ধর্মীয় অনুশাসন মানতে অভিনয় ছাড়েন শাহীন আলম
রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে সোমবার (৮ মার্চ) রাত ১০টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এক সময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক শাহীন আলম। ঢাকাই সিনেমার এক সময়ের ব্যস্ত এই অভিনেতা দীর্ঘদিন ধরে কিডনি ও ডায়াবেটিস রোগে ভুগছিলেন।
সদ্য প্রয়াত এই অভিনেতা ইসলাম ধর্মের অনুশাসন পুরোপুরি পালন করতেই হঠাৎ সিনেমায় অভিনয়কে বিদায় জানিয়েছিলেন। মৃত্যুর কয়েকমাস আগে একটি ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছিলেন তিনি।
ইউটিউব চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শাহীন আলম বলেন, আমি মুসলমান। পরকালে বিশ্বাসী। আমাকে একদিন না একদিন ওই সর্বশক্তিমানের কাছে ফিরতেই হবে। তখন কী জবাব দেব ? একটা মানুষ কত দিন বাঁচে ? ধরুন খুব বেশি হলে ১০০ বছর বাঁচব। এরপর তো আল্লাহর কাছে গিয়ে জবাবদিহি করতে হবে। তাই আমি বলব, আগে পরকালের হিসাবের খাতাটা ঠিক রাখতে হবে। এসব বিবেচনা করেই সিনেমা থেকে সরে এসেছি। আস্তে আস্তে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি।
সিনেমাজগত থেকে সরে আসার আরও তিনটি কারণ জানিয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন, ঢাকাই ছবিতে যখন অশ্লীলতা মহামারি আকার ধারণ করে আর সিনেমাজগতটা নির্মাতার হাতছাড়া হয়ে প্রযোজকদের হাতে চলে যায়। তখন আর অভিনয় চালিয়ে যেতে পারছিলাম না। আমাকে অশ্লীল দৃশ্যে অভিনয়ের জন্য চাপ দেওয়া হতো। আমি রাজি না হলে পরে দেখতাম কাটপিস জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আমার বড়ভাই হজ পালন করে এসে আমাকে অনুরোধ করেন, সিনেমাজগত ছেড়ে দিতে। আমিও পরে উপলব্ধি করি আর কতো। সিনেমা থেকে নিজেকে গুটিয়ে পারিবারিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানটি দেখাশোনা শুরু করি।
শাহীন আলমের রূপালি পর্দাকে না বলার পেছনে আরও একটি বড় ঘটনা আছে। তা হলো তার মেয়ের আত্মহত্যার ঘটনা। এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফল না করলে শাহীন আলমের একমাত্র মেয়ে আত্মহত্যা করে। ওই ঘটনার পর পরই বদলে যেতে থাকেন তিনি। নামাজ আদায়ে মনোযোগী হন। আমূল পরিবর্তন ঘটে তার।
বিএফডিসির নতুন মুখের সন্ধানের মাধ্যমে সিনেমায় পা রাখেন শাহীন আলম। তার উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে-ঘাটের মাঝি, এক পলকে, গরিবের সংসার, তেজী, চাঁদাবাজ, প্রেম প্রতিশোধ, টাইগার, রাগ-অনুরাগ, দাগী সন্তান, বাঘা-বাঘিনী, আলিফ লায়লা, স্বপ্নের নায়ক, আঞ্জুমান, অজানা শত্রু, দেশদ্রোহী, প্রেম দিওয়ানা, আমার মা, পাগলা বাবুল, শক্তির লড়াই, দলপতি, পাপী সন্তান, ঢাকাইয়া মাস্তান, বিগ বস, বাবা, বাঘের বাচ্চা, বিদ্রোহী সালাউদ্দিন প্রভৃতি।