প্রতিবাদ করায় চাকুরী হারালেন ‘মেলাতে নিয়া যাও’ খ্যাত শিল্পী সফি
‘ও মোক মেলাতে নিয়া যাও‘ খ্যাত এপার-ওপার বাংলার জনপ্রিয় ভাওয়াইয়া সঙ্গীতশিল্পী সফিকুল ইসলাম সফিকে চাকুরীচ্যুত করেছে কুড়িগ্রাম ডিসি সুলতানা পারভীন।
সম্প্রতি কুড়িগ্রাম জেলায় সাংস্কৃতিক উন্নয়নের জন্য বরাদ্দকৃত বিভিন্ন সরঞ্জামাদি নিম্নমানের উল্লেখ করে প্রতিবাদ করার ঘটনায় শিল্পী সফিকুল ইসলামকে চাকুরীচ্যুত করেন কুড়িগ্রাম ডিসি । উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে কুড়িগ্রামের ওই ডিসি বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিকে বেআইনিভাবে সাজা দেওয়ার ঘটনায় সমালোচিত।
তিনি কুড়িগ্রাম কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজে শিক্ষকতা করতেন। দীর্ঘদিন সেই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এই শিল্পীকে চাকুরীচ্যুতির ঘটনায় অনেকে তীব্র নিন্দা এবং চাকুরী পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছেন। সফিকুল ইসলাম তার ফেসবুকে পুরো ঘটনাটি তুলে ধরে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় বিভিন্ন মহল থেকে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় উঠেছে। শিল্পীর ফেসবুক পোষ্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
“সম্মানিত সুধী,
আমি আপনাদের ভালোবাসায় ধন্য ভাওয়াইয়া গানের শিল্পী শফি। গরিব মানুষ, গান গেয়ে কোন রকমে জীবন চালাই। আমার বাবা একজন বীরমুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু তাঁর সার্টিফিকেট আমার জীবনে কোন কাজে লাগেনি, আমার গান শুনে সন্তুষ্ট হয়ে পূর্বের ডিসি হাবিবুর রহমান মহোদয় কুড়িগ্রাম কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজে খুব সামান্য বেতনের একটি চাকরি দেন। আমি শিক্ষকতার পাশাপাশি গান গেয়ে আমার পারিবারিক জীবন নির্বাহ করি। আপনাদের দেয়া সম্মান, ভালোবাসা, স্নেহ নিয়েই জীবন পার করছি আমি। গতবছর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে আমাকে একটি চিঠি দেয়া হয়েছিল, চিঠিতে লেখা ছিল, কুড়িগ্রাম জেলায় দশটি স্কুলে হারমোনিয়াম এবং তবলা বাবদ ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ, আমিসহ কুড়িগ্রামের আরও দু’জন এই টাকা খরচ কমিটির সদস্য ছিলাম। এই ডিসি ছিলেন তার সভাপতির দায়িত্বে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হারমোনিয়াম-তবলা কেনাকাটার সময় আমি কিছুই জানতাম না। হারমোনিয়াম এবং তবলাগুলো এতই নিম্নমানের ছিল যে বাজারের হকাররাও এর চেয়ে ভালো হারমোনিয়াম-তবলা ব্যবহার করেন। হারমোনিয়াম এবং তবলার এই মান দেখে আমার অনেক কষ্ট হয়, তাই সেদিন ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। সেই পোষ্টটি ডিসি সাহেব দেখার পর আমাকে ডেকে পাঠালেন, এবং নানান অকথ্য ভাষায় আমাকে গালাগালি করলেন। চাকরি হারানোর ভয়ে দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে গেলাম, দু’এক জায়গায় কষ্টটা শেয়ার করেছি। কিছু তেলবাজ এই খবর তার কানে আবারও দেয় এবং তারপর গত পরশু এই ডিসি আমাকে চাকরীচ্যুত করেন। আমি লজ্জায় কাউকে বলিনি আজ সময় বুঝে আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। সে সারাদিন কাজ করে নিয়ে আমাকে যে বেতন দেন সেটাও লজ্জায় বলতে পারছি না। তবুও আমার প্রয়োজনে কাজটি করেছিলাম। আপনাদের কাছে প্রশ্ন আমার দ্বারা কি কুড়িগ্রামের কোন কাজ হয়নি? আপনারা জানেন বেতার, টিভি, দেশ, বিদেশে কুড়িগ্রামের শুনাম করে বেরাই আমি।”
এদিকে চাকুরীচ্যুতির ঘটনায় আগামী ২০ মার্চ কুড়িগ্রাম শাপলা চত্বরে মাববন্ধন ও প্রতিবাদ সভার ডাক দিয়েছে শিল্পীর ভক্ত ও সঙ্গীতানুরাগী সাধারণ মানুষেরা ।
সফিকুল ইসলাম কুড়িগ্রাম জেলার ব্যান্ডিং গানের পাশাপাশি অসংখ্য গান লোকমুুখে পরিচিতি পাইয়ে দিয়েছেন। দেশ ও দেশের বাইরে আসামসহ বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক পরিচিতি অর্জন করেছেন এই ভাওয়াইয়া কণ্ঠশিল্পী। তিনি একাধারে গীতিকার, সুরকার, কণ্ঠশিল্পী ও সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি অর্জন করেছেন। তিনি বাংলাদেশ বেতার রংপুরে নিয়মিত গান করার পাশাপাশি বেসরকারি টিভি চ্যানেলেও গান করেন।