fbpx
হোম অন্যান্য ১২ বছর পর মিথ্যা মামলা থেকে মুক্ত রাবেয়া খাতুন
১২ বছর পর মিথ্যা মামলা থেকে মুক্ত রাবেয়া খাতুন

১২ বছর পর মিথ্যা মামলা থেকে মুক্ত রাবেয়া খাতুন

0

১২ বছরেরও বেশী সময় পর এক অস্ত্র মামলা থেকে বৃদ্ধা রাবেয়া খাতুন অব্যাহতি পেয়েছে।

বুধবার এ রায় দিয়েছে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো.রিয়াজ উদ্দিন খানের হাই কোর্ট বেঞ্চ। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন রিটকারী আইনজীবী আশরাফুল আলম নোবেল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হারুন অর রশীদ।

জানা যায়, ২০০২ সালে করা ওই মামলায় রাবেয়ার বয়স বলা হয়েছে ৬০ বছর। সে অনুযায়ী বর্তমানে তার বয়স ৭৭ বছর। তবে রাবেয়া তার বয়স ১০৪ বছর দাবি করেছেন।

অন্যদিকে জাতীয় পরিচয়পত্রে তার জন্ম তারিখ ১৯৩৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর। সে অনুযায়ী রাবেয়া খাতুনের বয়স ৮৬ বছর।

আইনজীবী আশরাফুল আলম নোবেল সাংবাদিকদের বলেন, “২০০২ সাল থেকে জজ কোর্টে মামলাটি চলছিল, নিষ্পত্তি হচ্ছিল না। মহিলার ভাষ্য মতে তার বয়স ১০৪ বছর। পত্রিকায় বিষয়টি দেখে হাই কোর্টে আবেদন করি।

“গত ১৫ অক্টোবর মামলাটির চূড়ান্ত শুনানি হয়। আদালত রুল যথাযথ ঘোষণা করে রাবেয়া খাতুনের ক্ষেত্রে মামলাটি বাতিল করেছেন। অর্থাৎ রাবেয়া খাতুনকে এই মামলায় আর কোর্টে যেতে হবে না। তার ক্ষেত্রে মামলাটি নিষ্পত্তি হয়ে গেল।”

এ আইনজীবী বলেন, “এ মামলাটির ক্ষেত্রে বিচারিক প্রক্রিয়ার অপব্যবহার করা হয়েছে। যে প্রক্রিয়ায় বিচার কাজ চলবে সেটি নানাভাবে ব্যাহত করা হয়েছে, শুনানিতে এসব যুক্তি তুলে ধরেছি।

“দীর্ঘদিন এ মামলায় সাক্ষী আসে না। ২০০৩ সালে অভিযোগ গঠন করা হলেও ২০০৬ সালে মাত্র তিনজন সাক্ষ্য হয়েছে, ২০১৪ সালে হয়েছে আরও তিনজনের সাক্ষ্য। এরপর আর সাক্ষী নাই। কিন্তু মামলার তারিখে এই বৃদ্ধকে আদালতে হাজির থাকতে হত। এত বছর কেন ডিলে হল এর কোনো যৌক্তিক কারণ রাষ্ট্রপক্ষ দেখাতে পারেনি।”
অবৈধ অস্ত্র ও গুলি নিজ হেফাজতে রাখার অপরাধে তেজগাঁও থানার এসআই আবদুর রাজ্জাক বাদি হয়ে রাবেয়া খাতুনসহ জৈনক জুলহাস ও মাসুদের বিরুদ্ধে ২০০২ সালের ২ জুন এই মামলা করেছিলেন।
এরপর রাবেয়া খাতুন গ্রেপ্তার হন; ছয় মাস কারাগারে থেকে জামিনও পান।

পরে রাবেয়া খাতুন, আসামি জুলহাস ও মাসুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ২০০৩ সালের ২৪ মার্চ শুরু হয় মামলার বিচার। কিন্তু দীর্ঘ এ সময়ে আদালতে আসামি জুলহাসের কোনো উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।
এর মধ্যে ২০১৪ সালে মামলার তদন্ত কর্মকতা মারা যান।

রাজধানী তেজগাঁও থানা এলাকার ৩/ক গার্ডেন রোড, কাজী আবদুল জাহিদের ঘরের দক্ষিণ পাশ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল রাবেয়া খাতুনকে। গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল ও ছয় রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে বলে দাবি করে পুলিশ।

সেই মামলা থেকে মুক্তি পেতে ঢাকার আদালতের বারান্দায় দেড়যুগ ধরে ঘুরছিলেন এই বৃদ্ধা।
গত ২৫ এপ্রিল দৈনিক সমকাল রাবেয়া খাতুনকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ‘আদালতের বারান্দায় আর কত ঘুরবেন তিনি’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি ছাপায় হয়।

পরে এ প্রতিবেদনটি যুক্ত করে ২৮ এপ্রিল হাই কোর্টে মামলা বাতিল চেয়ে আবেদন করেন সুপ্রিম কার্টের আইনজীবী মো. আশরাফুল আলম নোবেল।
আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ৩০ এপ্রিল আদালত রাবেয়া খাতুনের ক্ষেত্রে মামলার কার্যক্রম তিন মাসের জন্য স্থগিত করে।

পাশাপাশি মামলার নথি তলব করে দুই সপ্তাহের মধ্যে বিলম্ব বিচারের ব্যাখ্যা জানতে চায়। মামলাটি কেন বাতিল করা হবে না, জানতে চেয়ে রুলও জারি করে।
এছাড়াও ওই আবেদনের ওপর শুনানির সময় আসামি জুলহাস মিয়া বেঁচে আছেন কিনা বা জুলহাস মিয়ার অবস্থান জানাতে ডিএমপি কমিশনার ও ভোলার এসপিকে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট।

গত ১৭ জুলাই ডিমএমপি কমিশনার ও ভোলার পুলিশ সুপার আদালতে প্রতিবেদন দেয়। তবে সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে প্রতিবেদন দেওয়ায় ভোলার পুলিশ সুপারকে তলব করে হাই কোর্ট। ২০ আগস্ট তাকে আদালতে হাজির হয়ে এ বিষয়ে তাকে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছিল।

তবে ওইদিন আসামি জুলহাস মিয়ার অবস্থান নিয়ে পরস্পরবিরোধী তথ্য দেয় পুলিশ প্রশাসন।

ডিএমপি কমিশনারের প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলহাস ১০-১২ বছর আগে পরিবার নিয়ে ভোলায় চলে গেছে। আর ভোলার পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, ভোলায় জুলহাস নামে কোনো আসামি নেই। তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া ভোলা সদর এলাকায় পশ্চিম বাপতা নামে কোনো গ্রামও নেই।

আদালত এসব যাচাই করে অবশেষে রাবেয়া খাতুনকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়।

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *