fbpx
হোম জাতীয় রাজস্বের লক্ষ্য কমাল আইএমএফ, তবু আদায় নিয়ে সংশয়
রাজস্বের লক্ষ্য কমাল আইএমএফ, তবু আদায় নিয়ে সংশয়

রাজস্বের লক্ষ্য কমাল আইএমএফ, তবু আদায় নিয়ে সংশয়

0

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণ করতে গিয়ে শুল্ক-কর আদায়ের চাপ বাড়ছে। আইএমএফের দেওয়া লক্ষ্য অনুযায়ী চলতি অর্থবছরে চার লাখ কোটি টাকার বেশি শুল্ক-কর আদায় করতে হবে। কিন্তু বছরের প্রথম চার মাসেই লক্ষ্য অর্জনের পথে বেশ পিছিয়ে পড়েছে এনবিআর। জাতীয় নির্বাচনের আগে অর্থনীতিতে নানা অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছে, হরতাল-অবরোধে ব্যবসা-বাণিজ্যেও ভাটা চলছে। ফলে আইএমএফের দেওয়া লক্ষ্য অর্জন ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে এনবিআরকে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার শুল্ক-কর আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আইএমএই এ লক্ষ্য কমিয়ে দিয়েছে। এনবিআর ও অন্যান্য দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, আইএমএফ দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ের আগে গত মাসে এ দেশের অর্থনীতির সর্বশেষ পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে। তখন একাধিক দফায় এনবিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে সফররত আইএমএফ প্রতিনিধিদল।
শর্ত শিথিল করছে আইএমএফ
ওই বৈঠকগুলোর সূত্রে জানা গেছে, ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আইএমএফ চায়, চলতি অর্থবছরে অন্তত ৪ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা আদায় করুক এনবিআর। অর্থাৎ রাজস্ব আদায়ে এনবিআরের লক্ষ্য কমল ২৯ হাজার কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, গত অর্থবছরেও এনবিআরের জন্য প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দিয়েছিল আইএমএফ। কিন্তু বছর শেষে আইএমএফের দেওয়া সেই লক্ষ্যও অর্জন করতে পারেনি এনবিআর। সব মিলিয়ে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি ছিল ৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।
চলতি বছরের শুরুতে আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে। এ ঋণ পাওয়ার অন্যতম শর্ত ছিল, প্রতিবছর রাজস্ব আদায়ের স্বাভাবিক প্রবণতার চেয়ে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দশমিক ৫ শতাংশ বেশি রাজস্ব আদায় করতে হবে।
শুধু নতুন আইন করে নয়, বরং পুরো প্রশাসনিক কাঠামো অটোমেশনের আওতায় আনতে হবে। কর জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে ‘দেখাদেখির সংস্কৃতি’ বন্ধ করতে হবে। তবে এটি রাতারাতি হবে না। তাই এ বছরও আইএমএফের দেওয়া লক্ষ্য অর্জন করা কঠিন হবে।
আহসান এইচ মনসুর, নির্বাহী পরিচালক, পিআরআই
এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, এনবিআরের পক্ষে আইএমএফের নতুন দেওয়া লক্ষ্যও অর্জন করা সম্ভব হবে না। বর্তমান প্রশাসন দিয়ে এ রাজস্ব লক্ষ্য অর্জন করা যাবে না। এ জন্য ব্যাপক প্রশাসনিক সংস্কার প্রয়োজন। করদাতা ও কর কর্মকর্তাদের মধ্যে দেখাদেখি বন্ধ করতে হবে। এই দেখাদেখি বন্ধ না করতে পারলে হয়রানি কমবে না।
আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, ‘শুধু নতুন আইন করে নয়, বরং পুরো প্রশাসনিক কাঠামো অটোমেশনের আওতায় আনতে হবে। কর জমা দেওয়ায় ক্ষেত্রে দেখাদেখির সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। তবে এটি রাতারাতি হবে না। তাই এ বছরও আইএমএফের দেওয়া লক্ষ্য অর্জন করা কঠিন হবে।’
রাজস্ব আদায়ে সম্ভাব্য ঘাটতি নিয়ে এনবিআরের কর্মকর্তারা আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলতে রাজি হননি। তবে গত মাসের শেষের দিকে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘এটা নির্বাচনের বছর। নির্বাচনের বছরে ডলারেরও সংকট চলছে। আমদানি কমে গেছে; ব্যবসার গতি কমে গেছে। ফলে এমন পরিস্থিতিতে লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে রাজস্ব আয় করা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। সেই সঙ্গে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হলে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ক্ষতিগ্রস্ত হতেই পারে।’
প্রায় এক মাস ধরে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো দফায় দফায় হরতাল-অবরোধ পালন করছে। এতে সরবরাহব্যবস্থা বিঘ্নিত হচ্ছে, ব্যবসা-বাণিজ্যও শ্লথ হয়েছে। এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, রাজনৈতিক এসব কর্মসূচির কারণে অতীতের মতো এবারও রাজস্ব আদায় কমেছে।
ঘাটতি প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা
চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না এনবিআর। বছরের শুরু থেকে নির্ধারিত লক্ষ্য থেকে পিছিয়ে পড়ছে রাজস্ব আদায়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত এই সংস্থা।
চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) শুল্ক, করসহ সব মিলিয়ে ১৩ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকার রাজস্ব কম আদায় হয়েছে। এ সময় সব মিলিয়ে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা। তবে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ১ লাখ ১৬ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা। এটি এনবিআরের সাময়িক হিসাব।
কর্মকর্তারা মনে করছেন, শুল্ক-কর আদায়ের এ ধারা বজায় থাকলে বছর শেষে তিন লাখ কোটি টাকার কিছু বেশি পরিমাণ শুল্ক-কর আদায় হতে পারে। তাহলে বছর শেষে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা। বছরের শেষ দিকে সাধারণত রাজস্ব আদায়ে গতি বাড়ে। তবে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে হরতাল-অবরোধের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচি অব্যাহত থাকলে রাজস্ব আদায় আরও পিছিয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি আট হাজার কোটি টাকার বেশি
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আমদানি, ভ্যাট ও আয়কর—এই তিন খাতের মধ্যে কোনোটির ক্ষেত্রেই চার মাসের লক্ষ্য পূরণ সম্ভব হয়নি। সবচেয়ে বেশি ঘাটতি মূল্য সংযোজন কর বা মূসক বা ভ্যাট খাতে। এ খাতে চার মাসে ঘাটতি ছিল ৪ হাজার ৯৩১ কোটি টাকা। এ সময়ে ৪৩ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্য ছিল। কিন্তু আদায় হয়েছে ৩৮ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা।
অন্যদিকে চার মাসে আমদানি খাতে ৩৬ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকার লক্ষ্যের বিপরীতে ৩২ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। এ খাতে ঘাটতি ৪ হাজার ১১৫ কোটি টাকা। আয়কর খাতে ঘাটতি ৪ হাজার ৮০২ কোটি টাকা। এ সময়ে আয়কর আদায় হয়েছে ৩১ হাজার ২৫৯ কোটি টাকার। এ খাতে লক্ষ্য ছিল ৩৬ হাজার ৬২ কোটি টাকা।

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *