fbpx
হোম অন্যান্য কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছেন নি:স্ব মোস্তাফিজ উদ্দিন !
কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছেন নি:স্ব মোস্তাফিজ উদ্দিন !

কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছেন নি:স্ব মোস্তাফিজ উদ্দিন !

0

বরাবরের মতো এবারও ঈদের আগে শ্রমিকদের হাতে বেতন-বোনাস আর ঈদ উপহার তুলে দেওয়ার তাড়না থেকে টানা ১০ দিনের বেশি বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে আসছিলেন চট্টগ্রামের মোস্তাফিজ উদ্দিন। শেষ দিন সকাল ১০টায় ব্যাংকে বসেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকেন।

বিকাল ৩টার দিকে ব্যাংক থেকে জানানো হয়, ইউরোপ কিংবা আমেরিকা কোনো দেশ থেকেই টাকা আসেনি। তাই আজকে আর কোনো লেনদেনের সুযোগ নেই।

মোস্তাফিজ বলেন, এমন খবরে আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। আগের রাতে একটুও ঘুমাতে পারিনি। বুধবার সকালে শেষ কর্মদিবসে শ্রমিকদের কী করে খালি হাতে বিদায় করব তা ভাবতেই আমার কান্না চলে আসে। কিছুক্ষণের জন্য নিজের ওপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি।

২০০৯ সালে চট্টগ্রামে কারখানা বানিয়ে মাত্র কয়েক বছরে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি অর্জন করেন মোস্তাফিজ উদ্দিন। শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ন্যায্য মজুরি, ছয় মাসের মাতৃত্বকালীন ভাতা ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি স্থাপন করে ইউরোপ আমেরিকার ক্রেতাদের নজরে আসেন।

বাংলাদেশি পোশাক শিল্পোদ্যোক্তা ও পশ্চিমা ক্রেতাদের মধ্যে সংযোগ ঘটাতে গত পাঁচ বছর ধরে ট্রেড শো এবং ব্যবসায়ী সম্মেলন আয়োজন করে তিনি পরিচিতি পেয়েছেন ‘ডেনিম মোস্তাফিজ’ নামে।

কিন্তু ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোতে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর গত ফেব্রুয়ারি থেকেই সংকটের শুরু হয়। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার পশ্চিমা বিশ্বে পোশাকের চাহিদা কমে যায়।

এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ক্রেতা কোম্পানি আকস্মিকভাবে একের পর এক কার্যাদেশ বাতিল করতে থাকে। অনেকে পণ্য হাতে পেয়েও সেগুলোর দাম আটকে রেখেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এমন সংকটের শিকার মোস্তাফিজ বলেন, গত ফেব্রুয়ারি মাসে আমেরিকার গ্লোবাল ব্র্যান্ড গ্রুপ বা জিবিজির কাছে তার ছয় কোটি টাকার শিপমেন্ট হয়েছে। ফিলিপ গ্রিনের কোম্পানি আর্কেডিয়ার কাছে গেছে ২৫ কোটি টাকার পণ্য। পিকক নামের একটি ব্র্যান্ডের কাছেও প্রায় সমপরিমাণ টাকা বকেয়া পড়েছে। এভাবে গত ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত বিদেশি ক্রেতাদের কাছে প্রায় ৫৪ কোটি টাকা বকেয়া পড়েছে।

প্রশ্ন রাখেন, হাতে গোনা দুই-চারটি কারখানা হয়ত এমন ধাক্কা সমলাতে পারবে। কিন্তু আমার মতো ছোট কারখানাগুলো কী করে টিকে থাকবে ?

প্রায় দুই হাজার শ্রমিক-কর্মচারীর কারখানা ডেনিম এক্সপার্টে প্রতি মাসে শ্রমিকের বেতন বাবদ খরচ হয় দুই কোটি ৬০ লাখ টাকা। কর্মকর্তাদের বেতন, ইউটিলিটি চার্জ আর জমি ভাড়া মিলিয়ে এক মাসে খরচ হয় প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। আর উৎসব ভাতা হিসাবে দিতে হয় প্রায় এক কোটি টাকা।

মোস্তাফিজ বলেন, প্রতি বছর ঈদে শ্রমিকদের হাতে উপহার তুলে দিই। তাদেরকে নিয়ে ভালো মানের হোটেলে একদিন বসে ইফতার করি। এবার এসব কিছুই করতে পারিনি। কিন্তু ঈদ বোনাস থেকেও বঞ্চিত রাখতে হবে সেটা ভাবতে পারিনি। শেষ মুহূর্তে পরিচিত বন্ধু-স্বজনদের কাছ থেকে ধার-দেনা করে তাদের হাতে বোনাস তুলে দিয়েছি।

ডেনিম এক্সপার্ট কত শতাংশ বোনাস দিয়েছে তা বলতে রাজি হননি মোস্তাফিজ। তবে কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা ‘প্রত্যাশিত’ বোনাস পেয়েছেন। পাশাপাশি ঈদে পেয়েছেন ১০ দিনের ছুটি।

বিদেশি ক্রেতাদের অসহযোগিতার কথা তুলে ধরে মোস্তাফিজ বলেন, মহামারী শুরু হওয়ার পর ক্রেতারা কোনো আলোচনা ছাড়াই একতরফাভাবে অর্ডারগুলো বাতিল করে দিল, কিছু শিপমেন্ট স্থগিত করে দিল। তারা অর্ডার করল, আমরা পণ্য তৈরি করলাম। এখন তারা টাকা না দিয়ে অর্ডার স্থগিত করল, এটা তো কোনো ব্যবসার পদ্ধতি হতে পারে না।

বাংলাদেশের অধিকাংশ রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানার সঙ্গে ক্রেতারা একই ধরনের আচরণ করছে বলে অভিযোগ করেন মোস্তাফিজ। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার স্বল্প সুদে ঋণ সহায়তা নিয়ে শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ালেও বিশ্ব সংস্থাগুলো ‘নীরব ভূমিকা’ পালন করায় হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।

তিনি বলেন, বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে আমাদের দ্বিপক্ষীয় চুক্তিগুলো দুর্বল। কারখানা মালিকরা এক্ষেত্রে ভয় পায়। ফলে ক্রেতারা কারখানাগুলোর সঙ্গে যা ইচ্ছা তাই করে বেড়াতে পারে। তারাই আবার শ্রমিকের অধিকার ইস্যুতে কারখানাগুলোকে চাপ দেয়। তারাই টাকা বকেয়া রেখে শ্রমিকদের বিপদে ফেলে।

উল্লেখ্য, তার কান্নার ছবি দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে অ্যাপারেলইনসাইডার ডটকম নামের একটি ওয়েবসাইট।

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *