fbpx
হোম অন্যান্য চন্দ্রপাহাড় ঘিরে রিসোর্ট নির্মাণে অসন্তোষ ম্রো সম্প্রদায়
চন্দ্রপাহাড় ঘিরে রিসোর্ট নির্মাণে অসন্তোষ ম্রো সম্প্রদায়

চন্দ্রপাহাড় ঘিরে রিসোর্ট নির্মাণে অসন্তোষ ম্রো সম্প্রদায়

0

বান্দরবানের চন্দ্রপাহাড়কে প্রকৃতি যেন তার আপন হাতের সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ করেছে। এই পাহাড়ে দাঁড়ালে দেখা যায় উপরে বিস্তৃত নীল আকাশ আর নিচে সবুজের গালিচা। অপরুপ দৃশ্যে চোখ জুড়িয়ে যায়।

দৃষ্টি নন্দন এই পাহাড়ে আন্তর্জাতিক মানের রিসোর্ট নির্মাণ হলে তা এই এলাকার উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে আরো বেগবান করবে। যথাযথ পরিকল্পনা করে এই এলাকার পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন করতে পারলে দেশীয় পর্যটকদের সাথে পাশ্ববর্তী দেশ সমূহ হতে প্রচুর পর্যটক’র আগমন ঘটবে। একই সাথে স্থানীয় ম্রো সম্প্রদায়ের জনগনও এর সুফল ভোগ করবে। তারা তাদের উৎপাদিত পণ্য ন্যায্যমূল্যে আগত পর্যটকদের নিকট বিত্রিু করে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করতে পারবে।

বান্দরবান জেলার পর্যটন শিল্প বিকাশ ও স্থানীয় ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে অত্র জেলার চন্দ্রপাহাড়ে একটি বিশ্বমানের রিসোর্ট নির্মাণের জন্য আর এন্ড আর হোল্ডিং লিমিটেড এবং আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাষ্টের প্রতিনিধি হিসেবে সদর দপ্তর ৬৯ পদাতিক ব্রিগেড এর মধ্যে গত ১২ জুন ২০১৬ তারিখে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

উল্লেখ্য বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ ২০.০০ (বিশ) একর ৩য় শ্রেণীর জমি পর্যটন কার্যক্রম গ্রহণ ও পরিচালনার নিমিত্তে বান্দরবান সেনা রিজিয়ন এর অনুকূলে লিজ প্রদানের উদ্দেশ্যে গত ২৭ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে বান্দরবান জেলা পরিষদ চুক্তিবদ্ধ হয়। উক্ত চুক্তিতে বর্তমান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা স্বাক্ষর করেন। চুক্তি অনুযায়ী স্থাপনা নির্মাণ ও সংশ্লিষ্ট ভূমি উন্নয়নে পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোন কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে না বলে উল্লেখ করা হয়।

পর্যটন শিল্প বিকাশে জনস্বার্থ পরিপন্থী কোন ধরনের স্থাপনা নির্মাণ এবং স্থানীয় উপজাতীদের জীবন-যাপন ও আচরণ বিঘ্নিত করে, এরূপ কার্যক্রম চুক্তির আওতাভূক্ত করা হয়নি বলেও চুক্তিপত্রে উল্লেখ করা হয়। পর্যটন শিল্প পরিচালনায় ও ব্যবস্থাপনায় জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে স্থানীয়দের অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে এবং বর্তমানে উক্ত স্থানে একটি উন্নতমানের হোটেল নির্মাণের কার্যক্রম চলমান বলেও জানা যায়।

উক্ত জায়গাটিতে কোন রাস্তাঘাট, পানি, বিদ্যুৎ সংযোগ তথা কোন নাগরিক সুবিধা নেই। উক্ত এলাকাতে এমনকি কোন মানুষ বসবাস করে না। ঐ এলাকায় পর্যটন কেন্দ্র স্থাপিত হলে পরিবেশের উপর কোন বিরুপ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই। বর্তমানে চন্দ্রপাহাড় রিসোর্ট প্রকল্প বাস্তবায়নের নিমিত্তে ইতোমধ্যে বৈদ্যুতিক সাব-ষ্টেশন, প্রয়োজনীয় রাস্তাসহ আনুসাঙ্গিক নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে এবং প্রকল্পের মূল কাজ শুরু করার নিমিত্তে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি প্রকল্প এলাকায় সরবরাহ করা হয়েছে।

