fbpx
হোম জাতীয় মার্কিন সংস্থার জরিপ: গণতান্ত্রিক শাসনের পক্ষে দেশের ৯১% মানুষ
মার্কিন সংস্থার জরিপ: গণতান্ত্রিক শাসনের পক্ষে দেশের ৯১% মানুষ

মার্কিন সংস্থার জরিপ: গণতান্ত্রিক শাসনের পক্ষে দেশের ৯১% মানুষ

0

ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনের জরিপে দেশের বেশির ভাগ মানুষ গণতন্ত্র, মানবাধিকার, নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের পক্ষে মত দিয়েছেন। মহান বিজয় দিবসে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে জনতার ঢল
বাংলাদেশের মানুষ গণতান্ত্রিক শাসনের পক্ষে। জনগণ নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার চান। মানবাধিকারকে বিশ্বের কল্যাণের জন্য একটি বড় শক্তি হিসেবে মনে করেন এ দেশের বেশির ভাগ নাগরিক।
বাংলাদেশের মানুষের এই অবস্থান উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশন নামের একটি অলাভজনক সংস্থার জরিপে। ‘ওপেন সোসাইটি ব্যারোমিটার: ক্যান ডেমোক্রেসি ডেলিভার?’ শীর্ষক জরিপটি এ মাসে প্রকাশ করা হয়।
বাংলাদেশসহ ৩০টি দেশের ৩৬ হাজার ৩৪৪ জনের অংশগ্রহণে জরিপটি করা হয়েছে। প্রতিটি দেশে গড়ে ১ হাজার জন জরিপে অংশ নেন।
ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা মার্কিন ধনকুবের জর্জ সরোস, যিনি একজন দানশীল ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশন ন্যায়বিচার, গণতান্ত্রিক শাসন ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করে।
জরিপে প্রশ্নের উত্তরে ৯১ শতাংশ বাংলাদেশি বলেছেন গণতান্ত্রিকভাবে শাসিত একটি দেশে বাস করা তাঁদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো সরকারকাঠামোর চেয়ে গণতন্ত্রকে বাংলাদেশের ৫৯ শতাংশ মানুষ পছন্দ করেন। মানবাধিকার প্রশ্নে বাংলাদেশের ৮৮ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, বিশ্বের কল্যাণের জন্য মানবাধিকার একটি বড় শক্তি।
জরিপ প্রতিবেদনের মুখবন্ধে ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট মার্ক মালোক-ব্রাউন বলেছেন, গণতন্ত্রের ক্ষয় নিয়ে যেসব কথা বলা হচ্ছে, তা অতিরঞ্জিত। আসলে গণতন্ত্রের শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে। তিনি বলেন, গণতন্ত্র বড় যে হুমকিতে রয়েছে, তা কর্তৃত্ববাদের কারণে নয়, বরং রাজনৈতিক নেতারা জনগণকে কতটা দিতে পারছেন, সেটিই বড় বিষয়।
গণতন্ত্র বড় যে হুমকিতে রয়েছে, তা কর্তৃত্ববাদের কারণে নয়, বরং রাজনৈতিক নেতারা জনগণকে কতটা দিতে পারছেন, সেটিই বড় বিষয়।
মার্ক মালোক-ব্রাউন, প্রেসিডেন্ট, ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশন
কোন কোন দেশের ওপর জরিপ
জরিপটি করা হয়েছে আর্জেন্টিনা, বাংলাদেশ, ব্রাজিল, চীন, কলম্বিয়া, মিসর, ইথিওপিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, ঘানা, ভারত, ইতালি, জাপান, কেনিয়া, মালয়েশিয়া, মেক্সিকো, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, পোল্যান্ড, রাশিয়া, সৌদি আরব, সেনেগাল, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, তিউনিসিয়া, তুরস্ক, ইউক্রেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের ওপর।
জরিপে অংশগ্রহণকারীরা প্রাপ্তবয়স্ক। চলতি বছরের ১৮ মে থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। জরিপে গণতন্ত্র, নাগরিক অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, সমতা, ন্যায়বিচার, জনগণের চাওয়া, অর্থনীতি, ক্ষমতা ও রাজনীতি, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি নানা বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়।
গণতন্ত্র, রাজনৈতিক অধিকার ও মানবাধিকার
গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার প্রতি উচ্চ সমর্থন জানিয়েছেন জরিপে আসা প্রায় সব কটি দেশের মানুষ। যেমন চীনের ৯৫ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, গণতান্ত্রিক শাসনের মধ্যে বাস করা তাঁদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। রাশিয়ার ক্ষেত্রে হারটি ৬৫ শতাংশ এবং এটাই জরিপে আসা দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম।
বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারতের ৯৩, শ্রীলঙ্কার ৮৫, পাকিস্তানের ৭৯ এবং মালয়েশিয়ার ৮৭ শতাংশ মানুষ গণতান্ত্রিক শাসনের পক্ষে।
■ ৩০টি দেশকে নিয়ে জরিপটি করা হয়েছে।
■ বাংলাদেশ অনন্য। কারণ, এ দেশের মানুষ নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারকে প্রাধান্য দিয়েছেন।
জরিপে গণতন্ত্র, নাগরিক অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, সমতা, ন্যায়বিচার, জনগণের চাওয়া, অর্থনীতি, ক্ষমতা ও রাজনীতি, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি নানা বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়।
জরিপ প্রতিবেদনে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার বলতে বোঝানো হয়েছে ভোটাধিকার, ন্যায়বিচার, বাক্‌স্বাধীনতা সুরক্ষা এবং নির্যাতন ও বৈষম্য বন্ধ করাকে। প্রশ্ন করা হয়েছিল, কোন অধিকার আপনার কাছে বেশি জরুরি? জবাবে বাংলাদেশের ৩৬ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তাঁদের কাছে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ২৮ শতাংশের কাছে অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার, ১৭ শতাংশের কাছে পরিবেশগত অধিকার এবং ১৩ শতাংশের কাছে ডিজিটাল জগতের অধিকার বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
জরিপ প্রতিবেদনে আলাদাভাবে বলা হয়, দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ এ কারণে অনন্য যে এই দেশের বেশিসংখ্যক উত্তরদাতা অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকারের চেয়ে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারকে প্রাধান্য দিয়েছেন।
জরিপে উত্তরদাতাদের কাছে প্রশ্ন ছিল, উন্নয়নশীল দেশগুলোকে শাস্তি দেওয়ার জন্য পশ্চিমাদের দ্বারা মানবাধিকারকে ব্যবহার করা হয় কি না—এই প্রশ্নে একমত বাংলাদেশের ৭৬ শতাংশ উত্তরদাতা।
অবশ্য জরিপ প্রতিবেদনে এ–ও উঠে আসে যে যখন অধিকার ক্ষুণ্ন হয়, তখন মানুষ জবাবদিহি চায়। মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা, ব্যাংক হিসাব জব্দ করার মাধ্যমে জবাবদিহির আওতায় আনাকে বেশি সমর্থন করেছে এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলো। সমর্থনের হার সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে—৭৯ শতাংশ। এরপরে রয়েছে নাইজেরিয়া ৭৮, মিসর ৭৪, ইথিওপিয়া ও কেনিয়া ৭৩ এবং পাকিস্তান ৭২ শতাংশ।
৫৩ শতাংশ মানুষের মতে দেশ ভুল পথে যাচ্ছে: আইআরআইয়ের জরিপ
রাজনৈতিক সহিংসতার আশঙ্কায় মানুষ
আগামী বছর দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সহিংসতার আশঙ্কা করেন কি না, জরিপে উত্তরদাতাদের কাছে প্রশ্ন ছিল। জবাবে বাংলাদেশের ৭০ শতাংশ উত্তরদাতা সহিংসতার আশঙ্কা করেছেন। হারটি সবচেয়ে বেশি কেনিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকায়—৭৯ শতাংশ।
জরিপে ৩০টি দেশের অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে গড়ে ৫৩ শতাংশ মনে করেছেন, তাঁদের দেশ ভুল পথে এগোচ্ছে। মোট ছয়টি বিষয়ে এই প্রশ্ন করা হয়েছিল। দেশভেদে সমস্যা ভিন্ন, তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দারিদ্র্য ও বৈষম্য ছিল বড় সমস্যা। যেমন বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের ৫২ শতাংশ করে উত্তরদাতা খাদ্যনিরাপত্তার উদ্বেগ নিয়ে একমত।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব, চীনের উত্থান
জরিপে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব ও চীনের উত্থান নিয়ে উত্তরদাতাদের কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল। একটি প্রশ্ন ছিল, ২০৩০ সাল নাগাদ কোন দেশের বেশি প্রভাব থাকবে। উত্তরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের নাম ছিল। ‘জানি না’ বলে উত্তর দেওয়ারও সুযোগ ছিল।
উত্তরদাতাদের মধ্যে গড়ে ৩২ শতাংশ মনে করেছেন চীনের প্রভাব বেশি থাকবে। আর ২৬ শতাংশ মনে করেছেন যুক্তরাষ্ট্রই থাকবে প্রভাবশালী। বাংলাদেশের উত্তরদাতাদের মধ্যে ২৭ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্র প্রভাবশালী থাকবে বলে মনে করেন। চীন প্রভাবশালী হবে বলে মনে করেন ১৭ শতাংশ।
জরিপে আসা ৩০টি দেশের উত্তরদাতাদের মধ্যে ৪৫ শতাংশ মনে করেন, চীনের উত্থান তাঁদের দেশের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তবে ২৫ শতাংশ বলছেন, প্রভাব হবে নেতিবাচক। বাংলাদেশের ৬৩ শতাংশ মানুষ চীনের উত্থান ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন। নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন ১৪ শতাংশ।
অবশ্য জরিপে এ–ও উঠে এসেছে, উত্তরদাতাদের তিন-চতুর্থাংশের বেশি দেশের ঋণঝুঁকি নিয়ে উদ্বিগ্ন।
মানুষ ভাবছে, বাংলাদেশ ভুল পথে এগোচ্ছে
আইআরআইয়ের জরিপ থেকে স্পষ্ট হয়েছে নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে মানুষের হতাশা বেড়েছে
গণতন্ত্র না কর্তৃত্ববাদ, কার্যকর কোনটি
জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করা, জনগণের প্রত্যাশা পূরণ, যুদ্ধে জেতা, সড়ক ও সেতু তৈরি, হাসপাতাল তৈরি, স্কুল প্রতিষ্ঠা, পরিবেশ রক্ষা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়া, অপরাধ দমন এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থা গণতন্ত্রের চেয়ে দক্ষ—এই বিশ্বাসের সঙ্গে একমত কি না, জানতে চাওয়া হয়েছিল উত্তরদাতাদের। বেশির ভাগ উত্তরদাতা বলেছেন, তাঁরা একমত নন।
এমনকি যেসব দেশে কর্তৃত্ববাদের প্রতি সহানুভূতিশীল মানুষ বেশি, সেসব দেশের মানুষও কর্তৃত্ববাদের পারদর্শিতা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেছেন। সড়ক ও সেতু নির্মাণে কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থা দক্ষ—এই বিশ্বাসের সঙ্গে একমত নন ৭৯ শতাংশ উত্তরদাতা।

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *