fbpx
হোম অন্যান্য একজন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক এবং এক দাদু জিন !
একজন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক এবং এক দাদু জিন !

একজন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক এবং এক দাদু জিন !

0

খ্যাতিমান আইনবিদ ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের নিজের যাবতীয় কাজের বাইরে অন্য এক শখ রয়েছে। তা হলো তিনি একনিষ্ঠ জিনভক্ত। জিন-পরীদের অস্তিত্বে তার অগাধ বিশ্বাসের পাশাপাশি এ নিয়ে তিনি চর্চাও করেন বেশ। এখানে তেমনই কিছু ঘটনার বিবরণ দেওয়া হলো-

১. একবারের ঘটনা। রফিক স্যারের শরীরে তখন ভয়ঙ্কর ক্যান্সার সবে বাসা বাঁধতে শুরু করেছে। স্যারের স্ত্রী ডা. ফরিদা হক। তার বান্ধবী ডা. মমতাজ করিম।

পরামর্শটা মমতাজ করিমের। জিন দাদুর সাথে রফিক স্যারের ক্যান্সার নিয়ে আলোচনা করার সিদ্ধান্ত নিলেন।

নির্ধারিত সময়ে ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, মিসেস ফরিদা হক, ডা. মমতাজ করিমসহ পাঁচ-ছয়জন মানুষ প্রবেশ করলেন একটি ঘরে। সব বাতি নিভিয়ে দেওয়া হলো। ঘুট ঘুটে অন্ধকার। শোঁ শোঁ আওয়াজ করে দাদু এলেন। সব সমস্যা শুনলেন। মক্কা থেকে একটি আংটি এনে দেবেন বলে জানালেন। উপঢৌকন হিসেবে মিসেস ফরিদা হক নিজের গয়না খুলে দিলেন।

কিছুদিন পর জিন দাদু আংটি পাঠালেন। মক্কা থেকে। কালো রঙের। এটা সব সময় পরে থাকার পরামর্শ দিলেন দাদু। সেই থেকে রফিক স্যার আংটিটা যক্ষের ধনের মতো আঙুলে রাখেন। দাদু বলেছেন, মৃত্যুর সময় আংটিটা হাত থেকে খুলে ফেলতে হবে। নইলে জান বের হবে না। অনেক কষ্ট হবে। আংটিটা ব্যবহারের কারণে স্যারের শরীর থেকে ক্যান্সার উধাও।

২. একদিনের এক চা আড্ডা। ব্যারিস্টার রফিক-উল হক শুনালেন এখন থেকে সত্তর বছর আগের এক ঘটনা। স্যারের বাবা মোমিনুল হক। সেবার তিনি পশ্চিম বাংলার চব্বিশ পরগনার মিউনিসিপ্যালিটি মেয়র পদে দাঁড়ালেন। নির্বাচনী প্রচারণার একপর্যায়ে তার পক্ষের মুসলমান দু’জন লোক গুম হয়ে গেলেন। রফিক স্যারের নানীর এক বান্ধবীর কাছে প্রতি শুক্রবার জিন আসত। গুম হওয়া দু’জন লোকের সন্ধান পেতে শুক্রবারের আগেই জিনকে হাজির করার ব্যবস্থা করা হলো। জিনটি জানালেন, হাজারীবাগ এলাকায় এক বাড়িতে ওই দু’জনকে আটকে রাখা হয়েছে। এ তথ্য পাওয়ার পর ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে খুঁজে পাওয়া যায় তাদের।

আলাপের এ পর্যায়ে রফিক-উল হককে বললাম, ‘স্যার বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী কোথায় আছে জিনের মাধ্যমে সেটা কি জানা যায় না?’

স্যার হাসলেন। জিনদের ব্যর্থতারও আরেকটি ঘটনা বললেন তিনি।

রফিক স্যারের একটা পোষা কুকুর ছিল। নাম ল্যাসি। একদিন ল্যাসি হারিয়ে গেল। জিন দাদুর শিষ্যরা জানালেন, পাশের বাড়িতে বেড়াতে আসা মেহমানরা ল্যাসিকে চুরি করে নিয়ে গেছে। এবার জিনদের তথ্য সত্য হলো না। পরে, ল্যাসিকে পাওয়া গেল পুরান ঢাকায়। উদ্ধার করেছিল স্যারের বাসার কাজের মেয়ে।

জিন দাদু একবার ব্যারিস্টার রফিক-উল হককে অভিযোগ করে বসলেন, ‘আপনি যখন পল্টনের বাসায় থাকেন না অথবা দেশের বাইরে যান, তখন তো আমার শিষ্যরা না খেয়ে থাকে।’

এ অভিযোগের পর রফিক স্যার স্পেশাল খাবারের ব্যবস্থা করতে বললেন। স্যারের অফিসের লোকেরা দোতলায় রাজসিক খাবারের ব্যবস্থা করলেন। নির্দিষ্ট সময় পরে দেখা গেল বিন্দু পরিমাণ খাবারও নেই।

‘জিনের কণ্ঠটা কেমন?’ স্যারকে জিজ্ঞেস করলাম।

—মিহি কণ্ঠ। চিকন সুর। মিনমিনিয়ে কথা বলে।

ব্যারিস্টার রফিক-উল হক একজন বস্তুবাদী বা প্রগতিবাদী মানুষ। তার সাথে একটা জিনের দহরম-মহরম সম্পর্কের এ ঘটনা অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য ঠেকবে। কিন্তু যা সত্য, তা সত্যই। অস্বীকার করার জো নেই। স্বচ্ছ দীঘি বা কুমারী যৌবনাবতী নারীর মতো সত্য।

৩. দুই নেত্রীকে একসাথে বসাবার অনেক চেষ্টাই তো করলেন। কিন্তু কই! সম্ভাবনায় গুড়ে বালি।

ব্যারিস্টার রফিক-উল হক স্যার, এমন মন্তব্যে নিঃশব্দে হাসেন।

—এক কাজ করা যায় না?

—কী বলো তো?

—আপনার ওই জিনের মাধ্যমে দুই নেত্রীকে এক টেবিলে আনা যায় না?

আবার সেই উত্তরহীন নিঃশব্দ হাসি।

একবার দেশের এক শীর্ষ নামডাকওয়ালা বাণিজ্যমানবের সাথে কথা বলার সুযোগ হয়েছিল। আমি তখন ডান হাতের চার আঙুলে আংটি পরি। উনার ডান হাতের অনামিকায় দৃষ্টিজুড়ানো একটা আংটি দেখে প্রশ্ন করার লোভ হলো।

—কোথায় পেলেন, এই অসাধারণ আঙ্গুরি?

—জিনের কাছ থেকে।

উত্তর শুনে ভড়কে গেলাম।

—সত্যি বলছেন তো?

—হ্যাঁ, তিন সত্যি। আমার এক জিন বন্ধু দিয়েছে।

—একটা নির্দিষ্ট দিনের নির্দিষ্ট সময়ে আমি অপেক্ষা করছিলাম এটার জন্য। আমার বিশ্বস্ত বেশ ক’জনকে নিয়ে। তারপর যথাসময়ে ঊর্ধমুখী শূন্য থেকে আমার টেবিলে নাজিল হয় এই আংটি। অবশ্য আমাকে ‘পে’ করতেও হয়েছে। তবে জিন বন্ধুর পরামর্শে অন্য একজনকে।

আমি তো থ। প্রথমে এটাকে গালগল্প ভাবলাম। পরে, অনুসন্ধানে এর সত্যাতা বেরিয়ে এসেছিল। ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের সাথে জিন দাদুর এখনো কথা হয়। তবে হঠাত্ বৃষ্টির মতো, কখনো সখনো। মিসেস ফরিদা হকের মৃত্যুর পর সব কিছুই যেন ঝরা পাতা।

পুরানা পল্টনের সুদৃশ্য বাসার দহলিজে দু-একটি ফুলের গাছ। তাতে, মৌসুম এলে রঙিন ফুলও ফোটে। কিন্তু রফিক-উল হকের কাছে এসব ফুল মানে রক্তক্ষরণ, ঝরে যাওয়া রঙহীন পাতা। বিবর্ণ ঘাতক স্মৃতি তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। প্রথম বাসরের স্মৃতিকাতর আহ্লাদি স্বপ্নে মাঝে মাঝেই ভেঙে যায় ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের ঘুম।

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *