৫ দিন ধরে হাসপাতালেই পড়ে আছে মায়ের লাশ !
করোনা ভাইরাসের লক্ষণ নিয়ে মুন্সীগঞ্জে এক মায়ের লাশ গত ৫ দিন ধরে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পড়ে আছে। বাড়িতে ছেলে, ছেলের বউসহ ৩০টি ঘর লকডাউনে থাকায় নিহত মায়ের লাশের কোনো খবর নিতে পারছেন না।
এমনকি কুর্মিটোলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও তাদের কিছু জানাচ্ছেন না। হাসপাতালের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রে লাশ আছে বলে পরিবারটির দাবি। তবে আসলেই লাশ সেখানে আছে না বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে তাও পরিবারটি নিশ্চিত নয় বলে জানা গেছে। এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে মুন্সীগঞ্জ সদরের পঞ্চসার ইউনিয়নের বিসিক এলাকার চৌধুরী বাড়িতে।
শুক্রবার (১৭ এপ্রিল) পঞ্চসার ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড মেম্বার গোলাম মাওলা ও মৃত ব্যক্তির ছেলে নুরুজ্জামান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বড় ছেলে নুরুজ্জামান তার মাকে জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও গলা ব্যথা, হাঁপানি নিয়ে ১৩ এপ্রিল কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে চিকিৎসা শুরুর পূর্বেই কয়েকবার পাতলা পায়খানা হয়। পরে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নের বিসিক সংলগ্ন চৌধুরী বাড়ির মৃত ছিদ্দিক ভান্ডারীর ছেলে মো. নুরে আলম জামানের মা নুরুন্নাহার (৬৮) কে করোনা উপসর্গ নিয়ে গত পাঁচ দিন আগে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায় ছেলেরা।
কিন্তু চিকিৎসার পূর্বেই তার মায়ের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। লাশ আনতে যাচ্ছে না বলে যে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়েছে এলাকায়, বিষয়টি সঠিক নয় বলে জানান তার বড় ছেলে নুরুজ্জামান। তিনি জানান, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে করোনা পজেটিভ বা নেগেটিভ রেজাল্ট পাওয়ার কথা কিন্তু পাঁচ দিন অতিবাহিত হয়ে গেল আমার মায়ের লাশও দেয়নি। আমার মায়ের রিপোর্টও জানায়নি কুর্মিটোলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে স্থানীয় খালেক চৌধুরী জানান, পাঁচ দিন পূর্বে নুরে আলম জামান তার মাকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে যায়। কিন্তু মাকে নিয়ে আর বাড়িতে আসেনি। আমরা শুনতে পেরেছি যে, তার মা নুরুন্নাহার করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এই করোনার কারণেই ছেলে মেয়েদের কেউই লাশ আনতে আগ্রহী না।
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফারুক আহাম্মেদ বলেন, আমাদের পক্ষে তো আর লাশ এনে দেওয়া সম্ভব না। এখন ওই বাড়িটি লকডাউন অবস্থায় থাকা উচিত। পুলিশ প্রশাসনকে জানানো হচ্ছে। বিষয়টি জেনে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারে বড় ছেলে নুরুজ্জামান (৪৮) জানান, সাত দিন যাবৎ জ্বর, ঠান্ডা ও শ্বাস কষ্ট ছিল আমার মায়ের। এই অবস্থায় যোগিনি ঘাটে আত্মীয়ের বাড়িতে তিন দিন বেড়ান মা। পরবর্তীতে আবার বাড়িতে আসেন। বাড়িতে ডা. হুমায়ুনের চিকিৎসাধীন ছিলেন। অবস্থার অবনতি হলে ১৪ দিন পরে ১২ এপ্রিল মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেই। ১৩ এপ্রিল আলদিতে ডা. প্রফুল্লকে দেখিয়ে পুনরায় সদর হাসপাতালে নিয়ে আসি।
পরবর্তীতে হাসপাতাল কর্তপক্ষ ঢাকা বক্ষব্যাধী হাসপাতালে পাঠায়। সেখান থেকে তারা দেখে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়। হাসপাতালে যাওয়ার পর তিন চার বার পাতলা পায়খানা হয়েছে। শ্বাসকষ্ট ও ঠান্ডা সব উপকরণই ছিল। পরবর্তীতে চিকিৎসা করার পূর্বে আমার মা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
পরে আমার মার লাশ তারা ফ্রিজে রেখে দেয় এবং করোনা পজেটিভ হলে দেবে না আর নেগেটিভ হলে লাশ ফেরত দেবে বলে জানায়। ১৩ এপ্রিল থেকে আজ ১৭ এপ্রিল এই রোগীর কোনো রিপোর্ট তার কাছে আসেনি এবং কুর্মিটোলা হাসপাতাল থেকে কোনো ফোন এ পর্যন্ত আসেনি। আমি নিজে নিজেই লকডাউনে আছি। এলাকার লোকজনও আমাদেরকে লকডাউনে রেখেছে।