ডাকাত চক্রের ‘সাইলেন্ট কিলার’ তিনি, কতবার জেলে গেছেন জানেন না নিজেও
তিন দশকের বেশি সময় ধরে ডাকাত চক্রের ‘সাইলেন্ট কিলার’ ‘ল্যাংড়া নজরুল’। জীবনে কতবার জেলে গিয়েছেন জানেন না নিজেও। গত ২০ মার্চ রামপুরার বনশ্রী এলাকায় স্বপ্ন সুপারশপে ডাকাতির ঘটনায় ছয় সহযোগীসহ গ্রেপ্তার হন নজরুল। এরপর বেরিয়ে আসে তার অপরাধের সব কাহিনি। রামপুরা থানায় করা মামলায় গ্রেপ্তার সবাই তিন দিনের হেফাজতে রয়েছে। জানা যায়, এক যুগ আগে দুর্ঘটনায় এক পা কেটে ফেলতে হয় নজরুলের। তারপর থেকেই তার নাম হয়ে যায় ‘ল্যাংড়া নজরুল’। ৫০ বছরের জীবনে জেলে গেছেন অন্তত ৩০ বার। সক্রিয় চারটি আন্তঃজেলা ডাকাত গ্রুপের কাছে নজরুল ‘বড় ভাই’। তার পরামর্শ ছাড়া হয় না কোনো অভিযান। কোনো কোনো সময় ক্রাচে ভর দিয়ে নিজেই চলে যায় অভিযানে।
শৈশবে অসৎ সঙ্গের কারণে সড়ক-মহাসড়কে মালবোঝাই গাড়িতে চুরি করতেন নজরুল। এরপর গ্যারেজে মোটর শ্রমিক হিসেবে কয়েক বছর কাজ করেন। তখন গাড়ির যন্ত্রাংশ চুরির নেশা পেয়ে বসে। মোটর শ্রমিক থাকার সময় আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্যদের সঙ্গে তার পরিচয়। এরপর ডাকাত দলের সদস্য হয়ে কাজ শুরু। এখন পর্যন্ত শাকিল, লিমন, বিপু ও জাকির গ্রুপের হয়ে কাজ করেছেন।
৩০ জনের ডাকাত গ্রুপ রয়েছে নজরুলের। প্রতি রাতে যেকোনো একটি অপারেশনের টার্গেট করে। অধিকাংশ সময় চালকের পাশে নজরুলসহ দু’জন বসে। আর পিকআপের পেছনে তিন থেকে চারজনকে শুইয়ে রাখা হয়। শ্রমিক পরিচয় দিয়ে তারা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যায়। রাস্তায় পুলিশ গাড়ি থামালে পঙ্গু নজরুল কথা বলে। শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় তাকে খুব বেশি জেরা করা হয় না। চলতে চলতে অপারেশন স্পট তারা ঠিক করে।
কোনো রাতে অপারেশনে না গেলেও ভাগ পায় নজরুল। আবার অনেক সময় হাজিরা হিসেবে ২ হাজার টাকা দেয়া হয় তাকে। আর ডাকাতির মালপত্র বিক্রি করে সমান ভাগে ভাগ করে সবাই টাকা নেয়। তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা জানান, গত এক মাসে দেশের বিভিন্ন এলাকায় স্বপ্ন সুপারশপের ছয়টি আউটলেটসহ ১৫টি স্থানে ডাকাতি করে তারা। রাজধানীর বাড্ডা, রামপুরা ও শেরেবাংলা নগর, নীলফামারীর সৈয়দপুর, ফরিদপুর ও মাদারীপুরে স্বপ্ন সুপারশপে নজরুলের সঙ্গীরা হানা দিয়ে লাখ লাখ টাকার মালপত্র নিয়ে গেছে। মূলত এ ধরনের দোকানের কসমেটিকস সামগ্রী এবং নগদ টাকা লুট করা হয়। ২০ মার্চ রাতে বনশ্রীতে স্বপ্ন সুপারশপ থেকে প্রায় ৩ লাখ টাকার মালপত্র নিয়ে যায় এ গ্রুপ। ওই সময় দু’জন নিরাপত্তাকর্মীকে তারা বেদম পিটিয়েছে। এ ঘটনায় এসিআইর ‘ল’ অফিসার আব্দুল গাফফার বাদী হয়ে রামপুরা থানায় মামলা করেন।
রামপুরা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ গোলাম মাওলা জানান, দীর্ঘদিন ধরে ডাকাত চক্রের সদস্যরা লুণ্ঠিত মালপত্র সাভার ও আশুলিয়ায় নির্দিষ্ট কয়েকজন ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে আসছিল। এরা মূলত চোরাই পিকআপ ব্যবহার করে ডাকাতি করে। এরপর গাড়ির নম্বরপ্লেট বদলে ফেলে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নজরুলকে সুপথে আনার চেষ্টা করেও বারবার ব্যর্থ হয় তার পরিবার। অধিকাংশ সময় স্বামী জেলে থাকায় এক যুগ আগে নজরুলের স্ত্রী সেলিনা বেগম বাহরাইন চলে যান। এরপর আর একবারের জন্যও দেশে আসেননি তিনি। এছাড়া দুই ছেলের সঙ্গেও নজরুলের কোনো বনিবনা নেই।
সূত্র: সমকাল