কিংবদন্তি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় মারা গেছেন
বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় মারা গেছেন। স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ৬ অক্টোবর থেকে বেলভিউ নার্সিংহোমে ভর্তি ছিলেন সৌমিত্র। ১৪ অক্টোবর করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট আসে তার, শারীরিক অবস্থারও উন্নতি হয়। তবে ২৫ তারিখ হাসপাতাল জানিয়ে দেয়, ভালো নেই সৌমিত্র। জ্ঞান নেই, চেতনাস্তর নীচে নেমে গিয়েছে। এরপর কিডনি খারাপ হতে শুরু করে, ডায়ালিসিস হয়, হয় প্লাজমা থেরাপি। কিন্তু করোনার জেরে কো-মর্বিডিটি কাটিয়ে উঠতে পারেননি তিনি।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সর্বপ্রথম কাজ করেন সত্যজিৎ রায়ের অপুর সংসার ছবিতে। ১৯৫৯ সালে ছবিটি নির্মিত হয়। তার আগে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় রেডিওর ঘোষক ছিলেন এবং মঞ্চে অভিনয় করতেন। ধীরে ধীরে তিনি সত্যজিৎ রায়ের সবচেয়ে পছন্দের অভিনেতা হয়ে উঠেছিলেন। তিনি সত্যজিৎ রায়ের সর্বাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন। মোট ১৪টি ছবিতে অভিনয় করার জন্য তাকে নিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়। তিনি সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় সোনার কেল্লা এবং জয় বাবা ফেলুনাথ ছবি দুটিতে ফেলুদার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন।
সত্যজিৎ রায় ছাড়াও তিনি মৃণাল সেন, তপন সিংহ, অজয় কর, তরুণ মজুমদার, ঋতুপর্ণ ঘোষ, গৌতম ঘোষসহ বহু বিখ্যাত পরিচালকের ছবিতে অভিনয় করেছেন। তার বিপরীতে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সুচিত্রা সেন, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, মাধবী চক্রবর্তী, শর্মিলা ঠাকুর, অপর্ণা সেন, সুমিত্রা মুখার্জি ওয়াহিদা রহমান তনুজাসহ বিশিষ্ট অভিনেত্রীরা। বেশ কয়েকটি ছবিতে তিনি উত্তম কুমারের সঙ্গে অভিনয় করেছেন। সেইসব ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ঝিন্দের বন্দী, স্ত্রী, অপরিচিত, যদি জানতেম। তার উল্লেখযোগ্য ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে সাত পাকে বাঁধা, চারুলতা, আকাশকুসুম, কোনি, গণদেবতা, সংসার সীমান্তে, অরণ্যের দিনরাত্রি অশনি সংকেত তিন ভুবনের পারে প্রভৃতি।
সিনেমা ছাড়াও তিনি বহু নাটক যাত্রা এবং টিভি ধারাবাহিক অভিনয় করেছেন। অভিনয় ছাড়া তিনি নাটক ও কবিতা লিখেছেন, নাটক পরিচালনা করেছেন। তাঁর অভিনীত নির্দেশিত নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছেন-ফেরা, নাম জীবন, নীলকণ্ঠ, রাজকুমার। তিনি একজন খুব উচ্চমানের আবৃত্তিকারও। তিনি ২০০৪ সালে পদ্মভূষণ,২০১২ সালে দাদাসাহেব ফালকে পান। ২০১৭ সালে তাকে ফ্রান্স সরকার লিজিয়ন অব অনার দিয়েছে।
সূত্র: কলকাতা২৪