fbpx
হোম ক্রীড়া আবারও চ্যাম্পিয়নের স্বপ্ন নিয়ে অবদান রাখতে চান জাতীয় ফুটবলে
আবারও চ্যাম্পিয়নের স্বপ্ন নিয়ে অবদান রাখতে চান জাতীয় ফুটবলে

আবারও চ্যাম্পিয়নের স্বপ্ন নিয়ে অবদান রাখতে চান জাতীয় ফুটবলে

0
আলিম আল সাঈদ খোকন। বাড়ি রংপুর সদর। সেখানে বাড়ি হলেও জীবনের অর্ধেক সময় পার করেছেন বিভিন্ন জেলা-উপজেলায়। লক্ষ্য ফুটবল খেলোয়াড় তৈরীর কাজ। মূলত তিনি একজন দক্ষ ফুটবল কোচ হিসেবে উত্তরাঞ্চলের গন্ডি পেরিয়ে নাম কুড়িয়েছেন জাতীয়  ক্রীড়াঙ্গনেও।
প্রথমবারের মত সাঈদ খোকনের সারা জাগানো সাফল্য আসে ২০১৬ সালে বঙ্গমাতা বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন ও ২০১৮ সালে বঙ্গমাতা বাংলাদেশ রানার্স আপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মধ্য দিয়ে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে পুরস্কার হাতে তুলে দেন তার হাতে।
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার অজোপাড়া গাঁয়ের বি.কে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রংপুর বিভাগের হয়ে বঙ্গমাতা ফুটবল খেলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করায় কোচ খোকন ব্যাপক প্রশংসা কুড়ান। এজন্য বি.কে সপ্রাবি’র প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ, উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ছাড়াও দেশ-বিদেশের অনেক শুভাকাঙ্খী ও ফুটবল ভক্তরা কোচ খোকনের প্রতি আজীবনের জন্য পাটগ্রামবাসীর পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়।
সম্প্রতি পাটগ্রাম উপজেলার সাংবাদিক সামিউল ইমলাম সানি চেঞ্জ টিভি’র হয়ে ভার্চুয়াল সাক্ষাতকারে সাঈদ খোকনের সঙ্গে বর্তমান, ভবিষ্যত ও অতীত স্মৃতিবিজড়িত কিছু কর্ম ও পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০৫ পর্যন্ত ১০ বছর রংপুর জেলায় ফার্স্ট ডিভিশন ঘাঘট সংঘ ক্লাব, রোমিও অঙ্গন ক্লাব, মিলার বয়েজ ক্লাবে খেলেছেন। ওয়েস্টার্ণ ইউনিয়ন অনূর্ধ্ব ১৯  রাজশাহী বিভাগের হয়েও খেলেছেন। এছাড়াও ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন রংপুর ডিভিশন’র হয়ে খেলেছেন ২০০৩ সালে। ২০০৫ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত তৎকালীন বিডিআরের হয়ে, ২০০৭ সালে বিডিআরের হয়ে ভারতে,  ২০০৩  সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ঢাকাযর যাত্রাবাড়ী ক্রীড়াচক্র ,ঝটিকা স্পোটিং ক্লাব, মাওতাইল স্পোটিং ক্লাব, ভিক্টোরিয়া ক্লাব ও আরামবাগ ক্লাবের হয়েও খেলার সুযোগ হয়েছিল বলে জানান খোকন। পাশাপাশি বিভিন্ন জেলায় ঘরোয়া টুর্নামেন্টগুলো অসংখ্যবার খেলেছেন তিনি।
মূলত এরপরই কোচ ক্যারিয়ার শুরু ২০১০ সাল থেকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ রংপুর জেলাকে ২০১১ সাল বাংলাদেশ রানারআপ এবং ২০১২ সালে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন, ২০১৪ রংপুর রানারআপ, ২০১৫ দিনাজপুর জেলা বাংলাদেশ রানার আপ, ২০১৬ সালে লালমনিরহাট জেলা বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন, ২০১৮ লালমনিরহাট জেলা বাংলাদেশ রানার আপ, ২০১৯ ইউনিসেফ, ফুটবল ফেডারেশন আয়োজনে প্রমিলা ফুটবল টুর্নামেন্ট অনূর্ধ্ব ১৬ বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সফলতা আসে সাঈদ খোকনের হাত ধরেই। বর্তমানে লালমনিরহাট জেলা ছেলেদল এবং মেয়েদলকে নিয়ে ২০২১  রংপুর বিভাগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে জাতীয় পর্যায়ে খেলার জন্য অপেক্ষা করছে।
জীবনের টার্নিং পয়েন্ট মনে করেন কোন ঘটনাকে এমন এক প্রশ্নের জবাবে সাঈদ খোকন বলেন, পরিবার থেকে একদম খেলা পছন্দ করত না। বংশের মধ্যে কেউ চর্চাও করত না। কোনো খেলোয়াড় ছিল না। তাই লুকিয়ে লুকিয়ে খেলতাম। ১৯৯৩ সালে এলাকার হাবিবুর রহমান মিঠু নামে এক চাচা খেলার মাঠে কৌশল কম জানার কারণে আমাকে মাঠ থেকে বের করে দেন। সেই ক্ষোভ, রাগ আর জেদ থেকেই পাশে রংপুর বিডিআর ক্যাম্পের মাঠে গিয়ে বিডিআর খেলোয়াড়দের সঙ্গে মাঝেমধ্যেই অনুশীলন করতাম। এক বছর পর যে ক্লাব থেকে চলে এসেছি হঠাৎ একদিন সেই  ক্লাবের সঙ্গে প্রীতি ম্যাচের আয়োজন করে বিডিআর। সেই ম্যাচে একাই  ৪টি গোল করে তাক লাগিয়ে দেই। তখন থেকেই আমাকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। সেই ক্লাবের হয়ে প্রথম রংপুরে ফার্স্ট ডিভিশন খেলা শুরু করি এবং সে কারণে সেদিনের সেই হাবিবুর রহমান মিঠু চাচাই আমার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট।
পাটগ্রামের বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবল দলের ভবিষ্যত পরিকল্পনা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অনেক বড়। রংপুরে একটি বড়োসড়ো ক্রিড়া একাডেমি প্রতিষ্ঠা করার ইচ্ছা রয়েছে। যেখানে কমপক্ষে ৩০০ থেকে ৪০০ জন খেলোয়াড় ক্যাম্পেইন করবে এবং আবাসিক ব্যবস্থা থাকবে। ঢাকায় জাতীয় দলের মূল টিমে খেলছে মৌসুমী, রত্না, স্বপ্না এবং বিভিন্ন বয়স ভিত্তিক পাইপলাইনে আছে আরও ১২ জন। দিনাজপুর বিকেএসপি অনূর্ধ্ব-১৪ তে ৯ জন আছে। বিভিন্ন ক্লাবের প্রিমিয়ার খেলছে আরও ১৭ জন । আমার প্রত্যেকটি খেলোয়াড় প্রতিভাবান এবং তাদের প্রতিভার বিকাশ ঘটানোর জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম প্র্যাকটিস করে থাক। তাই এক একটি প্লেয়ার’র পজিশন অনুযায়ী পারদর্শিতা একেক একেক রকম হয়ে থাকে। প্রশিক্ষক স্মার্ট এবং তুখর হলেই খেলোয়াড়রা অটোমেটিক্যালি পারদর্শী  হয়ে যায়। স্বপ্ন লালন করি বাংলাদেশের ফুটবল উন্নয়নের জন্য।
সরকার জাতীয় ক্রীড়া সংস্থা বিকেএসপি’র দায়িত্ব দিলে ক্রীড়াঙ্গনে আপনার অবদান কী হতে পারে এমন প্রশ্নের তিনি জানান, ১৪ বছর বয়সে খেলা শুরু করেছি। এখন ৩৯ বছর বয়স। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র সাথে দেখা হয়েছে একাধিকবার, নিয়েছি পুরস্কারও। তিনি চাইলে বিকেএসপি কিংবা জাতীয় দলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব দিলে আমার ভাগ্যের পরিবর্তন নয়, মুখ থুবড়ে পড়া ক্রীড়াঙ্গন ও দেশের অবহেলিত ও প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের ভাগ্য এবং গতির পরিবর্তন করে বিশ্বমানের খেলোয়াড় তৈরীর জন্য সর্বদা কাজ করে যাবো। আমি এমন স্বপ্ন মনে লালন করি। কেনোনা বাংলাদেশের ফুটবলের যে দৈন্যদশা তাতে করে আমি দায়িত্ব পেলে বাকী জীবন এই ফুটবলকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার জন্য সবকিছু দিয়ে চেষ্টা করে যাবো।
এবারও রংপুর বিভাগের হয়ে লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবল দল বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। খেলোয়াড়দের দক্ষতা ও বুদ্ধিমত্তার জোরে দু’টি  চ্যাম্পিয়ন ট্রপি ছিনিয়ে আনবে ক্ষুদে খেলোয়াড়রা এমন প্রত্যাশা করি।
পাটগ্রামের বঙ্গমাতা দল বি.কে সপ্রাবি ২০১৬ সালে জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন ও ২০১৮ সালে জাতীয় পর্যায়ে  রানার্স আপ হয়েছে। ২০১৯ সালে বিভাগীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ২০২০ সালের মার্চ-এপ্রিলে ঢাকায় জাতীয় পর্যায়ে খেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে তা স্থগিত হয়ে যায়। বঙ্গমাতা ফুটবল টিম উপজেলার পাটগ্রাম ইউনিয়নের বি.কে সপ্রাবি প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ এবং বঙ্গবন্ধু ফুটবল টিম উপজেলার জগতবেড় ইউনিয়নের ছিচারপাড় সপ্রাবি প্রধান শিক্ষক আলী ইয়ার জং স্ব-উদ্যোগে নিজস্ব খরচে কোচ আলিম আল সাঈদ খোকনকে দিয়ে স্কুলের শিক্ষার্থীদের বছর ভিত্তিক চুক্তিতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা  ইতোমধ্যে শুরু করেছেন। এদিকে, সাঈদ খোকন এখন লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলাতে অনুর্ধ-১৭  তে প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন।
সাঈদ খোকনকে একজন সফল কোচ হিসেবে মূল্যায়ন এবং অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন মোস্তাইন বিল্লাহ। যিনি বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক। পাশাপাশি উপসচিব প্রিয় সিন্ধু তালুকদার, লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর, উপ-পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ তালুকদার, পরিচালক এস এম আলী রেজা, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল করিমসহ ( হরিপুর -ঠাকুরগাঁও) অনেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাকে উৎসাহ দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
কোচ আলিম আল সাঈদ খোকনের দাদা মরহুম আব্দুস সামাদ দেওয়ানী ছিলেন একজন সম্মানী ব্যক্তি । তাঁর বাবা আব্দুল খালেক চাকুরিজীবি। মা মোছাম্মদ কল্পনা বেগম গৃহিণী। দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। তার স্ত্রীর নাম জান্নাতুল ফেরদৌসী রিম্পা। যিনি ফুটবল খেলা ও খেলোয়াড় তৈরীর কাজে খোকনকে সবসময় সমর্থন দেন এবং অনেক উৎসাহ দিয়ে থাকেন। ৬ বছরের এক ছেলে রেদোয়ান আহমেদ এবং সদ্য জন্ম নেয়া এক কন্যা সন্তান হুমায়রা নুর নিসাকে নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
তবে আলিম আল সাঈদ খোকন কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে পাটগ্রাম উপজেলা তথা উত্তরাঞ্চলের জন্য যে কাজ করে গেছেন এবং এখনও করে যাচ্ছেন তাতে করে তার অবদানের প্রকৃত মূল্যায়ন সরকার যদি করে তাহলে হয়ত বাংলাদেশের ফুটবল অঙ্গন  আরও উজ্জল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাবে। তাই ক্রীড়াপ্রেমী, শুভাকাঙ্খী ও বিশ্লেষকরা মনে করেন, কোচ হিসেবে সাঈদ খোকন তার মেধা, দক্ষতা এবং কৌশল দিয়ে যেভাবে একের পর এক সফলতা অর্জন করেছেন তাতে করে বাংলাদেশের মূল ফুটবল দলে তার অবদান রাখার জন্য কিছু রয়েছে।
Like
Like Love Haha Wow Sad Angry
1

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *