ভাসানচর থেকে ফিরে এসে যা বললেন রোহিঙ্গা নেতারা…
কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ঘিঞ্জি শরণার্থী শিবির থেকে এক লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তর করতে চায় সরকার। সে কারণে অবকাঠামো নির্মাণসহ যাবতীয় আয়োজনও সম্পন্ন করা হয়েছে। এ অবস্থায় রোহিঙ্গা নেতাদের দাবি ছিল তারা চরটি সরেজমিনে পরিদর্শন করতে চান। সে অনুযায়ী তাদের সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়।
কিন্তু ভাসানচর ঘুরে আসা রোহিঙ্গা নেতা মো. জিয়া জানালেন, ভাসানচর খুব সুন্দর, সেখানে চাষাবাদ, মাছ চাষসহ জীবিকা নির্বাহের অনেক ধরনের সুযোগ সুবিধা আছে। আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে। কিন্তু সাগরের মাঝখানে হওয়ায় রোহিঙ্গারা যেতে চাইবে কিনা তা বলতে পারছি না।
রোহিঙ্গাদের জন্য ভাসানচর বসবাসের উপযোগী কিনা, তা দেখে গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে পৌঁছেন দুই নারীসহ ৪০ জন রোহিঙ্গা নেতা।
ভাসানচরে অবস্থানকালে সেখানকার অবকাঠামোসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নিয়ে প্রশংসা করেন রোহিঙ্গা নেতারা। কিন্তু ক্যাম্পে ফিরেই সুর বদলে গেছে তাদের। মো. জিয়ার মতো অনেকের ভাষ্য, ভাসানচর ভালো লেগেছে। দেখতে অনেক সুন্দর। কিন্তু সাগরের মাঝখানে দ্বীপে দীর্ঘদিন বসবাস করা যাবে কিনা বিষয়টি ভেবে দেখতে হবে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মধ্যস্থতায় গত ৫ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ থেকে দুই নারীসহ ৪০ জন রোহিঙ্গা প্রতিনিধিকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দুইদিন অবস্থানকালে খাদ্য গুদাম, থাকার ঘর, আশ্রয় সেন্টার, মসজিদ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্কুল, খেলার মাঠ ও কবরস্থান, মাছ চাষের পুকুরসহ রোহিঙ্গাদের দ্বীপটির অবকাঠামো এবং সুযোগ সুবিধা দেখানো হয়।
তবে ফেরার পর তাদের অনেকের কাছে মতামত জানতে চাওয়া হলে তারা এড়িয়ে যান, আবার অনেকে মোবাইল ফোন বন্ধ রাখেন। এদিকে রোহিঙ্গাদের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) উখিয়া শাখার সভাপতি নূর মোহাম্মদ সিকদার জানান, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে জামাই আদরে আছে। এ অবস্থায় এখান থেকে তারা কোথাও যেতে চাইবে না এটাই স্বাভাবিক। আমরা যতটুকু জেনেছি, বিদেশি সংস্থাগুলো রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে না যেতে উৎসাহিত করছে।
প্রসঙ্গত, রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে দুই হাজার ৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচরে আশ্রয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাস থেকে সেখানকার ৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা রক্ষা করতে ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ এবং এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে।