fbpx
হোম সংবাদ ২৪ ঘন্টা বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর বুদ্ধিদীপ্ত কথোপকথন
বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর বুদ্ধিদীপ্ত কথোপকথন

বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর বুদ্ধিদীপ্ত কথোপকথন

0

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিদের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে বৈঠক করেছেন । যা স্বাধীন বাংলাদেশের পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে । কারণ বঙ্গবন্ধুর এইসব বৈঠক ঐতিহাসিকভাবে অনেক গুরুত্ব বহন করে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে কথোপকথনের নির্বাচিত অংশ চেঞ্জ টিভির পাঠকদের কাছে তুলে ধরা হলো…

 

১. বঙ্গবন্ধুর খাঁটি বন্ধু তৎকালীন কিউবার প্রধানমন্ত্রী ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে একটি বিশেষ কথোপকথন আছে । যা পরবর্তী সময়ে বেশ গুরুত্ব পায় । আলোচনার এক সময় কাস্ত্রো বলেন,

দুনিয়ার কোথাও যুদ্ধে পরাজিত প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নতুন প্রশাসনে আর দায়িত্ব দেওয়া হয় না। বাংলাদেশে আপনার মহানুভবতায় ওরা প্রাণে রক্ষা পেয়েছে, এই-ই তো যথেষ্ট। যুদ্ধোত্তর দেশে তো এ ধরনের কর্মকর্তা পুনর্বাসনের প্রশ্নই উঠতে পারে না। দেখুন না সাম্রাজ্যবাদী যুক্তরাষ্ট্রেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের পরাজয় হলে উচ্চপদস্থ কর্মচারী, এমনকি রাষ্ট্রদূতদের পর্যন্ত বিদায় নিতে হয়।

মুজিব : আমার তো এখন একমাত্র চিন্তা বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে কিভাবে দ্রুত পুনর্গঠন করা যায়, সেটা।

কাস্ত্রো : তাহলে কিউবার দৃষ্টান্ত দিয়েই বলছি। মহান বিপ্লবের পর কমরেড চে গুয়েভারা স্বয়ং কিউবার পরাজিত প্রশাসনকে নিশ্চিহ্ন করে একেবারে নতুন করে ঢেলে সাজিয়ে দিয়েছেন। আজকের দিনে কিউবার মাটিতে অন্তত সাবেক বাতিস্তা সরকারের কোনো আমলার চিহ্ন মাত্র খুঁজে পাবেন না। এ জন্যই কিউবার ঠিক ঘাড়ের ওপরে মহাপরাক্রমশালী মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের অবস্থান হওয়া সত্ত্বেও আমার বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্রই সফল হচ্ছে না। এই যে দেখছেন, আমার কমরেড দেহরক্ষী। কেউই এঁদের কাউকে আমার বিরুদ্ধে দলে ভেড়াতে পারবে না। কিছুতেই এঁদের কিনতে পারবে না। ডিক্টেটর বাতিস্তার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের লড়াইয়ের সময় আমরা একই বাংকার থেকে যুদ্ধ করেছি। এ সময় খাদ্য, বিছানা—সব একসঙ্গে ভাগ করেছি। আপনি ধারণাও করতে পারবেন না এঁরা আমাকে কত ভালোবাসে। আমি চুরুট খাই। আমার ছেলেরা প্রথমে এটা টেস্ট করে। সিআইএর বিষক্রিয়ায় দুজন তো মরেই গেল। বাংলাদেশে আপনি কাদের বিশ্বাস করেছেন? কমরেড আলেন্দের মতো আপনিও নিশ্চিহ্ন হতে যাচ্ছেন কমরেড মুজিব। এবার বিদায়ের পালা। হাতের অর্ধদগ্ধ চুরুটটা অ্যাশট্রেতে রেখে ধীর পদক্ষেপে ফিদেল কাস্ত্রো এগিয়ে এলেন বঙ্গবন্ধুর কাছে। এরপর কাস্ত্রো-মুজিব উষ্ণ আলিঙ্গন আর পরস্পর চুম্বন। আলিঙ্গনের শেষ মুহূর্তে মুজিবের কাঁধে মাথা রেখে হঠাৎ ঘরের নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করে কাস্ত্রো বলে উঠলেন, কমরেড মুজিব, আমি তোমায় ভালোবাসি—তোমায় ভালোবাসি। বাংলাদেশকে ভালোবাসি।

 

২. জুলফিকার আলী ভুট্টো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন । তার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর কথোপকথনকালে উঠে আসে বঙ্গবন্ধুর দুরদর্শিতার চিত্র ।

ভূট্টো: ২৭শে মার্চ আপনি বলেছিলেন, আমাদের দুই-তিনটা জিনিস একত্রে থাকলেই চলবে, একা হতে না হতেই মুজিবকে আবার মনে করিয়ে দিলেন ভুট্টো, প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র আর মুদ্রা…

মুজিব: তার আগে আমাকে তোমার মুক্তি দিতে হবে ।

ভূট্টো: শিথিল কনফেডারেশনেও আমার আপত্তি নেই, (পীড়াপীড়ি করতে লাগলেন ভুট্টো, ন্যূনতম একটা কিছু অঙ্গীকার আদায়ের জন্য জোর করতে লাগলেন ভুট্টো) ।

মুজিব: না, না…আগেই তোমাকে বলেছি, আমরা অপেক্ষা করতে পারি…

ভূট্টো: আপনার কি মনে হয়, কে বেশি বদমাশ—ইয়াহিয়া, না পীরজাদা?

