fbpx
হোম অন্যান্য পবিত্র কাবা শরীফের কিছু অজানা ও বিস্ময়কর তথ্য
পবিত্র কাবা শরীফের কিছু অজানা ও বিস্ময়কর তথ্য

পবিত্র কাবা শরীফের কিছু অজানা ও বিস্ময়কর তথ্য

0

পবিত্র কাবা শরীফকে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের দেওয়া এক অনন্য নিদর্শন বলে মনে করে মুসলমানরা। ভৌগোলিকভাবে গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে বরকতময় পবিত্র কাবার অবস্থান- এটা অনেকের কাছেই আশ্চর্যজনক বিষয়। সৃষ্টির আদিকাল থেকেই পবিত্র কাবা শরীফকে আল্লাহ তার মনোনীত বান্দাদের মিলনমেলা হিসেবে কবুল করেছেন। চিরন্তন সত্য যে, পবিত্র কাবা শরীফের চারদিকে ঘোরা অর্থাৎ তাওয়াফ কখনো বন্ধ হয়নি। তবে নামাজের সময় যখন মুয়াজ্জিন জামাতের জন্য ইক্বামাত দেন; ঠিক সে সময় তাওয়াফকালীন অবস্থায় যে যেখানে থাকেন সেখানে দাঁড়িয়েই নামাজ আদায় করেন। নামাজের সালাম ফিরানোর সঙ্গে সঙ্গে আবার তাওয়াফ শুরু হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, যখন বন্যার কারণে পানিতে তাওয়াফ চত্ত্বর তলিয়ে গিয়েছিল তখনও মুসুল্লিরা সাঁতার কেটে পবিত্র কাবা শরীফ তাওয়াফ করেছেন। দুনিয়াজুড়ে মুসলমানদের এই কেবলা তথা কাবা শরীফ সম্পর্কে নানা বিষয় জানতে আমরা সব সময়ই আগ্রহী হই- তবে এর সবটা হয়তো জানা হয় না। আজ আমরা কাবা শরীফ সম্পর্কিত কিছু আশ্চর্যজনক তথ্য জানবো।

কাবা শরীফের সংস্কার: প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন বন্যার কারণে বেশ কয়েকবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পবিত্র কাবা শরীফ। তাই বেশ কয়েকবারই ক্ষতিগ্রস্ত কাবাকে পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে। ঐতিহাসিক সূত্র থেকে সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য তথ্য- কাবাকে এ পর্যন্ত ১২ বার পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে। বিভিন্ন বিপর্যয়ের হাত থেকে সংরক্ষণ করতে কাবা শরীফকে সর্বশেষ ১৯৯৬ সালে আধুনিক ও শক্তিশালী প্রযুক্তির প্রয়োগে সংস্কার করা হয়। পবিত্র কাবা শরীফ নির্মাণ-পুনঃনির্মাণে বিভিন্ন যুগে হজরত আদম (আ.), হজরত ইব্রাহিম (আ.), হজরত ইসমাইল (আ.) এবং আখেরি নবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) ও অংশগ্রহণ করেছিলেন।

কাবার গিলাফের রং পরিবর্তন: ‘কিসওয়া’ হলো কালো রংয়ের কাপড়। যা দ্বারা কাবা শরীফকে ঢেকে দেয়া হয়। কিন্তু অনেকেরই জানা নেই যে এ কিসওয়া বা গিলাফ সবসময় কালো ছিল না। প্রথমদিকে জরহাম গোত্রের শাসনামলে তাদের নিয়মানুযায়ী কিসওয়া দ্বারা কাবা শরীফের আচ্ছাদন সর্বপ্রথম শুরু হয়। পরবর্তীতে প্রিয়নবী (সা.) ইয়েমেনি সাদা কাপড় দিয়ে পবিত্র কাবাকে ঢেকে দেন। বিভিন্ন খলিফাদের আমলে লাল, সাদা, সবুজ রঙের কিসওয়াও ব্যবহার করা হতো। আব্বাসীয় খলিফাদের আমলে পবিত্র কাবার কিসওয়া হিসেবে বিভিন্ন রঙের ব্যবহার বন্ধ করে কালো রঙের কিসওয়া ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তখন থেকেই কিসওয়ার জন্য কালো রঙটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

আকৃতি পরিবর্তন: নবী ইব্রাহিমের (আ.) আমল থেকেই মূলত পবিত্র কাবা শরীফ আয়তক্ষেত্র আকৃতির ছিল। ইসলামের আগমনের আগে কুরাইশরা যখন পবিত্র কাবাকে পুনঃনির্মাণ করে তখন তহবিলের অভাবে পবিত্র কাবা শরীফের পুরো কাজ সম্পন্ন করতে পারেননি তারা। যে স্থানটি তখন নির্মাণ করতে পারেননি সেই স্থানটিকে বলা হয় ‘হাতিমে কাবা’। এটি কাবারই অংশ। এ কারণে হাতিমে কাবাকে তাওয়াফে অন্তর্ভুক্ত করতে হয়। যা একটি ছোট্ট গোলাকার প্রাচীর দ্বারা চিহ্নিত।

দরজা-জানালা: মূল কাবা শরীফে দুটি দরজা অন্তর্ভূক্ত ছিল। একটি দরজা ছিল প্রবেশের জন্য অন্যটি বাহির হওয়ার জন্য। এছাড়াও পবিত্র কাবা শরীফের দেওয়ালে একটি জানালাও ছিল। বর্তমানে পবিত্র কাবা শরীফে রয়েছে একটি মাত্র দরজা এবং কোনো জানালা নেই, যদিও কাবা শরীফের ছাদে ওঠার জন্য ভিতরে একটি দরজা রয়েছে।

ভেতরে যা আছে: পবিত্র কাবা শরীফের ভেতরে মজবুত তিনটি পিলার রয়েছে; যেগুলোর প্রত্যেকটি লিন্টারের সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে। পারফিউম ব্যবহারের জন্য পিলারের মধ্যে একটি ছোট বাক্স আকৃতির টেবিল রয়েছে। তিনটি খুঁটি বা স্তম্ভে ঝুলে আছে বিভিন্ন ডিজাইনের প্রদীপমালা। পবিত্র কোরআনের আয়াতের কারুকার্যখচিত সবুজ কাপড় কাবা শরীফের দেওয়ালের ওপরের অংশে জুড়ে রয়েছে। পাশের দেওয়ালে একটি স্বর্ণ নির্মিত দরজা রয়েছে যেটাকে ‘বাব আল তাওবা’ বলে ডাকা হয়। যেটি ছাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায় ব্যবহৃত হয়।

হাজরে আসওয়াদ: পবিত্র কাবা শরীফের এক কোণে সংযুক্ত ‘হাজরে আসওয়াদ’ কালো পাথরটি আগে আকারে বড় ছিল। বর্তমানে এ পাথরটি ভেঙে ৮ টুকরায় বিভিন্ন সাইজে বিভক্ত। যা একটি সিলভার রংয়ের ফ্রেমে একত্র করে কাবা শরীফের পূর্ব-দক্ষিণ কোণে লাগানো। পাথরটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ তথা বন্যাসহ অনেকবার চুরি ও জালিয়াতির চেষ্টার কারণে অনাকাঙ্খিতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। হাজরে আসওয়াদের প্রথম সিলভার ফ্রেমটি তৈরি করেছিলেন আবদুল্লাহ বিন জুবাইর।

চাবির জিম্মাদার: প্রাক ইসলামি যুগ থেকে এখন পর্যন্ত কাবা শরীফের চাবি একটি পরিবারের কাছেই রয়েছে। সম্মানিত এই পরিবারটি হলো বনু তালহা গোত্র। এ গোত্র গত ১৫শ শতাব্দী ধরে এ দায়িত্ব পালন করছে। এটি ওই পরিবারের জ্যৈষ্ঠ সদস্যরা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হন।

বার্ষিক পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম: বছরে দুই বার এর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করা হয়। প্রথমবার করা হয় শাবান মাসে আর দ্বিতীয় বার করা হয় জিলকদ মাসে। এ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম বনু তালহা তথা আলশিবি পরিবারের লোকেরাই করে থাকেন। পবিত্র জমজমের পানি, তায়েফ গোলাপ জল এবং বহু মূল্যবান ‘ঊড’ তৈল দিয়ে একটি পরিষ্কার মিশ্রণ তৈরি করে তা দিয়েই পবিত্র কাবা শরীফ পরিষ্কার করা হয়। পবিত্র নগরী মক্কার গভর্নর এ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে গণ্যমান্য ব্যক্তিদেরকে আমন্ত্রণ জানান।

দরজা সবার জন্য উন্মুক্ত: একটা সময়ে পবিত্র কাবা শরীফের দরজা সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এ পবিত্র ঘরে প্রবেশ করে ইবাদাত-বন্দেগিও করতেন। হজের সময় মুসুল্লিরা ইচ্ছা করলে এতে প্রবেশ করতে পারতেন। কিন্তু হাজিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এ ঘরের নিরাপত্তার জন্যই এখন কেউ ইচ্ছা করলেও ভেতর যেতে পারেন না। এটা এখন মাঝে মাঝে বিশেষ মেহমানদের জন্য খোলা হয়।

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *