নকল নায়ক থেকে আসল নায়ক হলেন হিরো আলম…
হিরো আলম রাজনীতিতে স্পেস চান এবং জনপ্রতিনিধিত্ব করার আগ্রহে অটূট তিনি। তার সম্পর্কে কৌতুহল কমেনি মানুষের। যাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, গণমাধ্যম সর্বত্র হইচই, আলোচনা, সমালোচনা। হিরো আলম খ্যাতি পাওয়া এই ব্যক্তির পুরো নাম আশরাফুল আলম সাঈদ। বগুড়ার এক দরিদ্র পরিবারের সন্তান। সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করার পর সিডি ও ডিশ ব্যবসার এক পর্যায়ে মিউজিক ভিডিও বানিয়ে স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছেন হিরো আলম। আর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’ হয়েই ক্ষান্ত হননি, এখনো নিজের গ্লামার ছড়াচ্ছেন তিনি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে জাতীয় চরিত্রে রূপ নিয়েছেন এই বিত্তহীন মানুষ। কেবল কৌতুহলে সীমাবদ্ধ না থেকে তাকে নিয়ে কিছু মিডিয়া ও গুরুত্বপূর্ন ব্যক্তিবর্গ তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য কম করেননি। সেটা কি কেবল তার স্বল্প শিক্ষাগত যোগ্যতা, আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলার কারণে নাকি নিজস্ব কোন রাজনৈতিক প্লাটফর্ম না থাকার কারণে? পদে পদে হেনস্থা করা হয়েছে তাকে। হিরো আলম তাঁর প্রার্থীতার বৈধতা পান সর্বোচ্চ আদালত থেকে। আবার ইসি সচিব হেলালুদ্দীন তাকে তুই সম্বোধন করলে তারও প্রতিবাদ করেন তিনি।
দেশে স্বশিক্ষায় শিক্ষিত সংসদ সদস্য প্রার্থীর অভাব কখনোই ছিলোনা। হলফনামায় স্বশিক্ষায় শিক্ষিত লেখা সাংসদ বিভিন্ন মেয়াদে আওয়ামী লীগে যেমন ছিলো তেমনি বিএনপিতেও। সুতরাং হিরো আলমের শিক্ষাগত যোগ্যতা এককভাবে বিদ্রুপের কারণ নয় বলে মনে করি আমরা।
তাহলে হিরো আলমের দিকে নেতিবাচক মনোভব যারা দেখিয়েছেন, সেটা কি কারণে?
বিশ শতক অবধি বাংলা নাটক ও সিনেমায় আঞ্চলিক ভাষা হিসেবে ময়মনসিংহ, নোয়াখালী এবং কখনো কখনো বরিশালের দু-একটি ভাষা ব্যবহার করা হত। কিন্তু একুশ শতকে এসে কিছু নাট্য রচয়িতা, প্রযোজক ও কলাকুশলী বৃহত্তর পাবনা অঞ্চলের ভাষাকে জনপ্রিয় নাট্যভাষ্যে রূপান্তর করেন। যেসব নাটক জনপ্রিয় হয় দেশের সব নাটকপ্রিয় মানুষের মাঝে। বাস্তবেই আঞ্চলিক ভাষার একটি আবেদন মানুষের হৃদয়ে আছে। মানুষ সেটাকে উপক্ষো না করে সাদরে গ্রহণ করেন। হিরো আলমের ক্ষেত্রেও ভিন্নতা নাই। তার ভাষায় বগুড়ার আঞ্চলিকতা একটা এক্সট্রা মাত্রা যোগ করেছে দেশবাসীর নিকট।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির বিন মোহাম্মাদ ছোটবেলায় স্কুলে গিয়ে অর্থের জন্য খেলনা বেলুন বিক্রি করতেন সেটা আমাদেরকে আকৃষ্ট করে। তবে হিরো আলমের সিডি ব্যবসা বা ডিশ লাইনের ব্যবসা কি গ্রহণযোগ্য নয়? অনেক প্রার্থী তো কাগজে-কলমে সততা দেখালেও বাস্তবে দূর্নীতির প্রশ্নের উর্ধ্বে নয়! তাহলে হিরো আলম তার স্বচ্ছতার মানদন্ডে আরো অনেক প্রার্থীর চেয়ে আলাদা নয় কি?
হিরো আলম ইতমধ্যেই মানুষের হৃদয়ে স্থান করেছেন। যে কারণে কোন মিডিয়াই তার নিউজ এরিয়ে যেতে পারে নাই। হিরো আলমের শিক্ষা-দীক্ষা সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত হলেও তার রাজনৈতিক ভাষ্য ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞা সাধুবাদ পাবার যোগ্য।
চেঞ্জ টিভিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তার সুদূর প্রসারী স্বপ্ন আছে রাজনীতি নিয়ে। নির্বাচনের দিন তাকে যে লাঞ্ছিত করা হয়েছে সে প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, আইনগত পদক্ষেপ তিনি নিতে পারেন এবং থানায় নালিশ দিয়েছেন বলেও জানান তিনি। ভবিষ্যতে বিএনপি, আওয়ামী লীগ বা অন্য কোন দলে যোগ দিবেন কিনা সে প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বলেন, এখনো সে সিদ্ধান্ত নেননি এবং কোন দলে যোগ দেয়ার ইচ্ছা নেই।তবে রাজনীতিতে তিনি স্থান করে নিতে চান। ভবিষ্যতে নতুন কোন রাজনৈতিক দলও তিনি গঠন করতে পারেন।
আগামীতে অনুষ্ঠিতব্য স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রণের প্রশ্নে তিনি বলেন, সংসদ নির্চনের পরে কোন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহনের ইচ্ছা তার নেই। তার স্বপ্ন মন্ত্রী হবার। নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সবাই দেখেছে, ভোট কেমন হয়েছে। আমি সাহস ও সততার সাথে কথা বলি। নির্বাচনের দিন আমার নেতৃত্ব ধরে রাখার জন্য আমি মাঠে নেমেছি। আমি ব্যর্থতা দেখাতে চাইনি।”
আমরা মনে করি, কেবল প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তির জোরে তিনি গিয়েছিলেন সুবর্ণচরে ধর্ষিতাকে দেখতে। তার এই চরিত্র আরো একধাপ এগিয়ে নিয়েছে জনমানুষের মাঝে। হিরো আলম পোষাকে রাজনীতিবিদ না হলেও তার সৎ সাহস অদম্য। বর্তমানে মিডিয়ার কাজ নিয়ে ব্যস্ত তিনি। সামনে তিনটি মুভি আসছে তার হাত ধরে। আগামী মাস থেকে শ্যূটিং শুরু হবে ‘চরিত্র’ নামক মুভির। হিরো আলম রোমান্টিক গান পছন্দ করেন। গরীব অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে চান তিনি। সমাজ বিবর্তনের ধারায় স্থান করে নিয়েছেন গণামধ্যমে। আরো অনেক হিরা লুকিয়ে আছে পাড়া মহল্লায়। তাদের স্বপ্ন ও অব্যক্ত কথা বলার মাধ্যম নাই। হিরো আলম মোটেও মনে করেন না তিনি ব্যঙ্গ উপহাসের পাত্র। অভীষ্ট লক্ষে দৃঢ়চেতা তিনি। হিরো আলম সত্যিই সাহস ও প্রেরণা যুগিয়েছেন সমাজের নানা স্তরের মানুষকে। অন্য নায়করা যখন সামাজিক কাজে কোন অংশ নিচ্ছেনা তেমনভাবে এবং বিএনপির নেতারা যখন ঢাকায় বসে আছেন তখন হিরো আলম ছুটে গেছেন নোয়াখালীতে সুবর্ণচরে। এভাবেই তিনি নকল হিরো থেকে আসল হিরো হয়ে ওঠছেন।