বাস্তবেই এসেছিলেন গরিবের রবিনহুড, প্রাণ দিয়েছেন হাসি মুখে !
বিশ্ববিখ্যাত ১০ জন হ্যাকারের মধ্যে অন্যতম এবং সবচেয়ে আলোচিত এবং পরিচিত হ্যাকার ছিলেন হামজা বিন দাল্লাজ। আলজেরিয়ান এই মুসলিম যুবক বিশ্বের গরিব-অসহায়দের কাছে ‘আধুনিক যুগের রবিন হুড’ নামেই বেশি পরিচিত। পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ইন্টারপোল’ দীর্ঘ ৩ বছর বহু চেষ্টা-সাধনার পর তাকে থাইল্যান্ড থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছিল। এরপরই মার্কিন ফেডারেল আদালতে তাকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়া হয়।
হামজা বিশ্বব্যাপী ২১৭টি ব্যাংকের বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে প্রায় ৩১২ কোটি টাকারও বেশি টাকা পেয়ে যান এবং তা থেকে নির্যাতিত ও নিপীড়িত ফিলিস্তিনি, আফ্রিকা ও অন্যান্য গরিব রাষ্ট্রের দুস্থ ও অসহায়দের মাঝে ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা বিলি করেন। তিনি প্রতিনিয়ত ইসরাইলি বিভিন্ন ওয়েবসাইটে নিয়মিত আক্রমণ চালাতেন। গ্রেফতারের পর তার অসাধারণ মেধা দেখে ইসরাইল তাকে মুক্তির বিনিময় হিসেবে ইসরাইলের হয়ে কাজ করার প্রস্তাব দেয় এবং তার সহযোগিতা চায়। কিন্তু এই প্রখর মেধাসম্পন্ন যুবক তাদের সব প্রস্তাব ঘৃণাভরে এবং তাচ্ছিল্যের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করে।
হামজার ভাষ্যে- যে অর্থ আর ক্ষমতা মানুষের কোনো উপকারে আসে না সেই অর্থ আর ক্ষমতার কোন মূল্য নেই। তাই তিনি ইসরাইলের বিভিন্ন ব্যাংকের ওয়েবসাইট হ্যাক করতেন আর ব্যাংক থেকে হ্যাক করা টাকা বিভিন্ন গরিব রাষ্ট্রের জনগণদের মাঝে বিলিয়ে দিতেন। এজন্য অনেকেই তাকে নাম দিয়েছিল “মডার্ন রবিন হুড”। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো- যখন এই যুবক বিভিন্ন ধনী দেশের ধনী ব্যক্তিদের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হ্যাক করা শুরু করলেন তখন ভুক্তভোগীরা সবাই আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তা চান। কিন্তু এই হ্যাকারকে কোনভাবেই ট্র্যাকিং করা যাচ্ছিলো না। তাই ভুক্তভোগী অন্যান্য দেশের কর্তা-ব্যক্তিরা পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ইন্টারপোল’ এর সহায়তা চান। ইন্টারপোল দীর্ঘ ৩ বছর বহু সাধনা করে, বিভিন্নভাবে হামজাকে শনাক্তের চেষ্টা করে। অবশেষে ৩ বছর পর তাকে থাইল্যান্ডে আত্নগোপনে থাকা অবস্থায় গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। ক্রেডিট কার্ড কেনার সূত্র ধরে তাকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়। পরে থাই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে এই রহস্যময় যুবককে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়।কিন্তু বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড নিয়ে এই সদা হাস্যোজ্জ্বল যুবকের বিন্দুমাত্র দুশ্চিন্তা ছিলো না। ফাঁসি কার্যকরের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত সে হাস্যোজ্জ্বল ছিলো।
উল্লেখ্য, হামজা বিশ্বব্যাপী ২১৭ টি ব্যাংক একাউন্ট হ্যাক করে প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন ডলার করায়ত্ত করেন। তিনি ফ্রান্সের ৮০০০ অনলাইন অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে নথিপত্র সংগ্রহ করে তা দিয়ে বিভিন্ন ইউরোপীয় কন্স্যুলেটের অনলাইন হ্যাক করেন এবং তা থেকে সংগৃহীত ভিসা স্বদেশি বেকার যুবকদের মাঝে ফ্রি’তে বিলিয়ে দেন। তাছাড়াও তিনি ইসরাইলি বিভিন্ন সরকারি অনলাইন হ্যাক করে নিজ কব্জায় নিয়ে নেন এবং ফিলিস্তিনিদের কাছে ইসরাইলের অনেক গোপন দলিল ফাঁস করে দেন।