fbpx
হোম আন্তর্জাতিক পুলিশের ছবি তোলায় ১৪০০ দিন বন্দী
পুলিশের ছবি তোলায় ১৪০০ দিন বন্দী

পুলিশের ছবি তোলায় ১৪০০ দিন বন্দী

0

তাইওয়ানের নাগরিক লি মেং-চু। লিকে চীনে আটক থাকতে হয়েছে ১ হাজার ৪০০ দিনের বেশি। সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছেন চীনের কারাগার থেকে। তার বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি ও রাষ্ট্রীয় গোপন নথি চুরির অভিযোগ আনা হয়েছিল। কারণ তিনি চীনের পুলিশের ছবি তুলেছিলেন। খবর বিবিসি।
তিনি বলেন, ‘পাসপোর্ট পরীক্ষার পর আমি খুব স্বস্তি পাচ্ছিলাম। আমি খানিকটা কেঁদেছিলাম। আমি মুক্ত পৃথিবীতে ফিরে এসেছি।’
তাইওয়ানের এই নাগরিক মূলত ব্যবসায়ী। বহুবার তিনি চীনে গিয়েছেন। একসময় তিনি চীনে কাজও করতেন। দেশটির জিয়াংসু প্রদেশের সুঝৌ শহরে থাকতেন। এ ছাড়া বছরে দুবার তিনি চীন যান। কিন্তু একটি প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানের কাজে ২০১৯ সালের আগস্টে শেষবার তিনি যখন চীনে গিয়েছিলেন।
তখন হংকংয়ের গণতন্ত্রকামীরা আন্দোলন করছিলেন। বলা হয়, এই আন্দোলন হংকংয়ের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আন্দোলন। কারণ, ওই সময় প্রায় প্রতি সপ্তাহে পুলিশ–বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হচ্ছিল।
এই বিক্ষোভের প্রতি তাইওয়ানের সমর্থন ছিল। লির নিজেরও ওই বিক্ষোভে সমর্থন ছিল। এ জন্য কৌতূহল থেকে সেই সময় হংকং গিয়েছিলেন। অল্প কিছুক্ষণের জন্য সেখানে ছিলেন। সেখানে মিছিলকারীদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে তিনি একটি লিফলেট তাদের দিয়েছিলেন। এরপর তিনি চীনের মূল ভূখণ্ড শেনঝেনে চলে যান তার এক সহকর্মীর সঙ্গে দেখা করতে।
শেনঝেনে গিয়ে লি দেখেন, শেনঝেন স্টেডিয়ামে শত শত পুলিশ সদস্য জড়ো হচ্ছেন এবং সাঁজোয়া যান সেখানে আনা হয়েছে। স্টেডিয়ামে জড়ো হওয়া পুলিশ সদস্যদের দৃশ্য লি হোটেলকক্ষের জানালা দিয়ে দেখেছিলেন। এরপর তিনি সেখানে গিয়ে এর ছবি তুলেছিলেন। লি বলেন, সেখানে কোনো সতর্কসংকেত দেওয়া হয়নি এবং অনেকেই সেখানে ছবি তুলছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আমি শুধু আমার কৌতূহল থেকে সেখানে গিয়েছিলাম। সেখানে পুলিশদের জড়ো করার বিষয়টি যদি রাষ্ট্রীয় কোনো গোপন কাজই হতো, তাহলে সবকিছু কেন হোটেল থেকে দেখা গেল।’
লি যখন শেনঝেন থেকে তাইওয়ানে ফিরছিলেন, তখনই বিপত্তিটা হয়। বিমানবন্দরে তাকে তার ব্যাগ ও মুঠোফোনে তল্লাশি চালানো হয়। এ সময় তার ব্যাগে লিফলেট পাওয়া যায় এবং মুঠোফোনে ছবি পাওয়া যায়। এরপর চীনের জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাকে একটি হোটেলে আনেন। ওই হোটেলে তাকে আটকে রাখা হয় ৭২ দিন। ওই দিনগুলোয় তিনি ঘর থেকে বের হতে পারেননি।
লি বলেন, ‘আমি আসলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অপেক্ষা করতাম প্রতিদিন। কারণ, ওই সময় ছাড়া আমার কথা বলার সুযোগ ছিল না। আমার কিছু করার ছিল না। প্রতিদিন মেঝে মুছতাম, বিছানার নিচের জায়গাটা পরিষ্কার করতাম, সিলিং পরিষ্কার করতাম। এটা খুবই যন্ত্রণাদায়ক ছিল।’
লির কথা সঙ্গে চীনের অধিকারকর্মীদের বক্তব্য মিলে যায়। তারা বলছেন, জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়েছে—এমন অপরাধে কোনো ব্যক্তিকে আটক করলে ওই ব্যক্তিকে এভাবেই গোপন স্থানে আটক করে রাখা হয়। কোনো বিচার ছাড়াই এভাবে মাসের পর মাস আটক রাখা হয় তাদের।
লির বিচার শুরু হয়। বিচারে তার ১ বছর ১০ মাস কারাদণ্ড হয়। অভিযোগ, বেআইনভাবে রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য পাচার এবং বিদেশি গুপ্তচর হিসেবে কাজ করা।
কারাভোগ শেষে লির দেশে ফেরার কথা। কিন্তু মুক্তি পাওয়ার এক মাস আগে তিনি জানতে পারেন, আগামী দুই বছর তিনি চীনের মূল ভূখণ্ড ছাড়তে পারবে না। এ প্রসঙ্গে অধিকারকর্মী ইয়াকিউ ওয়াং বলেন, চীন সরকার আসলে এটা দেখাতে চাইছিল যে লি আসলে চীনের নাগরিক।
লি ২০২১ সালে জুলাইয়ে মুক্তি পান। এই সময় চীনের পুলিশ তার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করে। পরে তিনি সাংহাই হয়ে তাইওয়ানের ফেরার চেষ্টা করেন। কিন্তু অভিবাসন কর্মকর্তারা তাকে আটকে দেন। এরপর লি বুঝতে পারেন, তিনি আসলে পুলিশের নজরদারিতে আছেন।
লি যখন বুঝতে পারেন তিনি আসলে চীনের মূল ভূখণ্ড থেকে বের হতে পারবেন না, তখন তিনি ১০০টা শহর ঘুরে দেখার সিদ্ধান্ত নেন।
লির জীবন এরপর বদলে যায়। তিনি চীনের নাগরিকদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন। এর মধ্যে আইনজীবী যেমন ছিলেন, তেমনি অধিকারকর্মীও ছিলেন। অনেকেই তার প্রতি সদয় হন। তাকে থাকার বন্দোবস্তও করে দেন। লি জাপান হয়ে তাইওয়ানে ফিরছেন। চীন সম্পর্কে তার যে ধারণা আগে ছিল, তা বদলে গেছে।

 

 

 

 

 

 

ইত্তেফাক

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *