বিনা বেতনে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের শেষ আকুতি
২০০২ সালে শিক্ষকতা পেশা থেকে অবসর নেন আব্দুল মান্নান (৮৩)। পুরো চাকরি জীবনে পাননি বেতন পাওয়ার আনন্দ। বিনা বেতনেই শিক্ষকতা করেছেন পুরোটা সময়।
১৮ বছর আগে আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর নিলেও আজ অবধি রোজ মাদরাসায় আসেন তিনি। করোনাকালীন সময়ে বন্ধ রয়েছে সারাদেশের ন্যায় মাদারাসাটিও তবুও আব্দুল মান্নান মাস্টার থেমে নেই।
১৯৬৫ সালে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের চিথলিয়া গ্রামে একমাত্র ফুরকানীয়া মাদরাসা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা ‘চিথলিয়া ফুরকানীয়া মাদরাসা’। প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষক হিসেবে ওই মাদ্রাসায় যোগদান করেন আব্দুল মান্নান। সেখান থেকেই শুরু হয় আব্দুল মান্নানের শিক্ষকতা জীবন।
১৯৭৭ সালে চিথলিয়া ফুরকানীয়া মাদরাসাটি এবতেদায়ী মাদরাসা হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে। আব্দুল মান্নান ক্বারী শিক্ষক হিসেবে বেশ সুনামের সঙ্গে চাকরি করেন। ২০০২ সালে তিনি শিক্ষক ওই মাদ্রাসা থেকে অবসর নেন। এরপর ২০০৩ সালে চিথলিয়া মাদরাসাটি দাখিল মাদরাসা হিসেবে অনুমতি এবং ২০০৬ সালে মাদরাসাটি স্বীকৃতি পায়।
২০০২ সালে শিক্ষকতা থেকে আব্দুল মান্নান অবসর নিলেও মাদরাসাটির মায়া ছাড়তে পারেননি তিনি। বর্তমানে তিনি ওই মাদ্রাসার সভাপতির দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ক্লাস নেন খণ্ডকালীন। বেতন ভাতা কিছুই চাননা তিনি। দীর্ঘদিনের কর্মস্থলেই অবসর সময়টা কাটাতে চান। শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে আনন্দ পান তিনি।
তিন ছেলে ও পাঁচ মেয়ের জনক শিক্ষক আব্দুল মান্নান। ছেলে-মেয়েরা এখন সবাই প্রতিষ্ঠিত। শিক্ষক আব্দুল মান্নান মাদরাসা প্রাঙ্গনের মসজিদেই রাত কাটান। সারাদিন থাকেন মাদরাসায়।
আব্দুল মান্নান জানান, বয়স হয়েছে, লাঠি ছাড়া চলতে পারি না। বাড়িতে যাবো, আবার মাদরাসায় আসবো এতে বেশ সমস্যা হয়। তাই সারাক্ষণ মাদরাসাতেই থাকি। সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলাম এই মাদরাসায়। ১৯৬০ সালে আলীম পাস করে পরবর্তীতে আমরা এই মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করি। বিনা বেতনে চাকরি জীবন শেষ করলাম। অবশেষে মাদ্রাসা শিক্ষকরা এখন বেতন পায়। এতেই আমি খুশি। আমার জীবন বিনা বেতনে শেষ হলেও এখনকার শিক্ষকরা তো পাচ্ছেন। নিজ হাতে তৈরি করা মাদরাসার মায়া ছাড়তে পারিনা।
তিনি বলেন, এখনো শিক্ষার্থীরা অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করে। তাদের পর্যাপ্ত বসার স্থান নাই। বৃষ্টি হলে টিনের চালা দিয়ে পানি পড়ে। একটা ভবন হলে খুবই ভালো হয়। একদিন সেটাও হবে।
চিথলিয়া মাদরাসার সুপার (ভারপ্রাপ্ত) মওলানা তমিজ উদ্দিন জানান, শিক্ষক আব্দুল মান্নান খুবই পরিশ্রমী। তিনি শিক্ষার্থীদের খুব সুন্দর করে পাঠদান করেন। বৃদ্ধ বয়সেও প্রতিদিন মাদরাসায় আসেন। তিনি চাকরি জীবনে বিনা বেতনেই ২০০২ সালে অবসর নেন। কিন্তু চাকরির মতো করেই নিয়মিত এসে ক্লাস নেন। আমরা তাকে অবসর দিলেও তিনি অবসর মনে করেন না।