নেপালেও করোনা ভয়াবহ; বাংলাদেশে বাড়ছে শঙ্কা !
নেপালে করোনায় সর্বোচ্চ সংক্রমণ ছিল গত বছর অক্টোবর মাসে। এ বছরের মার্চে এসে দৈনিক শনাক্ত ১০০ জনের নিচে নেমে যায়। তবে তা স্থায়ী হতে পারেনি বেশিদিন। মাত্র ১৫ দিনের মাথায় হঠাৎ করেই আবার চূড়ার দিকে উঠতে থাকে দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা ও হার।
গত ৫ মে শনাক্ত ছিল আট হাজার ৬০৫ জন। মারা যায় ৫৬ জন। শনাক্তের হার ৪০ শতাংশের ওপরে। এখন পর্যন্ত মোট শনাক্ত তিন লাখ ৬০ হাজারের বেশি, আর মারা গেছে সাড়ে তিন হাজার।
কাছের দেশটিতে শনাক্ত ১০০ জনের নিচে নেমে গিয়েও কেন মাত্র দু-তিন সপ্তাহের ব্যবধানে আবার তা আগের চেয়েও দ্রুতগতিতে চূড়ায় উঠছে, তা নিয়ে বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞদের মধ্যেও উদ্বেগ তৈরি করেছে। ব্যাপক যোগাযোগের কারণে ভারত থেকে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভেরিয়েন্ট ঢুকে পড়ার কারণেই নেপাল এই দশায় পড়েছে বলে অনেকের ধারণা।
বাংলাদেশেও ভারতীয় ভেরিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়লে নেপালের মতো পরিণতি হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ওড়িশা ও বিহারে নতুন করে সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ায় তা নিয়ে দেশে উৎকণ্ঠা আরো বাড়ছে।
ভারত থেকে যাতে দেশে সংক্রমণ ছড়াতে না পারে, সে জন্য ২৬ এপ্রিল থেকে বাংলাদেশও ভারতের সঙ্গে স্থলপথে যাতায়াত বন্ধ করেছে। তবে বিভিন্ন পণ্যবাহী পরিবহনে আমদানি-রপ্তানি চালু থাকায় পরিবহন শ্রমিকদের মাধ্যমে দেশে ভারতীয় ভেরিয়েন্ট ঢোকার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন বলেন, নেপালে এমন বিপর্যয় প্রতিবেশী দেশ ভারতের সংক্রমণের প্রভাব। করোনার ভারতীয় ভেরিয়েন্ট অবাধে নেপালে ছাড়ানোর সুযোগ পেয়েছে বলেই এমন দুরবস্থার কবলে পড়েছে দেশটি। এ ক্ষেত্রে নেপাল থেকে ভারতে অবাধে যাতায়াত, ভারতে কাজ করা নেপালি শ্রমিকদের বাড়ি ফেরার বিষয়গুলোও রয়েছে।
বলেন, নেপালের বিষয়টি আমাদের জন্য দৃষ্টান্ত। যদিও আমাদের সীমান্ত এখন কড়াকড়িভাবেই বন্ধ করা আছে। যারা ফিরছে তাদের কোয়ারেন্টিনও যথাযথভাবেই হচ্ছে। তাদের কারো মাধ্যমে দেশে ভারতীয় ভেরিয়েন্ট ছড়ানোর প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে পাওয়া গেলে তা অবাক করার বিষয় হবে না। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর বলেন, যারা অসতর্কভাবে চলাফেরা করেন, তাদের নেপালের পরিস্থিতি দেখা দরকার। ভারতীয় ভেরিয়েন্ট ঢুকেছে বলে হয়তো নেপালে করোনার বিস্তার দ্রুত ঘটেছে। এই বিজ্ঞানী বলেন, আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত ভারতীয় ভেরিয়েন্ট এসেছে কি না তা আমাদের জানা নেই। তবে ভেরিয়েন্ট নিয়ে সাধারণ মানুষের বেশি ভাবনার দরকার নেই; এগুলো গবেষকরা ভাবলেই চলবে।
সাধারণ মানুষের কেবল তিনটি কাজ করলেই সুরক্ষা মিলবে—সেটা যে ভেরিয়েন্টের করোনাভাইরাসই হোক না কেন। এই কাজ তিনটি হচ্ছে সঠিকভাবে মাস্ক ব্যবহার, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা ও স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন এবং টিকা নেওয়া। এই তিনটি যেকোনো ভেরিয়েন্ট থেকেই এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সুরক্ষা পদ্ধতি বলে প্রমাণিত।
ড. আলমগীর বলেন, যেকোনো দেশেই যেকোনো সময় নিত্যনতুন ভেরিয়েন্ট তৈরি হতে পারে। আমাদের দেশেও তো মিউটেশন হচ্ছে। এর মধ্যে যেকোনো সময় কোনো একটি মিউটেশন হয়তো ভারতীয় বা আফ্রিকান ভেরিয়েন্টের চেয়ে ভয়ানক হতে পারে।