র্যাপ গায়িকা মেলানিয়া ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেন যেভাবে
পুরো নাম মেলানিয়া জর্জিয়াস। অত্যধিক পরিচিত ওনি ডিয়ামস নামেই । ছিলেন ফ্রান্সের প্রথম র্যাপ গায়িকা। ১৯৯৯ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে প্রায় চার মিলিয়ন এ্যালবাম বিক্রি হয়েছিল তাঁর। ২০০৮ সালে ইসলাম গ্রহণ করেন তিনি। পরবর্তী সময়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলে ইসলাম গ্রহণের কারণ ব্যাখ্যা করেন। তাঁর সেই বক্তব্যের চুম্বকাংশ তুলে ধরা হলো। ২০০৭ সালে তাঁর একক বেশ কিছু অ্যালবাম প্রচুর জনপ্রিয়তা পায়।
কিন্তু এত সাফল্য ও সুখকর জীবন সত্ত্বেও তিনি ভীষণ উৎকণ্ঠা ও গভীর উদ্বেগ বোধ করছিলেন। খুঁজে ফিরছিলেন সুখ নামের ‘সোনার হরিণ’। সুখের সন্ধান করতে গিয়ে খুঁজে পান ইসলাম। অর্থবিত্ত, সাফল্য ও প্রভাব-প্রতিপত্তি—সব ছিল তাঁর জীবনে।
তিনি বলেন, অর্থ, সাফল্য ও শক্তি আমাকে খুশি-সুখী করতে পারেনি। সুখের সন্ধানে আমি অস্থির ছিলাম। আমি অনেক বেশি দুঃখ ভারাক্রান্ত ছিলাম। নিজেকে খুব একাকী ও নিঃসঙ্গ অনুভূত হতো। আমি জানতাম না, আল্লাহর সঙ্গে আমার কথা বলতে হবে। আমি যখন কোনো সুখের বিষয় কিংবা দুঃখের বিষয়ের মুখোমুখি হই তখন আল্লাহ আমার দোয়া-প্রার্থনা শোনেন। যেদিন হিজাব পরিহিত তাঁর ছবি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়, সেই দিনটি কেমন ছিল সে সম্পর্কে জর্জিয়াস বলেন, ফরাসিদের জন্য এটি একটি বড় ধাক্কা ছিল। আমি কিভাবে এত পরিবর্তিত হলাম, এটি ভেবে তারা অবাক হয়েছিল। বাস্তবেই হিজাব তাদের কাছে অস্বাভাবিক একটি বিষয়। কারণ তারা শুধু আমাকে একজন গায়িকা হিসেবেই দেখে।
সৌদি আরবের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম আরব নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাবেক এই ফরাসি গায়িকা জানান, ইসলাম গ্রহণের পর প্রথম প্রথম তিনি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে খুব বেশি কথা বলতেন না। কারণ তখন কী বলতে হবে, তা তিনি জানতেন না। তিনি বলেন, আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে যখন আমার আল্লাহর অস্তিত্বের প্রতি বিশ্বাস তৈরি হলো, তখনো আমি একজন খ্রিস্টান ছিলাম। উপরন্তু আমি জানতাম না আমার কী করণীয়।
তিনি বলেন, এসব জিনিস, অর্থ, সাফল্য ও শক্তি আমাকে সুখ ও আনন্দ দিতে পারেনি। আমি সুখের সন্ধান করছিলাম। আমি খুব, খুব দুঃখ ভারাক্রান্ত ছিলাম। শত মানুষের মাঝেও নিঃসঙ্গ ও একা ছিলাম। ২০০৮ সালে তাঁর দুটি সংগীত সর্বাধিক বিক্রি হয়। এটি তাঁর অন্যতম সফল বছর। এ বছর তিনি সেরা ফরাসি শিল্পী হিসেবে এমটিভি ইউরোপীয় সংগীত পুরস্কার লাভ করেন। পাশাপাশি সেরা শিল্পী, সেরা অ্যালবাম ও সেরা সংগীত ইত্যাদি ক্যাটাগরিতে এনআরজেড মিউজিক অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হন।
জর্জিয়াসের জীবনে পরিবর্তন আসে তাঁর সৌসৌ নামের এক বান্ধবীর মাধ্যমে। যখন জর্জিয়াস তাঁর বাড়িতে বেড়াতে যান তখন তাঁর জীবনে দারুণ একটা প্রভাব পড়ে। সেই সময় সৌসৌ জর্জিয়াসকে অনুরোধ করেন, সন্ধ্যায় কয়েক মিনিটের জন্য নামাজ পড়তে যেতে। তখন জর্জিয়াস হঠাৎ করেই তাঁর বন্ধুর সঙ্গে প্রার্থনায় যোগ দেন। মুসলমানরা কিভাবে নামাজ আদায় করে, তা জর্জিয়াসের জানা ছিল না।
এর পরও তিনি সৌসৌকে অনুসরণ করে ইবাদত করেন এবং জীবনে প্রথমবারের মতো আল্লাহর সামনে সিজদা করেন। তিনি বলেন, আমি যখন তার সঙ্গে নামাজ পড়লাম তখন আল্লাহর সঙ্গে অলৌকিক যোগাযোগ অনুভব করেছি। আমি পুরোপুরি নিশ্চিত হয়েছি যে নিশ্চয় আল্লাহর অস্তিত্ব রয়েছে। আমি যখন নিজে নিজে সিজদা করলাম তখন আমি প্রভুর সঙ্গে আমার সম্পর্ক অনুভব করি। এ ছাড়া আমি যত বেশি কোরআন পড়ি আমার বিশ্বাস তত পোক্ত হয়।
জর্জিয়াসের বন্ধু এর পরই তাঁকে পবিত্র কোরআনের একটি কপি উপহার দিয়েছিলেন। মরিশাস ভ্রমণের সময় জর্জিয়াস এটি পড়তে শুরু করেন। জর্জিয়াস বলেন, এটি একটি প্রত্যাদেশ ছিল। আমি গভীরভাবে নিশ্চিত হয়েছি যে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব রয়েছে। আমি যত বেশি পড়ছিলাম তত বেশি দৃঢ়প্রত্যয়ী হয়ে উঠি। ততক্ষণে আমি এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করি। তবে আমি মনে মনে খ্রিস্টান ছিলাম। তখন দুঃখ ও কষ্টে ভুগছিলাম। মূলত এভাবেই একসময় ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তিনি ২০০৮ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।