ডেঙ্গুজ্বরে ঢাবি ছাত্রের মৃত্যু, ২২ ঘন্টায় হাসপাতাল বিল ১ লাখ ৮৬ হাজার ৪৭৪ টাকা
ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ২২ ঘণ্টা চিকিৎসাধীন থাকার পর অবশেষে মৃত্যু কাছে হার মানেন ঢাবির মেধাবী শিক্ষার্থী ফিরোজ কবীর স্বাধীন (২৫)। স্বাধীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের ছাত্র ছিলেন। শুক্রবার (২৬ জুলাই) রাত সাড়ে ৯টার দিকে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন এই ঢাবি শিক্ষার্থী। তবে স্বাধীনের চিকিৎসা খরচে হাসপাতালে বিলের কপিকে ঘিরে আলোচনা চলছে প্রায় সবার মুখে মুখে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত একজন রোগীর ২২ ঘন্টার চিকিৎসার খারচ বাবদ ধরা হয়েছে ১ লাখ ৮৬ হাজার ৪৭৪ টাকা। তবে জানা গেছে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে মৃত্যুর পর বিল কিছু কম রাখা হয়েছে। তবে কেন এত টাকা বিল আসলো তা নিয়ে ধোয়াশা আর সন্দেহ রয়েই যায়।
ফিরোজ কবীর স্বাধীনের ২২ ঘণ্টার চিকিৎসায় করা হাসপাতালের বিলে দেয়া তথ্যগুলো হলো, ওষুধ বাবদ ৩২ হাজার ৩২১ টাকা ৫১ পয়সা, ল্যাবরেটরি চার্জ ৭৩ হাজার ৮৩৬ টাকা, মেডিকেল হসপিটাল সাপ্লাইতে ১০ হাজার ২১৯ টাকা বিল ধরা হয়েছে। বাকি টাকা অন্যান্য কয়েকটি খাতে ধরা হয়েছে। মোট বিল দেখানো হয়েছে ১ লাখ ৮৬ হাজার ৪৭৪ টাকা!
এ বিলের বিষয়ে স্বাধীনের পরিবার ও সহপাঠীদের থেকে যোগাযোগ করা হলে তেমন কোনো তথ্য দিতে পারেনি স্কয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এমন বিল প্রসঙ্গে স্বাধীনের বড় ভাই মো. ফজলুল করীম অভিযোগ করেন, হাসপাতালগুলো রোগীদের অসহায়ত্ব নিয়ে ব্যবসা করছে।
তিনি গণমাধ্যমকে জানান একদিনও পার হয়নি আর এর ভেতর বিল উঠল দুই লাখ টাকার কাছাকাছি। তারা কী করলেন আমার ভাইয়ের জন্য যে চিকিৎসা খরচ এত হলো। তার পরও মনকে বোঝাতে পারতাম যদি আমার ভাইকে বাঁচানো যেত।
স্বাধীনের বড় বোনের স্বামী হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘স্কয়ার হাসপাতালে ২০-২১ ঘণ্টা চিকিৎসাধীন ছিল স্বাধীন। এই সময়ের মধ্যে বিল উঠল এক লাখ ৮৭ হাজার টাকা! হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, আইসিইউর বিল ৬০-৭০ হাজার টাকার মতো আসতে পারে। সেটি হিসাব করে উপস্থিত সময়ে আমরা ৫৭ হাজার টাকা অগ্রিম দিয়েছিলাম তাদের। কিন্তু এখন এত টাকা বিলের হিসাব আমরা মেলাতে পারছি না।
মাত্র ২২ ঘণ্টায় কী করে এত টাকা বিল হলো, সে প্রশ্ন ছুড়েছেন স্বাধীনের পরিবারসহ তার সহপাঠীরা।
শরিফুল নামের এক সহপাঠী জানান স্বাধীনকে কত দামি ওষুধ দিয়েছিল তারা যে ওষুধ বাবদ ৩২ হাজার টাকা বিল করা হলো? সার্ভিস চার্জের নামে তারা রোগীর পরিজনদের গলা কাটছে।
স্বাধীনের পরিবার ও সহপাঠীদের এমন অভিযোগের ভিত্তিতে বিলের বিষয়ে জানতে গণমাধ্যমকর্মীরা স্কয়ার হাসপাতালের অভ্যর্থনা ডেস্কে গেলে এ বিষয়ে তারা কোনো বলতে পারবেন না বলে জানান।
পুরো বিষয়টি তৃতীয় তলায় বিলিং সেকশন দেখেন বলে জানান তারা। সে অনুযায়ী বিলিং সেকশনে গেলে তারা বলেন, হাসপাতাল থেকে কোনো ডকুমেন্টস দেয়া হয় না।
পরে সেখানে বিলের কপি দেখানো হলে তারা আবারও বলেন, এ বিষয়ে আমরা কিছু বলতে পারব না।
প্রসঙ্গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্বাধীনের মৃত্যু হয়। তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু তরিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে স্বাধীন এক সপ্তাহ ধরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন।
বৃহস্পতিবার ঢামেক হাসপাতাল থেকে স্কয়ার হাসপাতালে তাকে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তার মৃত্যু হয়।