সারেগামাপা’তে আবারও ‘ইন্দুবালা’ গান নিয়ে সমালোচনার ঝড়
দুই বাংলার জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো ‘সারেগামাপা’তে ‘ইন্দুবালা’ গানের গীতিকার ও সুরকারের নাম উল্লেখ না করে আবারও গান পরিবেশন নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
‘ইন্দুবালা’ শিরোনামের বাংলাদেশের জনপ্রিয় এই গানের গীতিকার দেলোয়ার আরজুদা শরফ, সুরকার প্লাবন কোরেশী। এনিয়ে প্লাবন কোরেশী তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। চেঞ্জ টিভি পাঠকদের জন্য তা হুবহু তুলে ধরা হলো;
‘‘গতকাল রাতে পরপর বেশ কয়েকটি কল এলো আমার মোবাইলে, মেসেঞ্জারে এলো কিছু স্ক্রীনশট। প্রসঙ্গ; ওপার বাংলার জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল জি বাংলার “সারেগামাপা” নামক রিয়েলিটি শোতে আমাদের “ইন্দুবালা” গেয়েছে একটি মেয়ে। মেয়েটি গানের গীতিকার ও সুরকারের নাম উল্লেখ করেনি।
গত বছরও এরকম একটি ঘটনা ঘটেছিলো একই অনুষ্ঠানে। তখন শম্পা নামক একজন গায়িকা “ইন্দুবালা” গিয়েছিলেন, এবং তিনিও গীতিকার ও সুরকারের নাম ভুল উল্লেখ করেছিলেন। এটা নিয়ে বাংলাদেশের ফেসবুকে বেশ লেখালেখি হয়, যা ওই গায়িকার দৃষ্টিগোচর হয়। তিনি গানটির গীতিকার দেলোয়ার আরজুদা শরফ এবং আমাকে ব্যক্তিগতভাবে মেসেজ ক’রে দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন বিষয়টি তার অজানা ছিলো।
“সারেগামাপা”র মতো এতো বড় একটা রিয়েলিটি শোতে হর্তাকর্তা যারা থাকেন, তারা নিশ্চয়ই সেখানকার সাধারণ মানের কোনো মানুষ নন। যাঁরা এই অনুষ্ঠানের বিচারক থাকেন, তাঁরা সবাই সেলিব্রেটি আর্টিস্ট। আমরা অনেকেই তাদের ভীষণ ভক্ত। এতো বড় একটা টিম যেখানে কাজ করেন এই অনুষ্ঠানটি পরিচালনায়, সেখানে কোনো গানের গীতিকার ও সুরকারের নাম খুঁজে বের করতে না পারা কিংবা ভুল তথ্য প্রদান করা গুগল, উইকিপিডিয়া, আর ইউটিউব এর যুগে অবাক বিষয় নয় কি?
পরের দেয়া বেদনায় দুঃখ পেয়েই বা লাভ কী! নিজের ঘরই তো সামলাতে পারছি না। সারাজীবন যেসব কোম্পানির জন্য গান করে গেলাম, তাদের ইউটিউব চ্যানেলে ঢুকলে দেখা যায়, আমার অতি পরিচিত গানে গীতিকার কিংবা সুরকার হিসেবে আমার নাম নেই। তাহলে কী দাঁড়ালো? আমাদের দেশের আগামী প্রজন্মই তো জানবে না এইসব গানের সুরকার কিংবা গীতিকার কে, বাহিরের দেশ তো অনেক পরের ব্যাপার। ঘরে যার সম্মান নেই, পরে তাকে সম্মান দেবে কী! অনেক চ্যানেল দেদারছে আমার গান আপ করছে যেখানে আমার নাম গন্ধটি পর্যন্ত নেই। সম্মান দিয়ে কাছে ডেকে দুটো পয়সা বিতরণ তো দূরের কথা’, এদেশের এক ইউটিউব চ্যানেল তো আমার গাওয়া ডুয়েট গান ছেড়েছে আমার ছবি কিংবা নাম ব্যবহার না ক’রে। শিল্পবোধহীন মানুষেরা যখন শিল্পকে ডমিনেট করে, গুণীরা তখন মার খায়। অনেক কথা বলার থাকলেও বলতে পারছি না, পাছে খাতির নষ্ট হয়। আজকের সারেগামাপা কিংবা শম্পারা যখন আমাদের গান গেয়ে আমাদের নাম বলেন না, তখন তার কিঞ্চিৎ দায় কি আমাদের উপর বর্তায় না? আমরা কি আমাদের গীতিকার, সুরকার কিংবা কবিদেরকে যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়েছি কোনো কালে, কোনো স্থানে?
বাংলাদেশের সকল ইউটিউব মালিকদেরকে বিনীত অনুরোধ করছি, আপনার চ্যানেলে প্রকাশিত গান, নাটক, সিনেমা, কবিতা, কিংবা অন্যান্য আইটেমে এসবের ক্রিয়েটরদেব নাম সঠিকভাবে উল্লেখ করেছেন কী না, দয়া ক’রে একটু চেক করবেন কি? যাদের চিন্তা বিক্রি ক’রে বাড়ি-গাড়ি করছেন, তাদেরকে অস্বীকার করতে লজ্জা লাগে না?
তথ্য মন্ত্রণালয় তথা বাংলাদেশের মাননীয় সরকারকে বিনীত অনুরোধ করছি, যেসব ইউটিউব চ্যানেল কোনো সৃষ্টিকর্মের সঠিক তথ্য প্রদান করবেন না, তাদের বিরুদ্ধে অর্থদন্ড, কারাদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডের বিধান রেখে শক্তিশালী একটি আইন প্রণয়ন করুন। রাস্তায় কোনো মোটরযান সিগন্যাল না মানলে কিংবা অন্য কোনো অপরাধ করলে যেমন অর্থদণ্ড করা হয়, ঠিক তেমন ক’রে অর্থদণ্ডের বিধান করা গেলে সরকারের রাজস্ব বাড়বে, আর কারাদণ্ডের বিধান থাকলে কোনো সৃষ্টিকর্ম ইউটিউবে আপ করার আগে এইসব ব্যবসায়ীরা ভাববেন, সৃষ্টিকর্ম কখনোই মুরগির ডিম নয়।
কেবলমাত্র অর্থপ্রাপ্তির প্রত্যাশায় সংস্কৃতির শত্রু এইসব সাংস্কৃতিক প্রোমোটারেরা (আমি সবাইকে বলছি না) যা শুরু করেছেন, আমাদের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের জন্য তা হুমকিস্বরূপ। কেবল অর্থ উপার্জনের নেশায় নয়, আসুন সংস্কৃতিবান্ধব মানসিকতা নিয়ে, গুণীদের যথাযথ সম্মান প্রদর্শন ক’রে, আমরা আমাদের সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে বেগবান করি।
জীবনের জন্য অর্থ প্রয়োজন, কিন্তু শুধু অর্থোপার্জন জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হতে পারে না। গাড়ি কিংবা বাড়ি যতোই থাকুক, আমাদের আয়ু কিন্তু ফুরিয়ে আসছে। সম্ভবত এটা কারও অজানা নয়, পৃথিবীর সকল প্রাণী একদিন ম’রে যায়। সুতরাং সম্মান দেবার প্র্যাকটিস করুন, আপনার প্রাপ্য সম্মান আপনি পাবেন। ইন্ডাস্ট্রিতে রেষারেষি আর মামলার সংখ্যা বাড়িয়ে লাভ কী?
ওপার বাংলার “সারেগামাপা” কর্তৃপক্ষ কিংবা বাংলাদেশের কোনো ইউটিউব চ্যানেল কিংবা চ্যানেলমালিকদের প্রতি কটাক্ষ ক’রে কেউ কোন মন্তব্য করবেন না প্লিজ। গঠনমূলক যে কোনো আলোচনায় আপনাদেরকে সু-স্বাগতম
ভালো থাকুক বাংলা গান।’’
1