fbpx
হোম অন্যান্য ১৩৭ মিলিয়ন বছর আগে মানুষের তৈরি প্রথম গুহা !
১৩৭ মিলিয়ন বছর আগে মানুষের তৈরি প্রথম গুহা !

১৩৭ মিলিয়ন বছর আগে মানুষের তৈরি প্রথম গুহা !

0

বিখ্যাত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলোর মধ্যে থিওপেট্রা গুহাটি অন্যতম। এটি থেসালির মধ্য গ্রীক অঞ্চলের মেটিওরায় অবস্থিত প্রথম খননকৃত গুহা। বছরের পর বছর ধরে করা প্রত্নতাত্ত্বিকদের গবেষণা থেকে জানা যায়, থিওপেট্রা গুহাতে মানুষের বসবাস শুরু হয় এক লাখ ৩০ হাজার বছর আগে। এই গুহাটি প্রায় ১০০ মিটার পর্যন্ত লম্বা। এর চুনাপাথরের পাহাড়ের পাদদেশে রয়েছে থিওপেট্রা নামক ছোট্ট একটি গ্রাম। যার অদূরেই পাইনিওস নদীর একটি শাখা লেঠাইওস নদীর দিকে প্রবাহিত হয়েছে।

ভূতাত্ত্বিকদের মতে, চুনাপাথরের এই পাহাড় ১৩৭ থেকে ৬৫ মিলিয়ন বছর আগে গঠিত হয়। এছাড়াও প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে, থিওপেট্রা গুহায় মানুষের আবাসনের প্রমাণ গেছে। যেটা মধ্য প্যালিওলিথিক থেকে নিওলিথিক সময়কালের হতে পারে বলে মনে করছেন তারা। এতে করে প্রত্নতাত্ত্বিকরা গ্রিসের প্রাগৈতিহাসিক সময়গুলো আরও ভালোভাবে বুঝতে সক্ষম হয়। থিওপেট্রা গুহাটি প্রায় চতুর্ভুজ আকারের। এর পরিধিগুলোতে ছোট কুলুঙ্গি রয়েছে। এটি প্রায় ৫০০ বর্গমিটার বা ৫ হাজার ৩৮০ বর্গফুট এলাকাজুড়ে রয়েছে। গুহার একটি বৃহত প্রবেশদ্বার রয়েছে। যা গুহার অভ্যন্তরে প্রচুর পরিমাণে আলো প্রবেশ করতে সাহায্য করে।

১৯৮৭ সালে থিওপেট্রা গুহার প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ শুরু হয়। তৎকালীন প্যালিওনথ্রপোলজি ও প্যাথোগ্রাফির এফোর্টের প্রধান ডা. নিনা কাইপারিসি-অ্যাপোস্টোলিকা ছিলেন এর তত্ত্বাবধানে। এই গবেষণা ২০০৭ সাল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। তবে খননকাজের আগে গুহাটি স্থানীয় রাখালরা একটি অস্থায়ী আশ্রয় হিসেবে ব্যবহার করতেন। যেখানে তারা তাদের পশুরপাল রাখত। থিওপেট্রা গুহাটি থেসালির প্রথম গুহা যা প্রত্নতাত্ত্বিকভাবে খনন করা হয়েছিল। গ্রীসের একমাত্র মধ্য প্যালেওলিথিক থেকে নিওলিথিক শেষ পর্যন্ত ধারাবাহিক ধারায় জমা রাখা হয়েছে। সবচেয়ে তাৎপর্যপূ্র্ণ বিষয় হলো, গুহাটি প্রত্নতাত্ত্বিকদের গ্রিসের মূল ভূখণ্ড (প্যালিয়োলিথিক থেকে নওলিতিক) সম্পর্কে আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করেছে।

থিওপেট্রা গুহার প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার মাধ্যমে আরও বেশ কয়েকটি আকর্ষণীয় আবিষ্কার হয়েছে। যার মধ্যে একটি হলো, গুহাটি দখল করা হয়েছিল অঞ্চলের বা এলাকার জলবায়ুর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। প্রত্নতাত্ত্বিকেরা নির্ধারণ করতে সক্ষম হন যে, গুহার দখলের সময় গরম এবং শীতল পানির স্রোত ছিল। তাই জলবায়ুর এই পরিবর্তনের ফলস্বরূপ, গুহার জনসংখ্যাও সেই অনুসারে প্রভাবিত হত।

থিওপেট্রা গুহা থেকে পাওয়া আরেকটি আকর্ষণীয় সন্ধান হলো, পাথরের প্রাচীরের অংশবিশেষ। যা এক সময় গুহার প্রবেশদ্বার আংশিক ভাবে আবদ্ধ করে রেখেছিল। এই অংশবিশেষ গুলো ২০১০ সালে আবিষ্কার করা হয়েছিল। যা অপটিক্যাল স্টিমুলেটেড লুমিনেসেন্স নামে পরিচিত। ডেটিংয়ের অপেক্ষাকৃত নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা নির্ধারণ করেন, এই প্রাচীরটি প্রায় ২৩ হাজার বছরের পুরনো হবে। যেহেতু এই প্রাচীরের বয়স শেষ বরফ যুগের সঙ্গে মিলে যায়। তাই এটি গবেষকরা মনে করছেন, গুহার বাসিন্দারা বাইরের ঠাণ্ডা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে এটি তৈরি করেছিলেন। গবেষণায় দাবি করা হয়েছে যে, এটি গ্রিস এবং সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন এবং মানুষের নির্মিত কাঠামো। কেননা গুহার নরম মাটির মেঝেতে কমপক্ষে তিনটি হোমিনিড পদচিহ্নর একটি সারি আবিষ্কার হয়।

২০০৯ সালে থিওপেট্রা গুহাটি আনুষ্ঠানিকভাবে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। যদিও পাথরের দেয়ালের অংশগুলো আবিষ্কার হওয়ার এক বছর পরেই অস্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এরপর প্রত্নতাত্ত্বিকদের আগ্রহে একবার খোলা হলেও ২০১৬ সালে তা আবার বন্ধ করে দেয়া হয়। ভূমিধসের সম্ভাবনা থাকায় সুরক্ষার জন্য এটি এখন পর্যন্ত বন্ধই আছে।

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *