fbpx
হোম অন্যান্য তাইওয়ানের মুসলমানরা সমাজব্যবস্থায় এগিয়ে যেভাবে…
তাইওয়ানের মুসলমানরা সমাজব্যবস্থায় এগিয়ে যেভাবে…

তাইওয়ানের মুসলমানরা সমাজব্যবস্থায় এগিয়ে যেভাবে…

0

তাইওয়ান মনে করে তারা চীন থেকে আলাদা। দেশটির জনগণের একটি অংশ স্বাধীনতা ঘোষণার পক্ষে। তাইওয়ান-চীন দ্বন্দ্ব বেশ পুরোনো হলেও এটা সত্য যে, তাইওয়ান চীনের শাসনের অধীন ছিল।

তাইওয়ান মাত্র ১৩ হাজার ৮২৬ বর্গমাইলের একটা দ্বীপ। চীন মনে করে তাইওয়ান তাদের ভৌগলিক সংহতির ক্ষেত্রে অবিচ্ছেদ্য অংশ। যেমন হংকংয়ের যেকোনো বিষয়কে চীন তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার বলে মনে করে।

অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ দেশ তাইওয়ানের রাজধানী তাইপে। রাষ্ট্রীয় ভাষা মান্দারিন। তবে তাইওয়ানি ও হাক্কা ভাষা বেশ প্রচলিত। তাইওয়ানে সরকার স্বীকৃত ১৩টি ধর্ম রয়েছে। এর অন্যতম হলো- বৌদ্ধ, তাঈ, ক্যাথলিক, প্রোটেস্ট্যন্ট, ইসলাম, লি-ইজম, বাহাই ও থেনকিকি। অর্ধেক জনগোষ্ঠী বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী।

তাইওয়ানে মসজিদের সংখ্যা ৬টি। তবে বেশ কিছু নামাজ ঘর রয়েছে। তাঈপে গ্র্যান্ড মসজিদ হচ্ছে সবচেয়ে বড় মসজিদ। রাজধানী তাইপের দান জেলায় অবস্থিত এ মসজিদের আয়তন ২ হাজার ৭৪৭ বর্গমিটার। তাইপের নগর প্রশাসন ১৯৯৯ সালের ২৬ জুন এটিকে ঐতিহাসিক মসজিদ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে।

১৯৮০ সালের দিকে মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড থেকে উন্নত জীবনের প্রত্যাশায় বিপুলসংখ্যক মুসলমান তাইওয়ানে পাড়ি জমায়। তাইওয়ানের বসবাসকারী স্থায়ী মুসলমানদের অর্ধেক নতুন ধর্মান্তরিত। ইসলাম গ্রহণকারীদের মধ্যে নারীদের সংখ্যা বেশি। তারা ইসলাম কবুল করে মুসলমানদের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। এভাবে মুসলমানদের সংখ্যা বাড়ছে।

রাবেতা আল আলম ইসলামিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইসলামি সংস্থার সঙ্গে তাইওয়ানের মুসলমানদের যোগাযোগ রয়েছে। প্রতি বছর ৩০-৩৫ জন মুসলমান হজ পালনের জন্য সৌদি আরব গমন করেন।

তাইপে গ্র্যান্ড মসজিদ তাইওয়ানের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থাপনা। আরবি ও পারস্য স্থাপত্যশৈলীর সংমিশ্রণে তৈরি এ মসজিদে ১ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদ কম্পাউন্ডে রয়েছে ৪০০ আসনের মিলনায়তন, যেখানে সেমিনার, ওয়াজ মাহফিল ও সিরাত কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয় নিয়মিত। নামাজ ও ইবাদতের পাশাপাশি তাইওয়ানের প্রতিটি মসজিদে বিশেষত সাপ্তাহিক বন্ধ ও সাধারণ ছুটির দিনে কোরআন ও ধর্মীয় তালিম চলে।

তাইপে গ্র্যান্ড মসজিদ তাইওয়ানের বৃহত্তম এবং সর্বাধিক বিখ্যাত মসজিদ। ঐতিহাসিক এই মসজিদটি ১৯৪৭ সালে নির্মিত হয়েছে এবং ১৯৬০ সালে সংস্কার করা হয়েছে। মসজিদটি মুসলমানদের সঙ্গে সরকারের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের প্রতীক। এই মসজিদের অস্তিত্ব তাইওয়ান এবং অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপন করেছে এবং তাদের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক প্রসারিত করেছে। এই মসজিদের পরে তাইওয়ানে কাহোইসুং মসজিদ, তাইপে সংস্কৃতি মসজিদ এবং তাইচুং মসজিদের মতো অন্যান্য মসজিদগুলো নির্মিত হয়।

তাইপে মসজিদটি প্রথমে একতলা ছিল, পরবর্তীতে মুসল্লিদের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে দ্বিতীয় তলা নির্মাণ করা হয় এবং দ্বিতীয় তলাটি নারী মুসল্লিদের জন্য বরাদ্দ করা হয়। ঐতিহাসিক এই মসজিদের অধীনে একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার রয়েছে।

তাঈপে গ্র্যান্ড মসজিদের ভেতরের দৃশ্য, ছবি: সংগৃহীত


১৯৬০ সালে স্থানীয় মুসলমান ও বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্রের আর্থিক সহয়তায় নির্মিত তাইপে গ্র্যান্ড মসজিদ কাম ইসলামিক সেন্টার মুসলমানদের ধর্মীয় ও সামাজিক মিলনকেন্দ্র হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। মসজিদে কিশোর শিক্ষার্থীদের ইসলামের মৌলিক বিষয়াবলীর ওপর পাঠদান করা হয়। তাইওয়ানে মুসলমানদের মসজিদকেন্দ্রিক এক নিজস্ব সমাজ ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠেছে। এই সমাজ ব্যবস্থাপনার বৈশিষ্ট্য হলো, সমাজের মুরব্বি শ্রেণিদের নেতৃত্ব। তাইওয়ানের মসজিদভিত্তিক বয়োজ্যেষ্ঠদের নিয়ে গঠিত কমিটি সর্বদা সতর্ক থাকে। তারা মুসলিমদের আত্মোন্নয়ন এবং নিজেদের মধ্যকার বিরোধ নিষ্পত্তি প্রয়োজনে অপরাধীদের শাস্তি দিয়ে থাকে- যাতে মুসলিম সমাজ কলুষিত না হয়। মুসলিম তরুণ-তরুণীরা শূকরের ও মাদকের প্রতি আসক্ত না হয়- সেজন্য কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থাও করা হয়।

দুই বছর আগে তাইওয়ানের পর্যটন বিষয়ক কার্যালয় মুসলিম পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে ৫০টি হালাল রেস্টুরেন্ট চালু করেছে। এছাড়া প্রায় হোটেলেই হালাল খাবার আর নামাজ পড়ার জায়গা রাখা হচ্ছে। দেশটিতে চীনের পর্যটক কমতে থাকায় বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মুসলিম পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য এ ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে তাইওয়ানের পর্যটন খাতসংশ্লিষ্টরা।

এদিকে ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে তাইওয়ানের কিনম্যান কাউন্টি আইল্যান্ডে অবস্থিত ন্যাশনাল কিউমোয় ইউনিভার্সিটিতে (এনকিউইউ) মুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য একটি কক্ষে নামাজের ব্যবস্থা করায়। মুসলিম শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আকৃষ্ট করতেই এমন উদ্যোগ। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া ইন্দোনেশিয়ার কিছু শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে নামাজ আদায়ের জন্য জায়গা নির্দিষ্ট করে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছিল।

সাম্প্রতিক সময়ে মুসলিম শিক্ষার্থীদের আগ্রহ তৈরি করতে তাইওয়ানের অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও পৃথকভাবে নামাজের সুব্যবস্থা করা হচ্ছে। নানা বিষয়ে মতবিরোধ থাকলেও দেশের উন্নতি, সম্প্রীতি রক্ষা আর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে এগিয়ে নিতে একযোগে কাজ করছে দেশের নাগরিকরা।

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *