পাটগ্রাম হাসপাতালে পুষ্টি সপ্তাহ পালনের আড়ালে যা ঘটেছে…
নানা অসঙ্গতি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলা হাসপাতালের কর্মকর্তা কর্মচারীগণ। বাজেট বরাদ্দ খাত অনুযায়ী ব্যয় না হওয়ার কারণে জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় নেতাদের মাঝে চরম ক্ষোভ প্রকাশ পায়।
অভিযোগ রয়েছে একদিনে ১৫০ প্যাকেট কিনে ৯০ হাজার টাকার বিল ভাউচার করা হয়েছে। গঠিত কমিটি প্রতিটি প্যাকেট ৫৭৫ টাকা বরাদ্দ হিসাবে নির্ধারণ করলেও কেনার সময় গরীব মানুষকে দেয়া এসব প্যাকেটের প্রতিটিতে পুষ্টিকর খাবারের পরিবর্তে মানহীন ত্রান হিসেবে চাল ৫ কেজি, সোলা, আলু, সয়াবিন, চিনিসহ পাইকারী দরে ৪৬৫ টাকার মাল কিনেন অথচ ৫৭৫ টাকা বিল ভাউচার দেখানোর অভিযোগ উঠে। পুষ্টি সপ্তাহের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী মাস্ক ও হ্যান্ড ওয়াস কেনা বাবদ ৭ হাজার টাকা বরাদ্দ দিলেও তেমন দৃশ্যমান তেমন খরচ এ খাতে হয়নি। এছাড়াও মাইকিং প্রচার-প্রচারণা বাবদ ৩ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
পুষ্টি প্যাকেটগুলো থেকে ৩৬টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাস্টাররোল ঝাড়ুদারদের হাতে ২ টি করে ৭২ টি দেয়া হয়। বাকী ৭৮ টি প্যাকেট নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা ও পছন্দমত লোকজনকে দান করেন বলে জানা গেছে। পুষ্টি সপ্তাহের নির্দেশনায় দ্বিতীয় দিন আইএমসি আই কক্ষ বেলুন দিয়ে একটু ডেকোরেশন করলেও পুষ্টি কর্ণার, এ এন সি কর্ণার এবং তৃতীয় দিন বয়স্ক মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা প্রদানের স্থান সাজাতে বলা হলেও এমন কার্যক্রম কারও চোখে পড়েনি বলে জানানো হয়।
জানা গেছে, গত ২৪-২৯ এপ্রিল সারাদেশ ব্যাপী পুষ্টি সপ্তাহ পালন করা হয়। জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক নাসির উদ্দিন মাহমুদ স্বাক্ষরিত ১৩ এপ্রিল সারাদেশে ৬ কোটি ২৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেন। লালমনিরহাটের পাটগ্রামে ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা বরাদ্দের বিপরীতে যে সকল নির্দেশনা দেয়া হয় তা সঠিকভাবে না মেনে দায়সারা কর্মসূচী পালনে “পুষ্টি সপ্তাহ” প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
পাটগ্রাম হাসপাতালের ওই সময়ের স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ডা. শামসুল হক পুষ্টি সপ্তাহের কার্যক্রম সম্পর্কে জনপ্রতিনিধি ও নেতাদের আগে অবহিত করেননি বলে প্রশ্ন তোলা হয় সমাপনী অনুষ্টানে। এ সময় ক্ষোভে কেউ বক্তব্য রাখেননি। এরপর ডা. শামসুল হক সিরাজগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিসে ডেপুটি সিভিল সার্জন হিসেবে বদলি হন। তারই স্বাক্ষরে বিল তোলেন হাসপাতালের কোষাধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান সাজু।
একক আধিপত্য বিস্তার করায় তার উপরে কথা বলার সাহস রাখেন না কেউ এমন তথ্য জানান অনেকেই। বাজেট বিবরণীতে দেখা যায়, উদ্বোধনী ও সমাপনী দিনে আপ্যায়ন বাবদ ৮ হাজার টাকা, ডেকোরেশন বাবদ উদ্বোধনী দিনে ৩ হাজার ও দ্বিতীয়- তৃতীয় দিনে ১ হাজার করে ২ হাজার টাকা, উদ্বোধনী ব্যানার বাবদ ২ হাজার, সমাপনী ব্যানার বাবদ ১ হাজার টাকা। পুষ্টি সপ্তাহে ব্যাপক প্রচারণার লক্ষ্যে বিলবোর্ড বাবদ ব্যয় ধরা হয় ১০ হাজার টাকা। সবচেয়ে বেশি ব্যয় ধরা হয়, পুষ্টিকর খাবার বিতরণ বাবদ দ্বিতীয় দিন ২০ হাজার, তৃতীয় দিন ২০ হাজার, ৪র্থ দিন ১৫ হাজার, ৫ম দিন ১৫ হাজার, ৬ষ্ঠ দিন বাবদ ২০ হাজার টাকা।
এ বিষয়ে ডা. শামসুল হকের ফোনে একাধিকবার কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি। হাসপাতালের কোষাধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান সাজু বলেন, যা কিছু করা হয়েছে তা কমিটি’র নির্দেশনায় করা হয়েছে। তিনি দাবী করেন কোন অনিয়ম হয়নি।