সরেজমিনে পরিলক্ষিত হয় যে, উক্ত চন্দ্র পাহাড় এলাকায় মাত্র ০৪ (চার) টি ম্রো পাড়া রয়েছে। চন্দ্রপাহাড়ের নিকটবর্তী পাড়াগুলোর নাম যথাক্রমে কাপ্রুপাড়া, দোলাপাড়া, কালাইপাড়া এবং এরাপাড়া। চন্দ্রপাহাড় হতে কাপ্রুপাড়া উত্তর-পশ্চিমে ৩.৫ কিঃমিঃ দূরত্বে অবস্থিত এবং পাড়ায় সর্বমোট ৪৮ টি পরিবারের বসবাস ও মোট জনসংখ্যা ৩২০ জন। চন্দ্রপাহাড় হতে দোলাপাড়া পূর্ব-দক্ষিণে ২.৫ কিঃমিঃ দূরত্বে অবস্থিত এবং পাড়ায় সর্বমোট ২০ টি পরিবারের বসবাস ও মোট জনসংখ্যা ১২০ জন। চন্দ্রপাহাড় হতে কালাইপাড়া পূর্বে ০৫ কিঃমিঃ দূরত্বে অবস্থিত এবং পাড়ায় সর্বমোট ৩৭ টি পরিবারের বসবাস ও মোট জনসংখ্যা ২৫০ জন। চন্দ্রপাহাড় হতে এরাপাড়া উত্তরে ০৫ কিঃমিঃ দূরত্বে অবস্থিত এবং পাড়ায় সর্বমোট ১৯টি পরিবারের বসবাস ও মোট জনসংখ্যা ১২৭ জন। বর্তমানে উক্ত চন্দ্রপাহাড় এলাকায় সর্বমোট ১২৪ টি পরিবারের এবং ৮১৭ জন ম্রো জনগোষ্ঠীর লোকজন বসবাস করছে।

বাংলাদেশের সংবিধান, পার্বত্য চট্রগ্রাম রেগুলেশন ১৯০০, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন ১৯৮৯, পার্বত্য চট্রগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন ২০০১, পার্বত্য শান্তিচুক্তি ১৯৯৭ এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন আইন অনুযায়ী পার্বত্য চট্রগ্রামে ম্রোসহ অন্যান্য প্রথাগত জনগোষ্ঠীর অধিকার চর্চায় বাধা সৃষ্টি করার কোন সুযোগ নেই। সরেজমিনে বর্তমান প্রেক্ষাপট এবং উপরোক্ত দলিলসমূহ পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, উল্লেখিত এলাকায় কোন জাতীগোষ্ঠীর অধিকার চর্চায় বাধা সৃষ্টি করা হয়নি। উপরন্তু উল্লেখিত ২০ (বিশ) একর জায়গা পার্বত্য শান্তিচুক্তি ১৯৯৭ ধারা ৬৪ (ক) মোতাবেক জেলা পরিষদের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যটন শিল্প উন্নয়নে বন্দোবস্তি নেয়া হয়েছে এবং উক্ত জমিটি একটি ৩য় শ্রেণীর হওয়ায়, সেখানে ইতিপূর্বে কোন জনবসতি অথবা খামার ছিল না যা বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকল্পের বিরুদ্ধে প্রচারিত সকল তথ্য সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট প্রমাণ করে বলে সংশ্লিষ্টদের দাবি।

অন্যদিকে ম্রো জনগোষ্ঠীর সদস্যদের নানা ভয়-ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়। ম্রো জনগোষ্ঠী অত্যন্ত নিরীহ ও শান্ত প্রকৃতির। এ প্রেক্ষিতে, প্রশাসন তথা সেনাবাহিনীর পক্ষ হতে কোনরূপ ভয়ভীতি প্রদর্শনের নজির খুঁজে পাওয়া যায়নি। বর্তমানে যে প্রতিবাদগুলো ম্রোদের বলে প্রচার করা হচ্ছে তার সবগুলোই বরং বিভিন্ন কুচক্রী ও স্বার্থান্বেষী মহল কর্তৃক তাদের অসাধু স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ম্রো জনগোষ্ঠীকে ভয়-ভীতি ও হুমকি প্রদর্শনের মাধ্যমে সংগঠিত করেছে বলেও সংশি্লষ্টদের দাবি।

উল্লেখ্য, সেনাবাহিনী ম্রোদের কল্যাণে আলীকদম উপজেলায় একটি মুরং হোস্টেল পরিচালনা করছে। এছাড়াও, জেলা পরিষদের সহায়তায় বান্দরবান সদর উপজেলার সুয়ালক এলাকায় একটি ম্রো হোস্টেলসহ বিশেষ স্কুলের ব্যবস্থা ছাড়াও অনেক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে বলে জানা যায়।

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *