fbpx
হোম অনুসন্ধান অপরাধবার্তা ঢাকার বুকে আতঙ্কের নাম জাপানি হান্নান !
ঢাকার বুকে আতঙ্কের নাম জাপানি হান্নান !

ঢাকার বুকে আতঙ্কের নাম জাপানি হান্নান !

0

আবদুর রশিদ (৩৫) নামে এক রড-সিমেন্ট ব্যবসায়ীকে রাজধানীর দক্ষিণখানের আইনুশবাগ চাঁদনগর এলাকায় পুলিশের সামনে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত হিসেবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল ইসলাম হান্নান ওরফে জাপানি হান্নানসহ আটজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি অস্ত্রও জব্দ  করা হয়েছে। গ্রেফতার হওয়া অন্য সাতজন হলেন- একরামুল ইসলাম জয়, মোশারেফ হোসেন, নূরুল আমিন, খোরশেদ আলম, জহুরুল ইসলাম রিপন, শফিকুল ইসলাম ইমরান ও আলামিন প্রধান।

স্থানীয় একাধিক সূত্র গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, জাপানি হান্নান আইনুশবাগ এলাকার মূর্তিমান আতঙ্ক। তিনি নিজেকে বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক হিসাবে পরিচয় দেন। বিভিন্ন নেতার সঙ্গে ছবি তুলে তা এলাকায় টানান। তিনি কথায় কথায় অস্ত্র উঁচিয়ে ভয়ভীতি দেখান। এলাকার বাড়ি নির্মাণে চাঁদা দিতে হয় তাকে। এছাড়াও আরও নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

ডিএমপির উত্তরা বিভাগের এডিসি এ এস এম হাফিজুর রহমান বলেন, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ব্যবসায়ী রশিদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল এ ঘটনার পর আইনুশবাগের ‘জাপানি কটেজ’ ভবনে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত জাপানি হান্নানসহ আটজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একই সঙ্গে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত দুটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। বালু নিয়ে বিরোধের জেরে রশিদকে গুলি করে হত্যা করেন হান্নান। পুলিশের সামনেই আবদুুর রশিদকে জাপানি হান্নান গুলি করে হত্যা করেন বলে অভিযোগ করেন বিমানবন্দর থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সোহেল রেজা।

গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর দক্ষিণখান আইনুশবাগ এলাকায় জাপানি হান্নানের বাসার সামনে এ হত্যার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর উত্তেজিত জনতা জাপানি হান্নানের বাড়িতে ভাঙচুরসহ একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এদিকে ব্যবসায়ী আবদুর রশিদকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লাইভে আসেন অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল ইসলাম হান্নান ওরফে জাপানি হান্নান। তিনি বেলা ১১টা ৩৯ মিনিটে নিজের আইডি থেকে লাইভে আসেন। তবে লাইভে তিনি সরাসরি যুক্ত ছিলেন না। তার পক্ষে তার মেয়ে লাইভটি করেন। তবে পেছন থেকে মেয়েকে নির্দেশনা দিতে দেখা গেছে জাপানি হান্নানকে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণখানের আশকোনায় ময়লার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ নেতা জাপানি হান্নান ও সোহেল রেজা গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় জাপানি হান্নানের শটগানের গুলিতে আবদুুর রশিদের মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে রশিদের পক্ষের লোকজন জাপানি হান্নানের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। এ সময় উত্তেজিত জনতা একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। আগুনে পুড়ে যাওয়া গাড়িটি জাপানি হান্নানের বলে তার মেয়েকে ওই লাইভ ভিডিওতে বলতে শোনা গেছে। আগুন নেভাতে ও হামলাকারীদের নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের সহায়তা চাইতে দেখা গেছে ভিডিওতে।

লাইভে জাপানি হান্নান তার মেয়েকে বলছেন, আমাদের বাড়িতে হামলা হয়েছে। গাড়িতে আগুন দিয়েছে। বাড়িতে আগুন লাগানোর চেষ্টা চলছে। এরপর বাবার নির্দেশনা অনুযায়ী পরিস্থিতির বর্ণনা করেন তার মেয়ে। যে শটগান দিয়ে ব্যবসায়ী আবদুর রশিদকে গুলি করা হয়েছে লাইভের সময় সেটি বাসার ডাইনিং টেবিলের ওপর রাখা ছিল। ১০ মিনিট ২ সেকেন্ডের লাইভে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের দৃশ্যও দেখান। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত সোমবার ও মঙ্গলবার রাতে জাপানি হান্নানের বাড়ির সামনে সীমানার কাজের জন্য বালু রাখেন আবদুর রশিদ। গতকাল সকালে রশিদের স্বজনরা বালু কম দেখতে পান। খোঁজ নিয়ে তারা জানতে পারেন, রাতের আঁধারে জাপানি হান্নান ও তার লোকজন বালু নিয়ে গেছে। জিজ্ঞাসা করতে গেলে রশিদের চাচাতো ভাইদের মারধর করা হয়। খবর পেয়ে রশিদ ঘটনাস্থলে এসে জাপানি হান্নানকে বালুর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তাদের মধ্যে তর্কবিতর্ক শুরু হয়। কথা-কাটাকাটি ও হাতাহাতির একপর্যায়ে হান্নান গুলি করে রশিদকে হত্যা করেন।

দক্ষিণখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিকদার মোহাম্মদ শামীম বলেন, জাপানি হান্নান ও আবদুর রশিদের মধ্যে আগে থেকেই দ্বন্দ্ব ছিল। সেই ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের জের ধরে গতকাল দুই পক্ষের মধ্যে ঝামেলা হয়। তারপর জাপানি হান্নান তার নিজের শটগান দিয়ে গুলি করেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। নিহতের বড় ভাই হারুন-অর-রশিদ বলেন, জাপানি হান্নান আমার চাচাতো ভাইদের মারধর করছেন- এমন খবর পেয়ে ছোট ভাই আবদুুর রশিদ তার বাড়ির সামনে যান। এ সময় তার কাছে মারধরের ঘটনা জানতে চাইলে জাপানি হান্নান তার হাতে থাকা শটগান দিয়ে আমার ভাইয়ের মুখের বাম পাশে গুলি করেন। সঙ্গে সঙ্গেই আমার ভাই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে উদ্ধার করে দক্ষিণখানের কেসি হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

জানা গেছে, গ্রেফতার জাপানি হান্নান বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। তিনি বাংলাদেশ-জাপান মানবাধিকার সংস্থার মহাসচিব। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুর পর অন্তর্র্বর্তীকালীন নির্বাচনের সময় তিনি ৪৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করেছিলেন।

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *