এক লিটার পেট্রলে গাড়ি চলবে ১০০ কিলোমিটার ! এই যন্ত্রের আবিষ্কারক হঠাৎ গায়েব…
পেট্রোপণ্যের মূল্য দিন দিন বেড়েই চলেছে। মাত্রাতিরিক্ত দাম মেটাতে গিয়ে নাজেহাল মানুষ। কিন্তু পেট্রোপণ্য নিয়ে বিশ্বের সামগ্রিক চিত্র এমন না-ও হতে পারত। খুব কম পেট্রলে গাড়ি চলতে পারত অনেক দূর পর্যন্ত। কিন্তু তা যার জন্য সম্ভব হতে পারত, সেই বিজ্ঞানী টম ওগলে উধাও হয়ে যান রহস্যজনক ভাবে।
কোনো গাড়ি যদি এক লিটার পেট্রলে ১০০ কিলোমিটার ছুটে যেতে পারত, তা হলে দুর্দান্ত হত, তাই না ? টম সে রকমই এক ইঞ্জিন তৈরি করেছিলেন। টম ছিলেন আমেরিকার বিজ্ঞানী। কিন্তু কী এমন যন্ত্র বানিয়েছিলেন তিনি ? টম দাবি করেছিলেন, ইঞ্জিনের কার্বুরেটরকে তিনি তার বানানো এমন একটি যন্ত্র দিয়ে প্রতিস্থাপন করেছিলেন যাতে গাড়ি কম তেলে অনেক বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে।
টমের দাবি ছিল, এই যন্ত্র গাড়ির ইঞ্জিনকে অত্যন্ত জ্বালানি সাশ্রয়ী করে তোলে। ১৯৭৭-এ টম ৪২৭ অশ্বক্ষমতাযুক্ত একটি ভি-৮ ইঞ্জিন এবং প্রায় সাড়ে ১১ লিটারের ট্যাঙ্ক যুক্ত একটি ফোর্ড গ্যালাক্সিতে তার তৈরি যন্ত্র ব্যবহার করেন। সেই গাড়িতে নিজের বানানো যন্ত্র লাগিয়ে খুব কম তেলে প্রায় ১৬০ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করেছিলেন টম।
ফোর্ড গ্যালাক্সি গাড়ির ওজন অনেক বেশি। তাই মনে করা হয়েছিল, অপেক্ষাকৃত ভারী গাড়িতে এই যন্ত্র আরও বেশি জ্বালানি সাশ্রয়ী হবে। বেশির ভাগ গাড়ির ইঞ্জিনে একটি কার্বুরেটর এবং জ্বালানি পাম্প ব্যবহার করা হয়। তরল জ্বালানি দহনকক্ষে প্রবেশ করে এবং ইঞ্জিনকে শক্তি সরবরাহ করে। ওগলে এই কার্বুরেটর এবং জ্বালানি পাম্পটিকে একটি ‘ব্ল্যাক বক্স ফিল্টার’ দিয়ে প্রতিস্থাপন করেছিলেন এবং দহন চেম্বারগুলোকে বাষ্পযুক্ত পেট্রল দিয়ে ভরে দিয়েছিলেন।
মনে করা হয়, তেল সংস্থাগুলো টমের এই আবিষ্কার ভালভাবে নেয়নি। কারণ এই যন্ত্র বাজারে এলে লোকসান হত তাদের।
বাগান পরিষ্কারের একটি ভাঙা মেশিন থেকে এই যন্ত্র আবিষ্কারের কথা টমের মাথায় আসে। এক বার টম একটি বাগান পরিষ্কারের মেশিন দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করছিলেন। তখন সেই যন্ত্র খারাপ হয়ে যায়। সেই যন্ত্র ঠিক করতে গিয়ে তিনি জ্বালানি সাশ্রয়ী যন্ত্র আবিষ্কারের কথা ভাবেন।
তবে টমের ঐ ইঞ্জিন কোনো দিন বাজারে আসেনি। যন্ত্রের সফল পরীক্ষার পর অনেক বিনিয়োগকারী তার বাড়ির সামনে ভিড় জমাতে থাকেন। শোনা যায় অনেকের কাছ থেকে মোটা টাকা নিয়েছিলেন টম। কিন্তু হঠাৎ করেই উধাও হয়ে যান টম। এই নিয়ে দুইটি ধারণা প্রচলিত রয়েছে। অনেকের মতে, টমের অনেক পারিবারিক সমস্যা ছিল। স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। এর জন্য তিনি নাকি প্রচুর মদ্যপান করতেন এবং অসুস্থতার কারণে হঠাৎই মারা যান।
অন্য দিকে, আমেরিকার জনপ্রিয় রেডিও ভাষ্যকার পল হার্ভে দাবি করেন, যেদিন টম তার আবিষ্কার সর্বসমক্ষে নিয়ে আসার চিন্তা করেছিলেন, ঠিক সে দিনই তিনি নিখোঁজ হয়ে যান। শুধু তা-ই নয়, তার ঐ যন্ত্র সম্পর্কে তৈরি করা নথিগুলোও নাকি রাতারাতি গায়েব হয়ে গিয়েছিল। টমকে ছাড়াই নাকি পরে সেই যন্ত্রের পরীক্ষা হয়েছিল। কিন্তু সে বার ওই যন্ত্র কাজ করেনি।
যদিও সেই সময়ে অনেকেই দাবি করেন যে, টমের অনুপস্থিতিতে ঐ যন্ত্রের পরীক্ষা ইচ্ছা করে ভুল ভাবে করা হয়েছে। টমের উধাও হয়ে যাওয়ার পেছনেও ‘বড় মাথা’র হাত রয়েছে বলে দাবি করেছিলেন অনেকে। তবে সেই সব দাবি প্রমাণিত হয়নি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে টম এবং তার যন্ত্রের বিষয়টি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যায়। অন্য কয়েক জন গবেষক অনুরূপ যন্ত্র আবিষ্কারের চেষ্টা করলেও সফল হননি।
সূত্র: আনন্দবাজার