মুজিব: দুটিই।

আলোচনার এক ফাঁকে ভুট্টো বলেন, মুজিব ভাই, একসঙ্গে থাকার কোনো সুযোগ কি আছে ?

মুজিব: লোকজনের সঙ্গে দেখা করব, তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করব, তারপর তোমাকে জানাব ।

 

৩. তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী  ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছিলো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক । যা ছিলো অতুলনীয় । বঙ্গবন্ধু ইন্দিরা গান্ধীকে বলেন , আপনারা অকৃত্রিম বলেই বলছি, বৃহত্তর স্বার্থে বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার করলে আমরা কৃতজ্ঞ থাকবো । তখন ইন্দিরা গান্ধী বলেন, প্রাইম মিনিস্টার ১৭ মার্চ আপনার জন্ম তারিখেই সৈন্যরা বাংলাদেশ থেকে ভারতে ফিরে আসবে ।

 

৪. লিবিয়ার ক্ষমতাধর রাষ্ট্রপ্রধান কর্ণেল গাদ্দাফির সঙ্গেও গুরুত্বপূর্ণ কথোপকথন হয় বঙ্গবন্ধুর সাথে ।

গাদ্দাফি: আমি আপনার সঙ্গে আন্তরিকতাপূর্ণ বন্ধুত্ব করতে চাই। আমার প্রস্তাব হচ্ছে, আপনি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মুসলিম দেশগুলোর নেতৃত্ব গ্রহণ করুন। আমরা আপনাকে সমর্থন জোগাব। আমি মধ্যপ্রাচ্যের নেতৃত্ব গ্রহণে এগিয়ে আসতে পারি। এ জন্য প্রথমেই আমি অনুরোধ করব—আপনার দেশের নাম বদলে ‘বাংলাদেশ ইসলামী প্রজাতন্ত্র’ করুন।

মুজিব: আপনার প্রস্তাব অত্যন্ত উত্তম এবং সুচিন্তিত। কিন্তু এ মুহূর্তে এ ধরনের প্রস্তাব আমার পক্ষে কার্যকর করা সম্ভব নয় বলে আমি দুঃখিত। কারণ সমগ্র লিবিয়ায় যেখানে অমুসলিম জনসংখ্যা নেই বললেই চলে, সেখানে বাংলাদেশে অমুসলিমদের সংখ্যা প্রায় এক কোটির মতো। এক্সিলেন্সি, পরম করুণাময় আল্লাহ তাআলা তো শুধু আল মুসলেমিন নন—তিনি তো রাব্বুল আলামিন। তিনিই হচ্ছেন সব কিছুর স্রষ্টা—তিনি মহান।

 

৫. সৌদি আরবের তৎকালীন বাদশা ফয়সালের সঙ্গে প্রথম দেখায় বঙ্গবন্ধু কুশলাদি বিনিময় করেন ।

সাক্ষাতের শুরুতে বাদশা বলেন, এক্সিলেন্সি, আমি শুনেছি যে বাংলাদেশ আমাদের কাছ থেকে কিছু সাহায্য প্রত্যাশী। কিন্তু কথা হচ্ছে, আপনারা কোন ধরনের সাহায্য চান? দয়া করে বলুন, আপনারা কী চান? অবশ্য এসব সাহায্য দেওয়ার জন্য আমাদের কিছু পূর্বশর্ত রয়েছে।

মুজিব : এক্সিলেন্সি, বেয়াদবি নেবেন না। আমি হচ্ছি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু আমার তো মনে হয় না, মিসকিনের মতো বাংলাদেশ আপনাদের কাছে কোনো সাহায্য চেয়েছে?

ফয়সাল : তাহলে আপনারা কিংডম অব সৌদি অ্যারাবিয়ার কাছ থেকে কী চাচ্ছেন?

মুজিব : বাংলাদেশের পরহেজগার মুসলমানরা পবিত্র কাবা শরিফে নামাজ আদায়ের অধিকার চাচ্ছে। এক্সিলেন্সি, আপনিই বলুন, সেখানে তো কোনো শর্ত থাকতে পারে না। আপনি মহান, প্রতিটি বাঙালি মুসলমান আপনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আপনি হচ্ছেন পবিত্র কাবা শরিফের হেফাজতকারী। এখানে দুনিয়ার সমস্ত মুসলমানের নামাজ আদায়ের হক রয়েছে। সেখানে আবার শর্ত কেন? এক্সিলেন্সি, আমরা আপনাদের কাছ থেকে ভ্রাতৃসুলভ সমান ব্যবহার প্রত্যাশা করছি।

এছাড়াও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সঙ্গে আরও বিভিন্ন দেশের প্রধানদের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে । যার অনেকগুলো প্রকাশিত আবার অপ্রকাশিত। এখনো কথোপকথনের গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছু উন্মুক্ত করেনি বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *