আগামীকাল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনের চ্যালেঞ্জিং বিষয় হলো শেষ পর্যন্ত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে টিকে থাকা। বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা কর্মীদের দৃঢ় বিশ্বাস, ফ্রন্টের আহবায়ক ড. কামাল হোসেন ৩০ ডিসেম্বর তার আসল ম্যাজিক দেখাবেন! এই ফ্রন্টটি গঠন হবার সময় যেসবব লক্ষ্য স্থির করা হয়েছিল, তার মধ্যে অন্যতম হলো ড. কামাল হোসেনের আন্তর্জাতিক অবস্থান ও পরিচিতিকে ব্যবহার করা। ব্যক্তিগত ক্যারিয়ারের কারণে তার আন্তর্জাতিক লবিং উচ্চমানের বলে দেশবাসী বিশ্বাস করে। বিএনপি নেতাদের বিশ্বাস, ড. কামাল তার আন্তর্জাতিক লবিংকে পুরোপুরি কাজে লাগাবেন ৩০ ডিসেম্বর এবং জনগণ নির্ভয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবে।
ঐক্যফ্রন্ট গঠন হবার সময় পর্দার অন্তরালে যেসব আলাপন গতিশীল ছিল, তার অন্যতম হলো এ নির্বাচনে ড. কামাল তার আন্তর্জাতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে প্রশাসনকে নিরপেক্ষ রাখতে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিবেন। প্রশাসনকে নিরপেক্ষ করার বিষয়ে যতটুকু জানা যায়, ড. কামাল হোসেন জাতিসংঘ ও বিদেশী দূতাবাসের সহায়তায় প্রশাসনকে নিরপেক্ষ করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছেন এবং সেগুলোর কিছু ইতিবাচক ফলও আছে ঐক্যফ্রন্টের জন্য।যতদূর জানান যায়, প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার যেসব তাগাদা বৈদেশিক সংস্থা ও দেশ থেকে দেয়া হচ্ছে সেটার পেছেনে ড. কামাল এর কৃতিত্ব রয়েছে।
আওয়ামী লীগ মনে করে, ঐক্যফ্রন্ট কূটনৈতিক তৎপরতাও কম করেনি। বাংলাদেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের পর্যবেক্ষক এবং আরো বিদেশী পর্যবেক্ষক আসতে না পারাটা ড. কামালের জন্য একটি আঘাত বলে মনে করে সরকার পক্ষ।
তবে গত দু’দিনের কূটনৈতিক তৎপরতা, বিদেশী গণমাধ্যমের ইঙ্গিতবহ প্রতিবেদন আর প্রশাসনের তৎপরতায় দৃষ্টি রাখছে বিশ্লেষকরা। ওয়াশিংটন পোস্ট, দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, দ্য গার্ডিয়ান, টাইম ম্যাগাজিন, ব্লুমবার্গ, ফোর্বস, দ্য হিন্দু, দ্য ইকোনমিক টাইমস, দ্য নেশন, ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল, ডিপ্লোম্যাট, বিবিসি ও আল জাজিরাসহ বিশ্বের প্রভাবশালী প্রায় সকল গণমাধ্যমে প্রতিবেদন, আর্টিকেল ও সাক্ষাৎকার ছাপা হয়েছে বাংলাদেশের নির্বাচন ইস্যুতে। ড. কামাল হোসেন বিদেশী গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সে সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবহিত করার চেষ্টা করেন, নির্বাচনের পরিবেশ কতটা নিরপেক্ষ সে প্রসঙ্গে। সম্প্রতি তিনি একটি বিদেশী গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ভারতের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ব্যহত করা এবং নির্বাচনে পক্ষপাত সুলভ আচরণ করার অভিযোগ উত্থাপন করেন।
ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি নেতারা মনে করেন, ড. কামাল নিজেই একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান আইনজীবি। এ ছাড়া ড. কামাল হোসেনের জামাতা ব্রিটিশ নাগরিক ডেভিড বার্গম্যান একজন প্রভাবশালী লবিস্ট। ঐক্যফ্রন্টের এই শীর্ষ নেতার প্রচেষ্টায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, জাতিসংঘ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য এখনো জোর তাগিদ দিচ্ছে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাথে ২৭ ডিসেম্বর বিকেলে সরাসরি দেখা করেই নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এসেছেন। ঢাকার দূতাবাসগুলো সরাসরি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছে। সবচেয়ে বেশী চেষ্টা চলছে প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করানোর জন্য। তাতে যেমন ভোটারদের ভয়ভীতি কাটবে, ভোটও নিরপেক্ষ হবে বলে মনে করেন ঐক্যফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ।