fbpx
হোম বিনোদন সাধারণ থেকে ‘নবাব’, আনোয়ার হোসেনকে মনে রাখেনি কেউ
সাধারণ থেকে ‘নবাব’, আনোয়ার হোসেনকে মনে রাখেনি কেউ

সাধারণ থেকে ‘নবাব’, আনোয়ার হোসেনকে মনে রাখেনি কেউ

0

আজ বরেণ্য অভিনেতা আনোয়ার হোসেনের মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৩ সালের এই দিনে তিনি না–ফেরার দেশে চলে যান। বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাস লেখা হলে সেখানে অবধারিতভাবে আনোয়ার হোসেনের নাম আসার কথা। তবে ঢাকাই সিনেমার ‘নবাব’ প্রায় বিস্মৃতির অতলে হারাতে বসেছেন চলচ্চিত্র অঙ্গন থেকে।
আনোয়ার হোসেন দীর্ঘ পাঁচ দশক দিনরাত কাজ করেছেন ছবির পর ছবিতে। তাঁর কাজ না করতে পারার দুঃখ থাকবে—এটাই স্বাভাবিক। ২০১৩ সালের ১৮ আগস্ট শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। ১৩ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় ৮২ বছর বয়সে ঢাকার চলচ্চিত্রের ‘নবাব’খ্যাত অভিনেতা আনোয়ার হোসেন মারা যান। আনোয়ার হোসেনের জন্ম ১৯৩১ সালের ৬ নভেম্বর জামালপুর জেলার মুরুলিয়া গ্রামের মিয়াবাড়িতে। বাবা এ কে এম নাজির হোসেন ছিলেন জেলা সাব-রেজিস্ট্রার। ১৯৪০ সালে দেওয়ানগঞ্জ প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হন এবং স্কুলের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হন তিনি। ১৯৫১ সালে জামালপুর হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে ময়মনসিংহ কলেজে ভর্তি হন।
কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্রাবস্থায় আসকার ইবনে শাইখের ‘পদক্ষেপ’ নাটকে অভিনয় করার পর থেকে নাটকের প্রতি দুর্বার আকর্ষণ সৃষ্টি হয়। প্রথম বর্ষের পরীক্ষা দিয়ে বাবার বন্ধু আবদুল্লাহ খানের ‘সেলকন ইঞ্জিনিয়ারিং’ ফার্মে সুপারভাইজারের চাকরি নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ১৯৫৯ সালে ননী দাসের পরিচালনায় ‘এক টুকরো জমি’ নাটকে অভিনয় করেন। ঢাকা বেতারে অডিশন দিয়ে নির্বাচিত হয়ে ‘হাতেম তাই’ নাটকে একটি ছোট চরিত্রে অভিনয় করেন। মঞ্চনাটকে অভিনয় করতে গিয়ে পরিচয় হয় আব্দুল জব্বার খান, মোহাম্মদ আনিস ও হাবিবুর রহমানের সঙ্গে।
ঝিনুক পত্রিকার সম্পাদক আসিরুদ্দিনের সহযোগিতায় মিনার্ভা থিয়েটার গঠন করেন। মিনার্ভা থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হন সৈয়দ হাসান ইমাম, ফতেহ লোহানী, মেহফুজ, সুভাষ দত্ত, চিত্রা সিনহাসহ অনেকে।
১৯৬১ সালে আনোয়ার হোসেন মহিউদ্দিন পরিচালিত ‘তোমার আমার’ ছবিতে ভিলেনের চরিত্রে অভিনয় করেন। এরপর সালাহউদ্দিন পরিচালিত ‘সূর্যস্নান’ ছবিতে নায়কের চরিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৬১ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত ১৮টি ছবিতে কাজ করেন তিনি। ১৯৬৭ সালে ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ ছবিতে নবাবের চরিত্রে অভিনয় করে পান ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও খ্যাতি। সিরাজের দেশপ্রেমের যন্ত্রণা দর্শকদের মনে জাগিয়ে দিতে পেরেছেন বলে ছবিটি প্রশংসিত হয়। আনোয়ার হোসেন ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক, সাহিত্যনির্ভর, শিশুতোষ, লোককাহিনিভিত্তিক, পোশাকি ফ্যান্টাসি, পরিচ্ছন্ন সামাজিক, পারিবারিক মেলোড্রামা, বক্তব্যধর্মী—সব ধরনের ছবিতে অভিনয় করেছেন।
ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক, সাহিত্যনির্ভর, শিশুতোষ, লোককাহিনিভিত্তিক, পোশাকি ফ্যান্টাসি, পরিচ্ছন্ন সামাজিক, পারিবারিক মেলোড্রামা, বক্তব্যধর্মী—সব ধরনের ছবিতে অভিনয় করেছেন আনোয়ার হোসেন
ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক, সাহিত্যনির্ভর, শিশুতোষ, লোককাহিনিভিত্তিক, পোশাকি ফ্যান্টাসি, পরিচ্ছন্ন সামাজিক, পারিবারিক মেলোড্রামা, বক্তব্যধর্মী—সব ধরনের ছবিতে অভিনয় করেছেন আনোয়ার হোসেনসংগৃহীত
বিশেষ করে সালাহউদ্দিন, খান আতাউর রহমান, কাজী জহির, আমজাদ হোসেন, ইবনে মিজান, আলমগীর কবির, কামাল আহমেদ, জহির রায়হান, নারায়ণ ঘোষ মিতা, সুভাষ দত্ত, নজরুল ইসলাম, আজিজুর রহমান, মোস্তফা মেহমুদ, এ জে মিন্টু, চাষী নজরুল ইসলাম, কাজী হায়াৎসহ অনেক নামীদামি পরিচালকের ছবিতে অভিনয় করেছেন। আমাদের দেশে নির্মিত ‘সূর্যস্নান’, ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’, ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘জয় বাংলা’, ‘অরুণোদ্বয়ের অগ্নিসাক্ষী’, ‘লাঠিয়াল’, ‘পালঙ্ক’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘সুন্দরী’, ‘সখিনার যুদ্ধ’, ‘নাজমা’, ‘সূর্যগ্রহণ’, ‘সূর্যসংগ্রাম’, ‘দায়ী কে’, ‘সত্য মিথ্যার’ মতো ছবির অভিনেতা হিসেবে আনোয়ার হোসেন থেকে যাবেন যুগের পর যুগ দর্শকদের হৃদয়মাঝে।
দীর্ঘ অভিনয়জীবনে আনোয়ার হোসেন প্রায় ৩৫০ ছবিতে অভিনয় করেছেন। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন নিগার পুরস্কার। ১৯৮৫ সালে তিনি একুশে পদক ও দুবার বাচসাস পুরস্কার লাভ করেন। ২০১০ সালে বাংলাদেশ সরকার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের পাশাপাশি আনোয়ার হোসেনকে আজীবন সম্মাননা প্রদান করে।
(এ লেখার বেশ কিছু অংশ প্রথম আলোতে প্রকাশিত সাধারণ থেকে ‘নবাব’ শিরোনামের লেখা থেকে নেওয়া হয়েছে)

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *