fbpx
হোম অন্যান্য শুধু গল্প উপন্যাসেই নয়, অনেকে বাস্তবেই গড়েছেন প্রেমের সমাধি আর আজব কীর্তি !
শুধু গল্প উপন্যাসেই নয়, অনেকে বাস্তবেই গড়েছেন প্রেমের সমাধি আর আজব কীর্তি !

শুধু গল্প উপন্যাসেই নয়, অনেকে বাস্তবেই গড়েছেন প্রেমের সমাধি আর আজব কীর্তি !

0

পঙ্গু স্ত্রীকে পিঠের ঝুড়িতে বয়ে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে এক দরিদ্র বৃদ্ধ। রোগীর শরীরে ঘা আর অসহ্য গন্ধ। চিকিৎসাকর্মীরাও তার কাছে যেতে নারাজ, অথচ বৃদ্ধের কোনো বিকার নেই। না, সেরে ওঠা সম্ভব ছিল না ঐ নারীর পক্ষে। কিন্তু তার মৃত্যুর পরে দেখা যায়, সামান্য উপকরণ নিয়ে একা হাতেই তার সমাধি গড়ে তোলার চেষ্টা করে চলেছেন ঐ বৃদ্ধ, যার নাম ফকির শাজাহান। এমনই এক আশ্চর্য প্রেমের কাহিনী শুনিয়েছিলেন বনফুল, তার ‘তাজমহল’ গল্পে।

প্রিয় পত্নী মমতাজের প্রেমের স্মৃতিতে সম্রাট শাজাহানের তাজমহল নির্মাণের অনুষঙ্গে এই সাধারণ মানুষ দুইজনকে জুড়ে দিয়েছিল ঐ গল্প। তবে এমন ঘটনা যে কেবল গল্পেই শোনা যায়, তা কিন্তু নয়। বাস্তবেও অনেকসময় দেখা গিয়েছে, প্রেমের জন্যই আশ্চর্য সব কাজ করে বসেছেন কোনো কোনো সাধারণ মানুষ। রাজারাজড়াদের মতো অর্থ সামর্থ্য লোকবল কিছুই ছিল না তাদের। কেবল প্রেমের জোরেই তারা এমন কোনো কাজ করেছেন, যা ভাবাই যায় না। আসুন, প্রেমের দিনে শোনা যাক তাদের প্রেমের কথা।

শুরু করা যাক আরো এক তাজমহলের গল্প দিয়ে। ভারতের উত্তরপ্রদেশের এক প্রত্যন্ত গ্রামের পোস্টমাস্টার ফৈজুল কাদরি। দাম্পত্যের আটান্ন বছর পর যখন তার স্ত্রী তাজামুল্লি মারা যান, তখন দেখা যায় নিজের জমিজিরেত, বউয়ের গয়না সব বিক্রি করে, শেষ সম্বলটুকু দিয়ে তাজমহল বানাতে শুরু করেছেন ফৈজুল। স্ত্রীকে নাকি এমনটাই কথা দিয়েছিলেন তিনি। খবর পেয়ে তাকে অর্থ সাহায্য করতে চেয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। ঐ টাকায় গ্রামে মেয়েদের জন্য কলেজ গড়ে দিতে বলেন ফৈজুল। কিন্তু এই তাজমহল গড়ার দায়িত্ব তারই। একইভাবে স্ত্রীর মূর্তি গড়ে মন্দির বানিয়েছেন তামিলনাড়ুর এক ৮৪ বছরের বৃদ্ধ। তার কথায়, ৫০ বছর একসঙ্গে ঘর করেছেন দুইজনে। স্ত্রীকে না দেখে আর থাকতে পারবেন না তিনি।

থাইল্যান্ডের শ্যাডিল ডেফি অবশ্য বিয়েই করেছিলেন তার মৃত প্রেমিকাকে। কলেজ থেকে প্রেম, কিন্তু বিয়ে করার সময় আর মিলছিল না তাদের। অবশেষে, দশ বছর প্রেমের পর যখন বিয়ের তারিখ পাকা, তার ঠিক আগেই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তার প্রেমিকা অ্যানের। কিন্তু তারপরেও বিয়েটা আর বাতিল করেননি ডেফি। প্রেমিকার শেষকৃত্যের দিনই বিয়ের পোশাকে সেজে তার আঙুলে বিয়ের আংটি পরিয়ে দেন এই যুবক।

আবার মৃত্যুর হাত থেকেই প্রেমিকাকে ফিরিয়ে এনেছিলেন এক যুবক। স্রেফ ভালবেসে। নাৎসি রক্ষী ফ্রান্‌ৎজ ভুঙ্ক, গ্যাসচেম্বার থেকে রেহাই দিয়েছিল হেলেনা সিট্রোনোভা নামে এক ইহুদি মেয়েকে, এমনকি তার বোনকেও। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সেই ভয়ংকর সময়ে দাঁড়িয়ে কোনো মানুষের পক্ষে যে কাজ প্রায় অসাধ্যই ছিল।

আবার ব্যক্তিগত প্রেমেই এক আলাদা মাত্রা জুড়ে দিয়েছিলেন দশরথ মাঝি। প্রথাগত শিক্ষা নেই, টাকাপয়সাও নেই বিশেষ। কিন্তু প্রেমে কমতি পড়েনি এতটুকু। গ্রামের যে মেয়েটির প্রেমে আকুল হয়ে তাকে বিয়ে করেছিলেন দশরথ, সেই বউ-ই একদিন পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়ে যায়। তাও অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায়। হাসপাতাল শহরে, কিন্তু সেখানে যাওয়ার কোনো রাস্তা গড়ে দেয়নি সরকার। বউকে কাঁধে নিয়ে ৭০ কিলোমিটার পেরিয়ে হাসপাতালে পৌঁছেছিলেন দশরথ। কিন্তু ততক্ষণে বউ আর বেঁচে নেই। দশরথ সেদিনই ঠিক করেছিলেন, ঐ পাহাড় কেটে রাস্তা বানাবেন তিনি। যাতে আর কেউ চিকিৎসার অভাবে তার ভালোবাসার মানুষকে না হারায়। আর পরের বাইশটা বছর ধরে সেই কাজটাই করেছেন দশরথ মাঝি একা।

একা থাকেন এলসি এলার-ও। আমেরিকার মধ্যভাগে নেব্রাস্কা বলে যে অঞ্চলটি রয়েছে, তার উত্তর দিকে রয়েছে একটি শহর, মনোওয়াই। চেকোস্লোভাকিয়া থেকে দেশান্তরী হয়ে আসা মানুষেরা এই শহরটি গড়ে তুলেছিলেন এককালে। ১৯ বছর বয়সে বিয়ে হওয়ার পর স্বামী রুডির সঙ্গে এই শহরে এসে সংসার পাতেন এলসিও। ১৯৩০ সালে শহরের মোট জনসংখ্যা ছিল ১৫০। তারপর যা হয়, কারো কারো মৃত্যু হতে থাকে, কেউ কাজের জন্য চলে যান অন্য শহরে, সব মিলিয়ে শহরের জনসংখ্যা ক্রমশ কমতে থাকে। শেষমেশ রুডি আর এলসি, এই দুজন ছাড়া এখানে আর কেউই ছিল না। আর ২০০৪ সালে রুডির মৃত্যুর পর এলসি সম্পূর্ণ একা হয়ে যান। তাদের দুই সন্তানও থাকেন অন্য শহরে। তবুও এক অদ্ভুত মায়ায় একাই এই শহরে রয়ে গেছেন এলসি। শহরের মেয়রের দায়িত্ব সামলানো, লাইব্রেরি থেকে বার-এর তত্ত্বাবধান করা, সব কাজই একাই করেন তিনি।

রাজাবাদশাদের প্রেমের গল্প ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই পায়। দশরথ কিংবা এলসি-দের কথা আড়ালেই থাকে। তাতে অবশ্য প্রেমের কিছু এসে যায় না। শুধু চুপিচুপি হরিপদ কেরানিকে সে আকবর বাদশা বানিয়ে দিয়ে যায়। আর তার হাত ধরেই অসাধারণ সব কাজ করে যান এমন সাধারণ মানুষেরাই।

 

 

সূত্র: সংবাদ প্রতিদিন

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *