fbpx
হোম অনুসন্ধান চিকিৎসা দিতে অনীহার কারণে মৃত্যু হলে ফৌজদারি অপরাধ-হাইকোর্ট
চিকিৎসা দিতে অনীহার কারণে মৃত্যু হলে ফৌজদারি অপরাধ-হাইকোর্ট

চিকিৎসা দিতে অনীহার কারণে মৃত্যু হলে ফৌজদারি অপরাধ-হাইকোর্ট

0

কোনো সরকারি কিংবা বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে আসা গুরুতর রোগীদের চিকিৎসা দিতে অনীহা দেখালে এবং এতে করে ওই রোগীর মৃত্যু হলে তা অবহেলাজনিত মৃত্যু হিসেবে বিবেচিত অর্থাৎ ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। একই সঙ্গে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা  নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। গতকাল সাধারণ  রোগীদের চিকিৎসা সংক্রান্ত রিট আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশসহ ১০ দফা নির্দেশনা ও অভিমত দিয়েছেন। একইসঙ্গে গত ১১ই মে দেশের সব হাসপাতাল ও ক্লিনিকে আসা  রোগীদের ফেরত না পাঠিয়ে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে যে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে তা বাস্তবায়নে কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তাও জানতে  চেয়েছেন আদালত।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট জামিউল হক ফয়সাল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমান, অ্যাডভোকেট এএম জামিউল হক,  মো. নাজমুল হুদা, মোহাম্মাদ মেহেদী হাসান।
আদালতের ১০ দফা নির্দেশনা হচ্ছে
১. স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত নির্দেশনাসমূহ যথাযথভাবে পালিত হচ্ছে কিনা এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন আগামী ৩০ জুনের আগে আদালতে দাখিলের জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য ও সেবা বিভাগের সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ  দেওয়া হয়েছে।
২. স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জারি করা নির্দেশনাসমূহ পালনে ব্যর্থ ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত কোনো ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে কিনা প্রতিবেদনে তা উল্লেখ করতে বলা হয়েছে।
৩. স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক গত ২৪শে মে  জারিকৃত নির্দেশনা অনুসারে ওই তারিখের পর থেকে ৫০ শয্যার অধিক বেসরকারি হাসপাতাল এবং ক্লিনিকসমূহ চলতি মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত কতজন কোভিড-নন কোভিড  রোগীকে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে  সে সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন জমা  দেয়ার জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া ৫০ শয্যার অধিক হাসপাতাল ও ক্লিনিক সমূহের একটি তালিকা প্রেরণ করতেও বলা হয়েছে।
৪. বর্তমান প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনাসমূহ বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ যথাযথভাবে পালন করছে কিনা, সে বিষয়ে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহের কর্তৃপক্ষকে ১৫ দিন পরপর একটি প্রতিবেদন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে প্রেরণ করার নির্দেশ  দেয়া হয়েছে। প্রেরিত ঐ সব প্রতিবেদন আবার আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।
৫. বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক সমূহের বিশেষত ঢাকা মহানগর ও  জেলা, চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা সহ বিভাগীয় শহরের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ যাতে  কোভিড, নন-কোভিডসহ সকল  রোগীকে পরিপূর্ণ চিকিৎসাসেবা প্রদান করেন সে বিষয়ে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের জন্য একটি মনিটরিং  সেল গঠনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
৬. কোনো সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ কোনো  রোগীকে চিকিৎসাসেবা প্রদানে অনীহা দেখালে এবং এতে করে ওই  রোগীর মৃত্যু ঘটলে তা অবহেলাজনিত মৃত্যু হিসেবে বিবেচিত অর্থাৎ ফোজদারি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার জন্য প্রদত্ত নির্দেশনা যথাযথভাবে দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয়া হয়।
৭. স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক  কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমকে  অধিকতর জবাবদিহিমূলক ও বিস্তৃত করতে হবে। ভুক্তভোগীরা যাতে এ সেবা দ্রুত ও সহজভাবে পেতে পারেন তা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো হাসপাতালের আইসিইউতে কতজন  রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং কতটি আইসিও শয্যা কী অবস্থায় আছে তার আপডেট প্রতিদিনের প্রচারিত স্বাস্থ্য বুলেটিন এবং অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ ও প্রচারের ব্যবস্থা নিতে হবে। আইসিইউ ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং  সেলে ভুক্তভোগীরা যাতে সহজেই  যোগাযোগ করতে পারে সে জন্য পৃথকভাবে আইসিইউ হটলাইন নামে পৃথক হটলাইন চালু এবং হটলাইন নাম্বারগুলো প্রতিদিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা নিতে হবে।

৮. আইসিইউ-এ  চিকিৎসাধীন  কোভিড-১৯ রোগী চিকিৎসার ক্ষেত্রে  বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ মাত্রাতিরিক্ত বা অযৌক্তিক ফি আদায় না করতে পারে  সে বিষয়ে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
৯. অক্সিজেন সিলিন্ডারের খুচরা মূল্য এবং রিফিলের মূল্য নির্ধারণ করে দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ  দেয়া হচ্ছে। খুচরা বিক্রেতাদের সিলিন্ডারের নির্ধারিত মূল্য প্রতিষ্ঠানে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে। কৃত্রিম সংকট রোধে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র এবং রোগীর পরিচয়পত্র ব্যতীত অক্সিজেন সিলিন্ডারের খুচরা বিক্রয় বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করতে পারে। অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ ও বিক্রয় ব্যবস্থা মনিটরিং  জোরদার করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেয়া যাচ্ছে।
১০. সরকার রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে কোভিড রোগীর সংখ্যা বিবেচনায়  লাল, হলুদ ও সবুজ জোনে বিভক্ত করে পর্যায়ক্রমে লকডাউনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে। এমতাবস্থায় লকডাউন বিষয়ে কোনো আদেশ দেওয়া সঙ্গত হবে না মর্মে আদালত মনে করে।
উল্লেখ্য,  গত ১৩ জুন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনের আলোকে দেশের সব হাসপাতাল ও ক্লিনিক থেকে সাধারণ রোগীদের ফিরিয়ে না দিয়ে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদনটি করা হয়। রিটে রোগীদের চিকিৎসা না দিয়ে হাসপাতাল থেকে  ফেরত দেয়ার ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ও বেআইনি  ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়।

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *