ভয়ংকর হয়ে উঠছে ডেঙ্গু
দিন দিন নতুন করে ঢাকাসহ সারাদেশের হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসকরা।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৪৩৮ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে বলে জানা গেছে। যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। সব মিলিয়ে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি থাকা ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৬০ জনে। তবে এ সময়ে ডেঙ্গুতে নতুন কোনো রোগীর মৃত্যু হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে ৭৬ জন ডেঙ্গু রোগী। দেখা গেছে হাসপাতালের বেডে সিট না পেয়ে বারান্দায় চিকিৎসা অনেকেই। প্রায় সব হাসপাতালে এভাবেই চিকিৎসা নিচ্ছে ডেঙ্গু রোগী। কেউ চিকিৎসা নিচ্ছেন আবার কেউ ছাড়পত্র নিয়ে হাসপাতাল ছাড়ছেন। আসা-যাওয়ার মাঝেই রয়েছে ডেঙ্গু রোগী।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা নেয়া শিশু মাসুমা আক্তারের মা সুমি আক্তার বলেন, আমার ছোট বাচ্চাকে নিয়ে আজ তিন দিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছি। এখন অনেকটা সুস্থ। ডাক্তার বলেছেন, এক দিন পরে বাসায় চলে যেতে পারব।
ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা নেয়া মোস্তফা হোসেন মোহন বলেন, হঠাৎ সন্ধ্যার পরে শরীর গরম হতে দেখে একটি নাপা খেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম জ্বর আসলে সেরে যাবে। পরে মাঝ রাতে শরীর ব্যথা করে আর প্রচণ্ড জ্বর আসে। টেস্ট রিপোর্টে দেখা যায় ডেঙ্গু পজিটিভ। আজ দুই দিন ধরে চিকিৎসা নিচ্ছি।
মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ ডা. মো. জাহিদুল ইসলামের সই করা ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে নতুন ভর্তি হওয়াদের মধ্যে ৩১৫ জন ঢাকার বাসিন্দা। ঢাকার বাইরে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১২৩ জন। সব মিলিয়ে বর্তমানে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন এক হাজার ১৯১ জন।
এছাড়াও, ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি আছেন ৩৬৯ জন। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৫ জনে। এরআগে, গত সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যে বলা হয়েছে, ১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ১১ হাজার ৫৬৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন জেলার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এক দিনের ব্যবধানে, সেটা দাঁড়িয়েছে, ১২ হাজার ৭ জন। মানে এক দিনে নতুন করে ভর্তি হয়েছে ৪৩৮ জন। সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ১০ হাজার ৪০২ জন।
গত ৬ সেপ্টেম্বর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৫ জনের মৃত্যু হয়। যা এ বছর এক দিনে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা। তালিকায় দেখা যায়, দেশের ৫০টি জেলায় হাসপাতালে এ বছর ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা জেলায় রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ঢাকার পর বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে কক্সবাজার জেলার হাসপাতালে। ২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারিকালে ডেঙ্গুর সংক্রমণ কিছুটা কম ছিল। তবে ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। একই বছর দেশব্যাপী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ১০৫ জন। ঢাকা জেলার আশুলিয়া এলাকার শাহাদাত হোসেন মানিক। ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে জিরাবো এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
শাহাদাত হোসেন মানিক বলেন, হঠাৎ করে শরীরে জ্বর অনুভব করতে থাকি। ভেবেছিলাম নাপা খেলে সেরে যাবে। কিন্তু রাতে প্রচণ্ড জ্বর আসে। পরে টেস্ট করে দেখি ডেঙ্গু পজিটিভ। এখন জিরাবোর পিএমকে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছি। এখন জ্বর নেই তবে শরীরে ব্যথা রয়েছে।
মূলত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যাই শুধু প্রকাশ করে। বাস্তবে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর চেয়ে অনেক বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। যার সঠিক পরিসংখ্যান সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের কাছ থেকে পাওয়া যায় না।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে জানতে চাইলে সরকারের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম বলেন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ছাড়াও খুলনা, বরিশাল কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলায় রোহিঙ্গা শিবিরে আমরা মশা জরিপ করেছি। মশা নিধন না করতে পারলে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি সূত্র বলছে, কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) পরীক্ষাগারসহ মোট ১২টি সরকারি বেসরকারি পরীক্ষাগারে গত সাড়ে তিন মাসে ৪ হাজার ২৯২ রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছে। সরকারি হিসাবে দেখা যায়, পুরো কক্সবাজার জেলায় চিকিৎসা নিতে যত ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে, তার চার গুণের বেশি রোগী টেকনাফ উপজেলায় শনাক্ত হয়েছে।