মাটির নিচে আরেকটি মহাসমুদ্রের সন্ধান বিজ্ঞানীদের !
পৃথিবীর সবচেয়ে রহস্যময় স্থান হলো সমুদ্রের তলদেশ। মারিয়ানা ট্রেঞ্জের নাম সবারই কমবেশি জানা। এটি এতটাই গভীর যে এভারেস্টকেও যদি এর মধ্যে ডোবানো হয় তবুও তা মারিয়ানা ট্রেঞ্জের তলদেশ স্পর্শ করতে পারবে না। সমুদ্রের তলদেশে অবস্থিত এই খাদের গভীরতা ৩৬ দশমিক ২০১ ফুট। সমুদ্রের এত গভীরে কী আছে ? তা সত্যিই আমাদের অজানা। এ জগৎ বড়ই অদ্ভুত আর রহস্যময়।
তবে যদি বলা হয় আমাদের জানার বাইরে আরেকটা মহাসমুদ্র আছে ! সেটির অবস্থান ঠিক আমাদের পায়ের তলায় ! পৃথিবীর মহাসাগরগুলোতে যত পরিমাণ জল আছে ঠিক ততটাই পরিমাণ জল রয়েছে পৃথিবীর ভিতরে। ২০১৪ সালে বিজ্ঞানীরা প্রথম এই ধারণা পান।
পৃথিবীর স্তরগুলো সম্পর্কে কী আপনার জানা আছে? প্রথমে চলুন জানা যাক। পৃথিবীর যে গ্রহের অংশটুকুতে আমরা থাকি তা হলো পৃথিবীর ক্রাস্ট বা সর্বোচ্চ স্তর যা প্রায় ৩০ মাইল (৪৮ কিলোমিটার) পুরু। এর নিচে থাকে ম্যান্টল স্তর। যার নিজেরই তিনটি পৃথক উপ-স্তর রয়েছে।
ঊর্ধ্ব ম্যান্টল, ট্রানজিশন অঞ্চল এবং নিম্ন ম্যান্টল। একসঙ্গে, তারা প্রায় ১৮০০ মাইল (২,৯০০ কিলোমিটার পুরু এবং তারা গ্রহের আয়তনের প্রায় ৮৮ শতাংশ অধিকার করে আছে। ম্যান্টলের নিচে রয়েছে পৃথিবীর কেন্দ্র এবং এখানেই রয়েছে সেই গোপন মহাসমুদ্র।
ইলিনয়ের নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির গবেষক স্টিভেন জেকবসন এবং তার দল দীর্ঘদিন ধরে ভূ-মধ্যস্থ জল সম্বন্ধে গবেষণা করছেন। তারা মনে করেন, হতেই পারে এই ভূ-মধ্যস্থ জল পৃথিবীর উপরিভাগের মহাসমুদ্রগুলোর বাফার হিসেবে কাজ করছে। তাই সমুদ্রের জলের পরিমাণ কখনো কমে না।
তবে এই মহাসমুদ্রের কথা বিজ্ঞানীরা কীভাবে জানলো? আসলে এর সূত্র পাওয়া গিয়েছিল একটি বাদামি হীরা থেকে, যেটি ক্রাস্ট স্তর থেকে ৪০০ মাইল (৬৪৪ কিমি) গভীরে সৃষ্ট হয়েছিল।
অতীতে একসময়, আগ্নেয়গিরির লাভাস্রোত হীরাটিকে ভূ-পৃষ্ঠের দিকে ঠেলে দিয়েছিল। একটি দল ব্রাজিলের মতো গ্রোসোতে এই হীরাটিকে খুঁজে পেয়েছিলেন।
বিজ্ঞানীরা সেই হীরের মধ্যেই আর একটি খনিজ, রিংগোডাইট খুঁজে পান যার স্বাভাবিক প্রবণতা হল চারপাশের জল শোষণ করা। রিংগোডাইটের ভিতরে প্রায় ১.৫ শতাংশ জল পাওয়া যায়- যা গবেষণার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ। পাথরের সেই বিশেষ অংশটি থেকে জানা গিয়েছিল, যেখানে এই হীরাটির সৃষ্টি হয়েছে তার চারপাশে জল রয়েছে।
স্টিভেন জেকবসন আরও বলেন, এই বিপুল পরিমাণ জল পৃথিবীর উপরিভাগে না থেকে গভীরে রয়েছে যা আমাদের আশির্বাদস্বরূপ। যদি এই জল মহাসমুদ্রগুলোতে মিশে যেত তাহলে পুরো পৃথিবীর শুধু পর্বতশৃঙ্গগুলোই পানির উপরে থাকত। আর বাকি সব ডুবে যেত পানির তলায়।