুর কিডনিসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কাজ করছে না। দীর্ঘদিন ভেন্টিলেশনে থাকা মানুষের সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনাও খুবই ক্ষীণ। এতে নিউইয়র্কে বাংলাদেশি কমিউনিটি ও মিডিয়া পরিবারে ইলিয়াস খসরুকে নিয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বাড়তে থাকে। তার জন্য দেশে গ্রামের বাড়িতে লোকজন প্রার্থনা করতে থাকেন। এর মধ্যেই এক রাতে জানানো হয়, ইলিয়াস খসরুর শরীরের সব কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে গেছে। ভেন্টিলেশন খুলে ফেলার অনুমতি চার চিকিৎসকেরা। তবে ভেন্টিলেশন না খোলার অনুরোধ জানিয়ে বুকে পাথর বাঁধে খসরুর পরিবার। হাসপাতাল থেকেও এ নিয়ে আর কোনো জোর করা হয়নি। চিকিৎসকদের বিস্মিত করে কয়েক ঘণ্টা পরই ইলিয়াস খসরু একটু নড়ে চড়ে ওঠেন। এরপরের দিনগুলোতে তাঁর শরীরের অবস্থা কিছুটা ভালো হয়। পরে আবার অবনতি ঘটে। চিকিৎসকেরা আর কোনো আশার কথা শোনাতে পারেন না। মধ্য এপ্রিলের দিকে একবার চেতনা ফেরে তার। চিকিৎসকেরা আবার উৎসাহী হয়ে ওঠেন। বারবার এসে দেখতে থাকেন মৃত্যুঞ্জয়ী এই করোনা রোগীকে।

একমাস পর ইলিয়াস খসরুর সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের দেখা করার সুযোগ দেওয়া হয়। সে সময় কাউকে চিনতে পারেননি খসরু। জানালেন, সব স্বপ্ন মনে হচ্ছিল।

হাসপাতালের চিকিৎসক কিং ও মাইকসন মাথায় হাত দিয়ে ইলিয়াস খসরুকে জানান, তুমি মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছ। তুমি এঞ্জেল। এক মাসের বেশি সময় ভেন্টিলেশনে থেকে এর আগে এই হাসপাতাল থেকে আর একজন রোগী এভাবে ফিরে এসেছিলেন। তিনি কৃতজ্ঞতা জানালেন চিকিৎসকদের।

কিন্তু চিকিৎসকেরা বলেন, আমরা তোমার জন্য কিছুই আলাদা করে করিনি। এ জীবন যিনি সৃষ্টি করেছেন বলে তুমি বিশ্বাস করো, তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা জানাও। ইলিয়াস খসরু হাসপাতালেও বাংলাদেশি সৌজন্যতা ভুলে যাননি। তিনি চিকিৎসকদের কথা দিয়েছেন, সব ভালো হয়ে গেলে নিজে রান্না করে আমেরিকার এই চিকিৎসকদের তিনি দাওয়াত করে খাওয়াবেন। এই কথা শুনে দুই চিকিৎসক ও নার্স কেঁদেছিলেন। এ ছিল তাদের খুশির কান্না।

 

করোনা জয়ী সৈয়দ ইলিয়াস খসরুর ভাষায় ‘মৃত্যু কি তা দেখে এসেছি। আমি আমার সন্তানদের জন্যই নতুন জীবন ফিরে পেয়েছি। সেই সাথে দেশ ও প্রবাসের প্রিয়জন আর শুভাকাঙ্খীদের দোয়ায় আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন। জীবনের বাকী সময়টা আমি মানবতার সেবায় কাটিয়ে দিতে চাই।’

দীর্ঘ এক মাস ১৪ দিন হাসপাতালে থাকার পর গত ২২ এপ্রিল বুধবার ওজনপার্কের বাসায় ফিরেছেন সৈয়দ ইলিয়াস খসরু। চিকিৎসক সার্বক্ষণিক খোঁজ রাখছেন। একেবারে সুস্থ হতে বেশ সময় লাগবে বলে জানান।

তিনি বলেন, আমি এমন গুরুত্বপূর্ণ কোনো মানুষ নই। তারপরও আমার জন্য দেশে-বিদেশে মিডিয়ার লোকজন, কমিউনিটির লোকজন, এলাকার লোকজন যে ভালোবাসা দেখিয়েছেন, এ ঋণ কোনো দিন শোধ করার ক্ষমতা আমার নেই। ফিরে পাওয়া এ জীবনের জন্য আমি মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। বাকি জীবনটা যেন আমি মানুষের প্রয়োজনে কাজে লাগাতে পারি।

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *