fbpx
হোম আন্তর্জাতিক ইসরায়েলের বর্বর হামলায় নিরব বিশ্ব সম্প্রদায় !
ইসরায়েলের বর্বর হামলায় নিরব বিশ্ব সম্প্রদায় !

ইসরায়েলের বর্বর হামলায় নিরব বিশ্ব সম্প্রদায় !

0

ছবি ও ভিডিওগুলো দেখলে ফিলিস্তিনিদের কঠিন পরিস্থিতিটা আঁচ করা যায়। শিশুদের লাশের সারি, রক্তাক্ত দেহ। হাসপাতালে স্বজনদের ছোটাছুটি কিংবা কাফনের কাপড় সরিয়ে প্রিয়জনকে শেষবারের মতো দেখার চেষ্টা।

অবরুদ্ধ গাজায় গত সোমবার দফায় দফায় বিমান হামলায় চালায় ইসরায়েল। সেই হামলার শিকার এই শিশুরা। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর, হামলায় ১০ শিশুসহ ৩২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক।

যুগ যুগ ধরেই রক্ত ঝরছে ফিলিস্তিনিদের। ইসরায়েল একে একে ফিলিস্তিনিদের আবাসভূমি গ্রাস করে নিচ্ছে, সেই ভূমিতে ইহুদি বসতি বাড়াচ্ছে। আবার নির্বিচারে হামলা চালিয়ে ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছে। কিন্তু জবাব চাওয়ার যেন কেউ নেই।
কয়েক বছরের মধ্যে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রক্তপাত হলো গত সোমবারে হামলায়। গতকাল মঙ্গলবারও হামলা অব্যাহত রাখে ইসরায়েলি বাহিনী।

 

এবারের উত্তেজনার শুরু শেখ জারাহ এলাকায় ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের আশঙ্কা থেকে। জেরুজালেম লাগোয়া এই এলাকা থেকে ফিলিস্তিনি চারটি পরিবারকে ইসরায়েলি সুপ্রিম কোর্ট উচ্ছেদের আদেশ দিতে যাচ্ছেন—এমন আশঙ্কা থেকে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চলছিল। ১৯৫৭ সাল থেকে ওই পরিবারগুলো সেখানে বসবাস করে আসছে। ওই পরিবারগুলোর সমর্থনে রমজানের শেষ শুক্রবার জুমাতুল বিদার দিন পবিত্র আল আকসা মসজিদে নামাজ আদায়ের পর অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন অনেক ফিলিস্তিনি।

বিক্ষোভে অংশ নিয়ে বাশার মাহমুদ (২৩) বলেন, ‘আমরা যদি এখন উচ্ছেদের মুখে থাকা ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোর পক্ষে না দাঁড়াই, তাহলে কয়েক দিন পর হয়তো আমাকে উচ্ছেদ হতে হবে, তারপর হয়তো আরেকজন ফিলিস্তিনিকে উচ্ছেদ হতে হবে। হয়তো একে একে সব ফিলিস্তিনিকেই একদিন উচ্ছেদ হতে হবে।’
শুক্রবার থেকেই বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে ইসরায়েলি পুলিশ তৎপরতা শুরু করে। এরপর দুই পক্ষের সংঘর্ষ শুরু হয়। সোমবার সেটা চূড়ান্ত রূপ নেয়। মসজিদ চত্বর থেকে জোর করে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে দিতে ইসরায়েলি পুলিশ রাবার বুলেট, জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর, মসজিদ চত্বর থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে দিতে ইসরায়েলি পুলিশের চার দিনের অভিযানে এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ফিলিস্তিনের কট্টরপন্থী সংগঠন হামাস সোমবার মসজিদ চত্বর থেকে পুলিশ প্রত্যাহারের জন্য আলটিমেটাম দেয় ইসরায়েলকে। সেই আলটিমেটাম পার হলে ইসরায়েল লক্ষ্য করে রকেট ছোড়ে হামাস।

হামাসের সেই রকেট ছোড়ার জবাব দিতে গাজায় সোমবার সন্ধ্যার পর দফায় দফায় বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। এই হামলায় ১০ শিশুসহ প্রাণ হারায় ৩২ ফিলিস্তিনি। আল-জাজিরার খবরে বলা হয়, গতকাল রাতেও গাজায় বিমান হামলা চালিয়ে একটি ১৩ তলা আবাসিক ভবন গুঁড়িয়ে দেয় ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান। আগেই বাসিন্দারা ওই ভবন থেকে সরে যাওয়ায় বড় ধরনের প্রাণহানি এড়ানো সম্ভব হয়। অন্তত ১৩০টি লক্ষ্যবস্তুতে বোমা হামলা চালায় ইসরায়েল।

যুক্তরাষ্ট্র যত দিন ইসরায়েলকে জবাবদিহির মধ্যে আনতে না পারবে, তত দিন বাইডেন প্রশাসনের বিবৃতি দিয়ে উত্তেজনা-সহিংসতা কমানো সম্ভব হবে না।ফিলিজ বেনিস, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিঙ্কট্যাংক ইনস্টিটিউট ফর পলিসি স্টাডিজের বিশ্লেষক

ইসরায়েলি ওই বিমান হামলার পর হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসেম ব্রিগেড ইসরায়েলের তেল আবিব লক্ষ্য করে রকেট ছোড়ে। বিবিসি জানায়, গতকাল বিমান হামলার জবাবে হামাস ১৩০টিরও বেশি রকেট ছোড়ে ইসরায়েলে। এর আগে সোমবারও রকেট হামলা চালায় হামাস। এসব হামলায় অন্তত তিন ইসরায়েলি নিহত হন।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে গতকাল বলেন, রকেট ছোড়ার জন্য গাজার সন্ত্রাসীদের ‘চড়া মূল্য দিতে হবে’। রয়টার্স জানায়, নিজের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও সেনাপ্রধানকে পাশে রেখে দেওয়া ওই ভাষণে নেতানিয়াহু আরও বলেন, রকেট ছোড়ার জন্য হামাস ও ইসলামিক জিহাদকে চড়া মূল্য দিতে হয়েছে…আরও চড়া মূল্য দিতে হবে।

বসে নেই হামাসও। হামাসের নেতা ইসমাইল হানিয়া টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে বলেছেন, ‘ইসরায়েল যদি পূর্ণমাত্রার সংঘর্ষ চায়, তাহলে আমরা প্রস্তুত। যদি ইসরায়েল এটা থামাতে চায়, তাতেও আমরা প্রস্তুত আছি।’ আল-জাজিরা জানায়, ইসমাইল হানিয়া কোন জায়গা থেকে এই ভাষণ দিয়েছেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে তিনি গাজায় নেই।

এই হামলার মধ্যে রাজনৈতিক সমীকরণ থাকতে পারে? এই ভাবনা উড়িয়ে দেওয়ার উপায় নেই। ইসরায়েলে দুই বছরেরও কম সময়ে চারটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি নির্বাচনের ফলাফলে কোনো পক্ষই সরকার গঠন করতে পারেনি। চতুর্থ নির্বাচনের পর নেতানিয়াহুর বিরোধীরা সরকার গঠনের আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাই এখনো ক্ষমতায় টিকে আছেন নেতানিয়াহু। ইতিমধ্যে ইসরায়েলের সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেছেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তও চলছে। ক্ষমতা হারানোর পর দুর্নীতির অভিযোগে নেতানিয়াহুর দোষী সাব্যস্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ইসরায়েলি দৈনিক হারেৎজ জানায়, নেতানিয়াহুর বিরোধীরা ‘চলতি সপ্তাহে’ নতুন সরকার গঠন করতে পারে। তাই প্রশ্নটা তোলাই যায়, এমন সময় যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করে আরও কিছুদিন ক্ষমতায় থাকার পথটা করে নিতেই কি গাজায় এই বিমান হামলা?

নিজের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও সেনাপ্রধানকে পাশে রেখে দেওয়া ওই ভাষণে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু আরও বলেন, রকেট ছোড়ার জন্য হামাস ও ইসলামিক জিহাদকে চড়া মূল্য দিতে হয়েছে…আরও চড়া মূল্য দিতে হবে।

এই নির্বিচার হামলার পরও বিশ্বের প্রভাবশালী, পরাশক্তি কিংবা মোড়ল-মাতব্বর দেশগুলো যেন শুধু সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে দায় সেরেছে। কোনো কোনো দেশ ইসরায়েলে রকেট ছোড়ার নিন্দা জানালেও গাজায় বিমান হামলা চালানোর ব্যাপারে ‘টুঁ’ শব্দটি করেনি।

জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইউ), রাশিয়া এ ঘটনার নিন্দা পর্যন্ত জানায়নি। তারা ‘জেরুজালেমে সহিংসতার ঘটনায় গভীর উদ্বেগের’ কথা জানিয়েছে। জার্মানি সব পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। আর যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোমিনিক রাব এক টুইটার বার্তায় ইসরায়েলের দিকে রকেট ছুড়ে মারার নিন্দা জানিয়েছেন। বলেছেন, জেরুজালেম ও গাজায় সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। বেসামরিক জনগণকে লক্ষ্যবস্তু বানানো বন্ধ করতে হবে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন গতকাল ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর গ্যাবি আশেকেনাজির সঙ্গে আলোচনায় চলমান উত্তেজনা কমানোর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সহিংসতা বন্ধ করে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

অন্যদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্টে জো বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ইসরায়েলের প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে ফোন করে বার্তা দিয়েছেন। সেই বার্তাই বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলের নিরাপত্তার ব্যাপারে অবিচল সমর্থন’ রয়েছে বাইডেনের। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সহিংসতা বন্ধ করে টেকসই শান্তির পদক্ষেপকেও উৎসাহিত করে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিঙ্কট্যাংক ইনস্টিটিউট ফর পলিসি স্টাডিজের বিশ্লেষক ফিলিজ বেনিস বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যত দিন ইসরায়েলকে জবাবদিহির মধ্যে আনতে না পারবে, তত দিন বাইডেন প্রশাসনের বিবৃতি দিয়ে উত্তেজনা-সহিংসতা কমানো সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে বলতে শুনেছি, তিনি এমন একটা পররাষ্ট্রনীতি চান, যেটা মানবাধিকারের ওপর ভিত্তি করে হবে। কিন্তু বাস্তবে আমরা সে বিষয় দেখছি না, ফিলিস্তিনের ক্ষেত্রে তো নয়ই।’

সূত্র: প্রথম আলো

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *