fbpx
হোম আন্তর্জাতিক করোনা যুদ্ধের হিরো ডা. রোজির বেঁচে ফেরার গল্প
করোনা যুদ্ধের হিরো ডা. রোজির বেঁচে ফেরার গল্প

করোনা যুদ্ধের হিরো ডা. রোজির বেঁচে ফেরার গল্প

0

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সুস্থ করার জন্য যিনি দিন রাত খেটেছেন তাদের কাতারে যার নামটি লিখতে হবে তিনি হলেন রোজি হিউজেস। চিকিৎসা পেশায় সবে মাত্র ক্যারিয়ার শুরু করেছেন। মাত্র এক বছরের মাথায় মহামারি করোনা ভাইরাসের সঙ্গে তাকে যুদ্ধে নামতে হয়। নিজ চোখে অসংখ্য রোগীর মৃত্যু দেখেছেন। তাদের জন্য কেঁদেছেন। কাজের ফাঁকে সহকর্মীদের সঙ্গেও হেসেছেন। তিনি জানতেন এই পথ সহজ নয়। তবে এই সময় থেমে থাকার নয়।

সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা জানান ব্রিটিশ পত্রিকা দ্যা গার্ডিয়ানকে। তার অভিজ্ঞতার বর্ণনা চেঞ্জ টিভি’র পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

‘‘আমি একজন জুনিয়র ডাক্তার। গত কয়েক সপ্তাহে আমি দেখেছি কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে কয়েক ডজন মানুষ মারা গেছেন। আমার বয়স ২৫। আমি একটি মেট্রোপলিটন হাসপাতালে আট মাসেরও বেশি সময় ধরে এনএইচএসে কাজ করছি। যখন আমি এবং আমার সহকর্মীরা ছয় বছর আগে মেডিকেলে আবেদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তখন আমরা জানতাম যে আমরা একটি চ্যালেঞ্জের জন্য তৈরি হচ্ছি। আমরা জানতাম এটি একটি সহজ যাত্রা হবে না। আমি কিংবা আমাদের কেউ কল্পনাও করতে পারিনি আমরা আমাদের ক্যারিয়ারের এক বছরে মধ্যে এমন মহামারির সম্মুখীন হবো।

আমি মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ভর্তি থাকা রোগীদের যত্ন নিয়েছি এবং কথা বলার সময় তাদের যখন খুব শ্বাসকষ্ট হতো তখন আমি তাদের হাত ধরেছি। রোগীকে ভ্যান্টিলেটর সুবিধা দেওয়ার জন্য লড়াই করেছি। আমার শিফট শেষ হওয়ার পরেও আমি তাদের সাথে ছিলাম। শেষ নিঃশ্বাস নেওয়ার আগে পর্যন্ত আমি ছিলাম সেখানে। আর ভাবতাম কিছু মাস আগে হলেও একটা সুযোগ থাকত। তাদের পরিবারকে আমি কল করে জানিয়েছি, তাদের প্রিয় মানুষটি আর বাঁচবেন না।

আমি তখন অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে ক্ষমাপ্রার্থী হয়ে তাদের বলি যে, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের ঝুঁকির কারণে তারা রোগীর সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না। একসময় ফোনে থাকাকালীন সময়ে আমি চোখের পানি আটকে রাখতে ব্যর্থ হয়েছি এবং আশা করতাম আমার ভারাক্রান্ত কণ্ঠ যেন তারা না শোনে। গত সপ্তাহের রোববার সন্ধ্যায় আমি ক্লান্ত অনুভব করতে শুরু করলাম এবং খেয়াল করেছি যে আমি স্বাদ এবং গন্ধের সংবেদন হারিয়ে ফেলেছি। এটি কোভিড – ১৯ এর নতুন একটি লক্ষণ যা করোনার উপসর্গ।

সোমবার সকালে, আমার পেশাগত স্বাস্থ্য বিভাগে পাঁচ ঘণ্টা অবস্থান করার পর আমি ফোনে একজন নার্সের সাথে যোগাযোগ করি, যিনি আমাকে কাজে থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন। যেহেতু আমার কাশি বা জ্বর হয়নি সে জন্য সে কিট সংগ্রহ করতে পারবেন না পরীক্ষার জন্য। আমাকে দেওয়া তার উত্তরটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দিকনির্দেশনার সাথে সম্পূর্ণ সঙ্গতিপূর্ণ ছিল। আমি দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গেলাম। আমি বুঝতে পারছিলাম যে, এখানে থাকার কারণে আশপাশের মানুষকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছি। তাৎক্ষনিক হাসপাতাল ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই।

হাসপাতাল থেকে চলে যাওয়ার আগে আমার করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করি যেটা আমার ঊর্ধ্বতন অনুমোদন দেয়। করোনা ভাইরাসের বর্তমান পরীক্ষার ধরন হচ্ছে গলা থেকে লালা সংগ্রহ করা। তবে এই পদ্ধতিতে যিনি এটি সংগ্রহ করেন সে উচ্চ ঝুঁকিতে থাকেন।

