ঘটনাস্থলের পোড়া সিগারেট খোঁজ দিল খুনির
গ্রেপ্তার মো. হাফেজ
বিদেশ যাবেন মো. হাফেজ। এর জন্য টাকা দরকার। সেই টাকা জোগাড় করতে নেমে পড়েন অটোরিকশা চুরিতে। দুটো অটোরিকশা চুরির পর বিক্রি করেন।এরপর আরো টাকার লোভে আবারো চুরি করতে যান হাফেজ। চুরি করতে গিয়ে হত্যা করেন বিমল চন্দ্র মন্ডলকে। ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা সিগারেটের শেষাংশের সূত্র ধরে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেপ্তার করা হয় মো. হাফেজকে।রবিবার (২৫ জুন) পিবিআই সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পিবিআই ঢাকা জেলার ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মো. কুদরত-ই-খুদা। এর আগে ২২ জুন বিকেলে আশুলিয়ার জিরানী বাজার এলাকা থেকে হাফেজকে গ্রেপ্তার করা হয়।পিবিআই জানায়, ১৬ এপ্রিল কারখানা থেকে ফিরে আশুলিয়ার জামগড়া মনির মার্কেট এলাকায় ভাড়া বাসায় বিমলের রক্তাক্ত দেহ দেখতে পায় স্ত্রী-কন্যা। সেসময় তার মুখে কাপড় কাটার কাঁচি (সিজার) ঢোকানো ছিল।
এ ঘটনায় বিমলের স্ত্রী পারুল মামলা করেন। ১৭ এপ্রিল থেকে ৪ জুন পর্যন্ত মামলাটি তদন্ত করে আশুলিয়া থানা পুলিশ। এরপর ৪ জুন পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে পিবিআই ঢাকা জেলা মামলাটির তদন্তভার পায়।
পিবিআইকে বিমলের পরিবারের সদস্যরা জানান, হক্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার ৬ মাস আগে বিমল স্ট্রোক করেন। তখন থেকে তিনি ধূমপান ছেড়ে দেন।কিন্তু হত্যার দিন বিমলের বাসায় সিগারেটের দুইটি শেষাংশ পাওয়া যায়। সিগারেটের ওই শেষাংশের সূত্র ধরেই তদন্ত এগোতে থাকে। বেশ কয়েকজনকে আনা হয় সন্দেহের তালিকায়। তার মধ্যে মো. হাফেজকে সন্দেহের তালিকায় প্রথমে রেখে তার বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয়।
কুদরত-ই-খুদা জানান, তদন্তের এক পর্যায়ে পিবিআই তথ্য-প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ২২ জুন বিকেল ৫টার দিকে আশুলিয়ার জিরানী বাজার এলাকা থেকে মো. হাফেজকে গ্রেপ্তার করে।প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার মো. হাফেজ জানান, বিমল ও হাফেজের স্ত্রী একই পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। এর সুবাদে এবং একই এলাকায় পাশাপাশি বসবাস করায় হাফেজ মাঝেমধ্যেই বিমলের বাসায় যাতায়াত করতেন। ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ৭টায় হাফেজ বিমলের বাসায় যান। তখন বাসায় বিমল একাই ছিলেন। হাফেজ ও বিমল একসঙ্গে টিভি দেখেন এবং খাওয়া-দাওয়া করেন। পরে সিগারেট আনতে বিমলকে বাসার নিচে দোকানে পাঠান হাফেজ।পুলিশ সুপার মো. কুদরত-ই-খুদা আরো বলেন, ওই সময়ে হাফেজ বিমলের স্ত্রী গহনা ও টাকা পয়সা খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। সিগারেট নিয়ে বাসায় এসে বিমল দেখেন ঘর অগোছালো করে হাফেজ কিছু খুঁজছেন। চুরির বিষয়টি বিমল দেখে ফেলায় হাফেজ টেবিলে থাকা কাপড় কাটার কাঁচি দিয়ে প্রথমে বিমলের গলায় ডান পাশে পোঁচ দেন। পরে বিমলের মুখে কাঁচি ঢুকিয়ে হত্যা করে বাসা থেকে একজোড়া সোনা বাঁধানো শাখা, দুই জোড়া কানের দুল এবং দুই জোড়া চুড়িসহ নগদ ৯ হাজার ৫২০ টাকা নিয়ে পালিয়ে যান।