fbpx
হোম অন্যান্য ঢাকা-৮ আসনে আচরণবিধি যেন কাগুজে দলিল
ঢাকা-৮ আসনে আচরণবিধি যেন কাগুজে দলিল

ঢাকা-৮ আসনে আচরণবিধি যেন কাগুজে দলিল

0

মূল সড়কে নির্বাচনী ক্যাম্প ও তোরণ। সরকারি স্থাপনা ও হাসপাতালে টাঙানো হয়েছে ব্যানার।
ফলো করুন নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে বিশালাকৃতির বিলবোর্ডে প্রচারণা করেছেন ঢাকা-৮ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের সমর্থকেরা। সড়ক ও ফুটপাত দখল করে নির্বাচনী ক্যাম্প করা হয়েছে। গতকাল শাহজাহানপুরে
নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে বিশালাকৃতির বিলবোর্ডে প্রচারণা করেছেন ঢাকা-৮ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের সমর্থকেরা। সড়ক ও ফুটপাত দখল করে নির্বাচনী ক্যাম্প করা হয়েছে। গতকাল শাহজাহানপুরেছবি: সাজিদ হোসেন
আচরণবিধি না মেনে সড়ক ও সরকারি জায়গায় করা হয়েছে নির্বাচনী ক্যাম্প। ভোট চেয়ে টাঙানো হয়েছে নির্ধারিত আকারের চেয়ে কয়েক গুণ বড় ব্যানার। ব্যস্ত সড়কে বসানো হয়েছে তোরণ। ব্যানার লাগানো হয়েছে হাসপাতালে, আবাসিক ভবনেও। উড়ালসড়কের পিলারেও লেগেছে পোস্টার। ঢাকা-৮ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের নির্বাচনী প্রচারে আচরণবিধির বিষয়টি যেন শুধুই কাগুজে দলিল।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন ৯টি ওয়ার্ড মিলে ঢাকা-৮ আসন। এসব ওয়ার্ডের মধ্যে গতকাল রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পাঁচটি ওয়ার্ডের (১১, ১৩, ১৯, ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ড) বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেন প্রথম আলোর এই প্রতিবেদক। এসব এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে যত ব্যানার-পোস্টার টাঙানো হয়েছে, তার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আচরণবিধি লঙ্ঘিত হয়েছে।
পরিবাগের টেলিযোগাযোগ ভবনের পাশে বিশাল আকারের ব্যানারে নৌকার পক্ষে ভোট চাওয়া হয়েছে। এই ব্যানার দৈর্ঘ্যে অন্তত ২০ ফুট, প্রস্থে ৮ ফুটের কম নয়। ব্যানারে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর ছবি ছাড়াও আরও ৮ জনের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ছবিটি রমনা থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব হাসানের।
আচরণবিধি অনুযায়ী, পোস্টার বা ব্যানারে প্রার্থী নিজের এবং দলীয় প্রধানের ছবি বাদে অন্য কারও ছবি ব্যবহার করার সুযোগ নেই। ব্যানারের দৈর্ঘ্য ৩ মিটার ও প্রস্থ ১ মিটারের বেশি হতে পারবে না। তবে ঢাকা-৮ সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে যেসব ব্যানার টাঙানো হয়েছে, তার বেশির ভাগই নির্ধারিত আকারের চেয়ে বেশ বড়। আবার প্রার্থী ও দলীয় প্রধানের ছবি ছাড়াও ব্যানারে অন্য অনেকের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।
দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাকরাইল এলাকায় ১৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার হোসেন এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা শেখ আতিকুর রহমান নৌকায় ভোট চেয়ে ব্যানার টাঙিয়েছেন। রঙিন এই ব্যানারেও কয়েকজনের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। আচরণবিধি অনুযায়ী, প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারে ব্যানার-পোস্টার হতে হবে সাদা-কালো। হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিপরীত পাশের ভবনের দেয়ালে বিশালাকৃতির একটি ব্যানার টাঙানো হয়েছে। হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের মূল ভবনেও ব্যানার টাঙিয়ে প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাওয়া হয়েছে। এমনকি হাসপাতাল প্রাঙ্গণে রঙিন ব্যানার টাঙিয়ে বাহাউদ্দিন নাছিমকে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। আচরণবিধিতে বলা আছে, সিটি করপোরেশন এলাকার কোনো ভবন বা দেয়ালে পোস্টার-ব্যানার লাগানো যাবে না।
হাসপাতালের দেয়ালে ব্যানার টাঙানোর বিষয়ে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের উপপরিচালক (প্রশাসন) রুমানা নাজনীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘যাঁরা ব্যানার টাঙিয়েছেন, তাঁরা এখানকার স্থানীয়। তাঁদের ওপর তো কথা বলতে পারি না। বিষয়টি হাসপাতালের পরিচালককে জানিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলব।’
শাহবাগ মোড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভবনেও (বহির্বিভাগ-১) বিশালাকার ব্যানার টাঙিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া খিলগাঁও এলাকায় উড়ালসড়কের পিলারেও এই প্রার্থীর পক্ষে পোস্টার ও ব্যানার টাঙানো হয়েছে।
কাকরাইল এলাকায় রমনা থানা আওয়ামী লীগ নৌকায় ভোট চেয়ে সড়কে তোরণ নির্মাণ করেছে। দুই পাশে বাঁশের কাঠামো দিয়ে এই তোরণ করা হয়েছে।
শাহজাহানপুরের আমতলা এলাকায় ফুটপাতের পাশে ১১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের পক্ষ থেকে নৌকার নির্বাচনী ক্যাম্প করা হয়েছে। ক্যাম্পটির পাশেই রেলওয়ে বাণিজ্যিক মার্কেট। মার্কেটের একাধিক দোকানদার জানিয়েছেন, নির্বাচনী ক্যাম্পটি করা হয়েছে রেলওয়ের জায়গায়।
সেগুনবাগিচা এলাকায় সড়কের ওপর নৌকার নির্বাচনী ক্যাম্প করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ক্যাম্পের ভেতরে একটি টেবিল ও ১২টি চেয়ার পাতা। আরেকটি নির্বাচনী ক্যাম্প করা হয়েছে শাহবাগ-সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ ফটকের পাশে।
আচরণবিধি না মেনে ব্যানার টাঙানো ও তোরণ নির্মাণের বিষয়ে ঢাকা-৮ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক আওলাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘কে বা কারা বিক্ষিপ্তভাবে এসব কাজ করছেন। আমরা জানা মাত্র ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
এই সংসদীয় আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ১০। তবে নৌকার প্রার্থী ছাড়া অন্য প্রার্থীদের পোস্টার-ব্যানার তেমন একটা দেখা যায়নি। অন্য প্রার্থীরা হলেন জাতীয় পার্টির জুবের আলম খান (লাঙ্গল), তৃণমূল বিএনপির এম এ ইউসুফ (সোনালী আঁশ), তরীকত ফেডারেশনের মোস্তাফিজুর রহমান (ফুলের মালা), বিএনএফের সাইফুল ইসলাম (টেলিভিশন), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আবুল কালাম (আম), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির খন্দকার এনামুল নাছির (একতারা), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এস এম সরওয়ার (মোমবাতি), ইসলামী ঐক্যজোটের জিয়াউল হক মজুমদার (মিনার) ও সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের রাসেল কবির (ছড়ি)।
ভোটের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর আগেই আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছিল আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাহাউদ্দিন নাছিমের বিরুদ্ধে। নির্ধারিত সময়ের আগেই শোডাউন (মহড়া) ও জনসমাগম করে নির্বাচনী প্রচার এবং বিভিন্ন স্থানে পোস্টার-ব্যানার লাগানোয় ৯ ডিসেম্বর তাঁকে নোটিশ দিয়েছিল নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি।
রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী, কোনো প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে কেউ নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করার বিধান আছে।
নৌকার প্রার্থীর আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে ঢাকা-৮ আসনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা সুয়ে মেন জো বলেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা এবং অনুসন্ধান কমিটি আচরণবিধির বিষয়গুলো দেখছে। সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *