বাংলাদেশ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা পাচার !
প্রাথমিকভাবে গত ১২ বছরে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অন্তত ২৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে দুদক। যা পাঠানো হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, হংকং, অস্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ড, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে।
জানা যায়, গত ২২ অক্টোবর ‘বিভিন্ন দেশে পাচার হওয়া অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব থাকা বাংলাদেশিদের তালিকা প্রসঙ্গে’ শিরোনামে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন দুদকের মানি লন্ডারিং বিভাগের মহাপরিচালক আ ন ম আল ফিরোজ। পাঠানো চিঠিতে বিনিয়োগকারী হিসেবে যেসব বাংলাদেশি নাগরিক পৃথিবীর অন্যান্য দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন, তাদের সম্পর্কে তথ্য বা তালিকা দূতাবাসের মাধ্যমে অথবা অন্য কোনো উপায়ে সংগ্রহের কথা বলা হয়।
চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নাগরিকদের একাংশ এদেশ থেকে অর্থ পাচার করে বিদেশে বিনিয়োগের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন। বহুল আলোচিত পানামা পেপারস, প্যারাডাইস পেপারস ইত্যাদি কেলেঙ্কারিতে বিভিন্ন বাংলাদেশি নাগরিকের নামও উঠে এসেছে। এ ধারা রোধ করা সম্ভব না হলে অর্থনৈতিক গতিশীলতা ভবিষ্যতে থমকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশি নাগরিকদের বিদেশে অর্থ পাচারের মাধ্যমে নাগরিকত্ব গ্রহণের প্রবণতা রোধ করা প্রয়োজন। এ জন্য সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে পাচারকৃত সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনার বিকল্প নেই। এটি একদিকে অপরাধীদের সাজা নিশ্চিত করবে, অন্যদিকে দেশীয় সম্পদ ফেরত আনার পাশাপাশি অন্যদের জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে, যা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবেও কাজ করবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বেশির ভাগ দেশেই এ সংক্রান্ত তথ্য গোপন রাখার বিষয়টি আইনের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে। তারপরও দুদকের চিঠির সূত্র ধরে কানাডা ও মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোকে কাজে লাগানো হয়েছে। এরই সূত্র ধরে অনানুষ্ঠানিক বিভিন্ন তথ্য আসতে শুরু করেছে। কানাডা প্রবাসীদের মাধ্যমে কিছু বাংলাদেশির যে তথ্য আসে তা-ই সম্প্রতি প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।
২৮ বাংলাদেশির বিষয়ে পাওয়া তথ্যে সরকারি কর্মকর্তারাই বেশি বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানালে হাই কোর্টও এ তথ্য জানতে চায়। কিন্তু ভেরিফায়েড তথ্য না হওয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে এ তথ্য প্রকাশ করতে রাজি নয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
জানা যায়, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর পাশাপাশি অর্থ পাচার রোধে সরকারের একাধিক সংস্থা কাজ করছে। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)-এর সঙ্গে কাজ করছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর পাচার করা অর্থ ফেরত এসেছে। ২০১২ ও ২০১৩ সালে তিন দফায় সিঙ্গাপুরের একটি ব্যাংকে থাকা ২১ কোটি টাকারও বেশি অর্থ ফেরত আনা হয়েছে। তবে প্রক্রিয়া খুবই জটিল ও সময়সাপেক্ষ।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফআই) মার্চে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেশ থেকে অস্বাভাবিক হারে টাকা পাচার বেড়েছে। ২০১৫ সালে ৯৮ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এ পরিমাণ অর্থ দিয়ে চারটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব। জিএফআইর তথ্য মতে, গত সাত বছরে বাংলাদেশ থেকে ৫ হাজার ২৭০ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। স্থানীয় মুদ্রায় যা সাড়ে ৪ লাখ কোটি টাকা। এ ছাড়াও সুইস ব্যাংক, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন আইসিএজে প্রকাশিত পানামা ও প্যারাডাইস পেপারসেও টাকা পাচারের তথ্য এসেছে।