ঝলমলে সোনালী সকালের জন্য নিরন্তর কর্মমুখর শায়খ আহমাদুল্লাহ
শায়খ আহমাদুল্লাহ। বাংলাদেশে যেসব ইসলামিক স্কলার প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা, সাম্য, ন্যায়বিচারের চিন্তাকে সামনে রেখে সমাজকে বিনির্মাণ করতে চান, তাদের মধ্যে অগ্রগন্য তিনি । ইতোমধ্যে ইসলামের আলোকে তাঁর উদার ও মানবিক বিভিন্ন কর্মকান্ড তরুণ প্রজন্মকে আশার আলো দেখাচ্ছে ।
ক্ষুরধার লেখনি, যৌক্তিক আলোচনা ও অন্তর্ভেদী গবেষণার মাধ্যমে ইসলামের মৌলিক দাওয়াত সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়ার নিরন্তর চেষ্টা করছেন তিনি । শায়খ আহমাদুল্লাহ’র সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো, তিনি ইসলামের আলোকে সমসাময়িক নানা সমস্যার বিশ্লেষণ করে থাকেন, যে প্রবণতা অন্য ইসলামিক স্কলারদের মধ্যে খুব কম দেখা যায় । তিনি শুধু বিশ্লেষণই করেন না, সমাধানের একটি পথও বাতলে দেন। অফলাইনের পাশাপাশি ভার্চুয়াল জগতে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন তিনি।
তাঁর লাইভ প্রোগ্রামগুলোতে অংশ নিচ্ছেন লাখ লাখ শ্রোতা ও দর্শক। যাতে উপকৃত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সহজে তালিম পাচ্ছেন ইসলামের মূল বিষয়গুলোর । বহুধাবিভক্ত মুসলিমদের মাঝে ঐক্যপ্রয়াসী ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছেন শায়খ আহমাদুল্লাহ।
খুব দৃঢ়তার সঙ্গে করে যাচ্ছেন ৩টি কাজ। এক. ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এবং উম্মাহ’র প্রয়োজনকে সামনে রেখে, কোনো দল বা বলয়ের হয়ে নয়। দুই. শুদ্ধ ভাষায় বিনয়ের সঙ্গে সব বিষয়কে উপস্থাপন। তিন. সময়ের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোকে সবার নজরে আনা । শায়খ আহমাদুল্লাহ’র তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে ‘আস সুন্নাহ্ ফাউন্ডেশন’। সারাদেশের ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষ অস্বচ্ছল, দরিদ্র নারী-পুরুষকে স্বনির্ভর করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। আস্ সুন্নাহ্ ফাউন্ডেশন এর মাধ্যমে প্রতি ঈদে অসহায় শিশুদের মুখে হাসি ফোটানোর উদ্যোগ নেন তিনি । প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশুদের হাতে হাতে তুলে দেন ঈদের ঝলমলে নতুন জামা।
এছাড়াও বন্যা, নদী ভাঙন বা প্রাকৃতিক নানা দুর্যোগ-দুর্ঘটনায় সহায়তা নিয়ে অসহায়ের পাশে দাঁড়ায় আস্ সুন্নাহ ফাউন্ডেশন। ১৯৮১ সালের ১৫ ডিসেম্বর লক্ষীপুরে জন্ম শায়খ আহমাদুল্লাহ’র । কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড (বেফাক) থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) শেষ করার পর খুলনা দারুল উলুম থেকে ইফতা (মুফতি) সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি মনোযোগী হন গবেষণায় । লেখাপড়া সম্পন্ন করে তিনি মিরপুরের দারুর রাশাদে শিক্ষকতায় যোগ দেন। ২০০৩ সাল থেকে ০৯ সাল পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন। ১ বছর মিরপুরের আরজাবাদ মাদরাসাতেও শিক্ষকতা করেন। পাশাপাশি ২০০৪ সাল থেকে ০৯ সাল পর্যন্ত ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করেন মিরপুরের বায়তুল ফালাহ জামে মসজিদে। ২০০৯ সালে । সুযোগ আসে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কাজ করার। বাংলার পাশাপাশি আরবি ভাষায় দক্ষতার কারণে ডাক পড়ে মধ্যপ্রাচ্যে।
ইসলামের জন্মভূমি সৌদি আরবের পশ্চিম দাম্মাম দাওয়াহ সেন্টারে যোগ দেন। একজন দাঈ ও অনুবাদক হিসেবে সেখানে দীর্ঘ ৯ বছর কাজ করেন। তাঁর দাওয়াতি কাজ মুগ্ধ করে আরবি অনারাবি সব মানুষকে। একাগ্রতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে তিনি নিজের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দ্বীন প্রচারে অসামান্য অবদান রাখেন। আরবিদের পাশাপাশি বাংলাদেশিদের হৃদয়ে অর্জন করেন ভালোবাসার অনন্য জায়গা। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ইতোমধ্যেই তিনি জাপান, ভারত, আরব আমিরাত ও সৌদি আরবের একাধিক আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন।
এ পর্যন্ত দাওয়াহ ও গবেষণা বিষয়ে শতাধিক প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখেছেন। বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমগুলোতে তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে। আরবি ভাষাতেও প্রকাশিত হয়েছে তাঁর অসংখ্য প্রবন্ধ। একজন দাঈ হিসেবে নিজেকে যথার্থভাবেই মেলে ধরেছেন তিনি। শায়খ আহমাদুল্লাহ বর্তমানে নারায়নগঞ্জের ভূমিপল্লী জামে মসজিদের খতিব। পাশাপাশি ভূমিপল্লীর একটি মাদরাসার পরিচালনার সঙ্গেও যুক্ত।
শায়খ আহমাদুল্লাহ স্বপ্ন দেখেন একটি বৈষম্যহীন, ন্যায়বাদী সমাজ বিনির্মাণের। যেখানে থাকবেনা ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অবিচার । ইসলামের আলোকে যে নীতিভিত্তিক সমাজ কায়েম করেছিলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ রাসূল হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লেললাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নেই নিজেকে নিরন্তর নিবেদন করেছেন তিনি । শায়খ আহমদুল্লাহ’র সেই স্বপ্ন নোঙর করুক রাসূলপ্রেমী অগণিত মানুষের এই বদ্বীপে।