লোনা পানির জোয়ারে অবর্ণনীয় কষ্টে কয়রা উপজেলাবাসী
দুর্যোগ কবলিত খুলনার কয়রা উপজেলার অধিকাংশ মানুষ খেয়ে না খেয়ে কষ্টের মধ্যেই দিন পার করছেন। চিত্রটি কোনো নদী বা বিল নয়, কয়রার হরিণখোলা-ঘাটাখালির একটি স্কুলের মাঠ, পাশে ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ।
স্থানীয় ঈদগাহ-মসজিদ, মাঠ, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান সব জায়গায় পানি থাকায় অনেকেই বেড়িবাঁধ বা সড়কের ওপর ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। আবার হাটু পানিতে ঈদের জামাত নিয়েও তৈরি হয়েছে বিতর্ক।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. জাফর রানা জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে (পাউবোর ১৩/১৪-১ ও ১৩-১৪-২ পোল্ডার) কয়রা সদর, মহারাজপুর, উত্তর বেদকাশি ও দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের ১৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়। এতে ১৯ হাজার ঘরবাড়ি, সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর মাছের ঘের এবং ৫৫২ হেক্টর কৃষি জমির ফসল ও সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া ১৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সম্পূর্ণ এবং ২১ কিলোমিটার বাঁধের আংশিকসহ অভ্যন্তরীণ কাঁচাপাকা ৩০ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে, ভেঙে যাওয়া খুলনার কয়রা উপজেলার সদর ইউনিয়নের ঘাটাখালি হরিণখোলা, উত্তর বেদকাশির গাজীপাড়া, হাজতখালি, কাটকাটার রত্নাঘেরি বেড়িবাঁধ এখনও মেরামত করা সম্ভব হয়নি। ফলে গত এক সপ্তাহ ধরে জোয়ারের লোনা পানিতে বসতবাড়ি, মাছের ঘের, পুকুর, ক্ষেতখামার ও ফসলের জমিসহ অভ্যন্তরীণ রাস্তাঘাট ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে করে অবর্ণনীয় দুঃখকষ্টে এখানকার ৫টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ লোনা পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে।
স্থানীয় সনাতন সরকার জানান, হাজতখালি বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়ে বিনয় মণ্ডল, পরেশ মণ্ডল, কার্তিক মণ্ডল, পরিতোষ মণ্ডল, হরেন মণ্ডল, গুনধর মণ্ডল, জগদীশ মণ্ডল, পরিমল বরকন্দাজ. অমল বরকন্দাজ, সুনীল বরকন্দাজ ও সাধন মণ্ডলের বসতঘর নদীগর্ভে পুরোপুরি বিলীন হয়েছে। কাটকাটার রত্নাঘেরি বেড়িবাঁধ মেরামত করার পর জোয়ারের চাপে পুনরায় সেটি ভেঙে গেছে।
বেড়িবাঁধ মেরামত প্রসঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, ‘ঘুর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত কয়রায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ মেরামত করতে সরকার সেনা তদারকিসহ সকল ধরণের পদক্ষেপ নিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ঈদের দিন উপজেলার ২ নম্বর কয়রা গ্রামের স্লুইজগেট সংলগ্ন বাঁধ মেরামত শেষে উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে কয়েকটি গ্রামের গ্রামের ৫ সহস্রাধিক লোক হাটু পানিতে ঈদের জামাত আদায় করেন। এ ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হলে পক্ষে-বিপক্ষে নানা বিতর্ক তৈরি হয়। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।