আমার ওয়ার্ডের নার্সদের সাহায্যের জন্য বলতে পারলাম না। কারণ আমি জানতাম আমার এখানে চোখের সুরক্ষার জন্য দেওয়া গ্লাসটির সংকট রয়েছে। তাই আমি নিজেই সেই লালা সংগ্রহ করলাম এবং পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠালাম। আমি পরেরদিন ফোন পেলাম। জানতে পারলাম ফলাফল পজিটিভ এসেছে। এর অর্থ আমাকে সাত দিনের জন্য সঙ্গরোধে থাকতে হবে এবং আমার রুমের দুইজন যারা জুনিয়র চিকিৎসকও রয়েছেন, তাদেরকে মোট ১৪ দিন সঙ্গরোধে থাকতে হবে।

আমার বহু রোগীর মৃত্যু হয়েছে এই ভাইরাসের জন্য। এটি একটি কঠিন পরীক্ষা। নিরাপদ পিপিইর অভাবে এটিকে অনিবার্য বলে মনে হয়েছিল। তবে আমি স্বস্তি পেয়েছিলাম যে অপেক্ষাটি শেষ হয়েছে এবং এটি শেষ পর্যন্ত আঘাত করেছে। আমি ভাগ্যবান। আমার লক্ষণগুলো হালকা এবং আমি কেবল আশা করতে পারি যে এটি সেভাবেই যেন থাকে। কিন্তু যখন আমি বসে ভাবি তখন আমার খুব ভয় হয় এবং অপরাধবোধ হতে থাকে।

আমি শ্বাসকষ্টে থাকা রোগীদের অবস্থা আমার মাথায় রিপ্লে করি এবং তাদের পরিবারের সাথে আমার টেলিফোনের কথোপকথনগুলো স্মরণ করতে থাকি। আমি অবাক হয়ে ভাবি, ইশ! আমি যদি আরও যত্নশীল থাকতাম বা আমার হাতগুলো আরও একবার ধুয়ে ফেলতাম বা আমার গ্লাভস দিয়ে আমার মুখটি স্পর্শ না করতাম তবে সম্ভবত আমি সেই মৃত্যুগুলো কিছুটা হলেও আটকাতে পারতাম। আমার অপরাধবোধ কাজ করে, আমার কারণে রুমমেটরা তাদের কাজে যেতে পারছেন না। আমার খারাপ লাগছে, আমার সহকর্মীর কথা চিন্তা করে। আমার শিফটগুলোতে তাদের বাড়তি কাজ করতে হচ্ছে সেই সঙ্গে ভাইরাসের মধ্যে দীর্ঘ সময় থাকতে হচ্ছে।

নার্সের কথা না শুনে হাসপাতাল থেকে চলে আসার কারণে আমার সম্ভাব্য পরিণতি নিয়েও আমি চিন্তিত। যখন নার্স আমাকে কাজে থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং পরীক্ষা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল (জ্বর ও কাশি না থাকার কারণে)। আমি নিয়ম ভঙ্গ করেছি এবং আমার পদের সুযোগ নিয়েছি। কিন্তু আমি আশা করি এটা তারা বিবেচনায় নিবেন না। কারণ, আমার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল এবং হাসপাতালের রোগী ও আমার সহকর্মীদের সংক্রমিত হওয়া থেকে বাঁচাতে পেরেছি। নার্সের কথা মতো কাজ চালিয়ে গেলে বিপদ হতে পারতো। সমস্ত ভয় এবং উদ্বেগের বাইরে, আমি আমার বন্ধুবান্ধব এবং আমার পরিবারকে অনেক মিস করি। তারা আমাকে প্রতিদিন খোঁজ খবর নেয় এবং জিজ্ঞাসা করে যে আমি কী করছি।

বেশিরভাগ সময় আমি কেবল হাসপাতালে থাকতে চেয়েছিলাম কারণ এটাই পরিবারকে ভুলে থাকার সহজ উপায় ছিল। ফলাফল, আমার সহকর্মীরা আমার পরিবারে পরিণত হয়েছে। চিকিৎসক, নার্স, অ্যাডমিন স্টাফ, কুলি, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কর্মীসহ সবাই। তারা সাহসী ও তারা মেধাবী এবং তারা আমাকে একই রকম হতে অনুপ্রাণিত করে। ভয়, ক্লান্তি, অনিশ্চয়তা, একাকীত্ব এবং অশ্রু সব ভুলে আমরা এখনও কোনও না কোনোভাবে প্রতিদিন হাসি। আমরা মূলত আমাদের চোখ দিয়ে হাসি। এই মহামারি আমাদের এমনভাবে এক করেছে যা আমি বর্ণনা করে বোঝাতে পারব না।

আমরা গর্বের সঙ্গে যেখানে কাজ করি যাকে আমরা এনএইচএস বলি সেটা সম্পর্কে উপযুক্ত বর্ণনা করা কঠিন। অনেকেই আমাদের ধন্যবাদ জানায়, অনেকেই আমাদের ‘হিরো’ ডাকে। দয়া করে জেনে রাখুন যে এটাই আমাদের কাছে অনেক সম্মানের। আগামীকাল, আমার সঙ্গরোধের সময়কাল শেষ হবে। আমি স্বস্তি পেয়েছি এই জন্য যে আমি এই ভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধে জয়ী হয়েছি এবং দুর্ভাগ্যবানদের জন্য আবারো লড়াই চালিয়ে যেতে পারব ।’’

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry
6

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *