fbpx
হোম অনুসন্ধান অপরাধবার্তা কোরআন অবমাননার গুজব তুলে লালমনিরহাটে নৃশংস হত্যা
কোরআন অবমাননার গুজব তুলে লালমনিরহাটে নৃশংস হত্যা

কোরআন অবমাননার গুজব তুলে লালমনিরহাটে নৃশংস হত্যা

0

রংপুর মহানগরীর পূর্ব শালবন এলাকার মৃত আব্দুল ওয়াজেদের ছেলে শহিদুন্নবী জুয়েল এক বছর ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন। সেই জুয়েলকেই লালমনিরহাটের বুড়িমারীতে পিটিয়ে হত্যার পর আগুন দিয়ে লাশ পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা।

এ ঘটনার একটি ভিডিও মুহুর্তেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এনিয়ে বিভিন্নরকম মন্তব্য ও সমালোচনার ঝড় এখন ফেসবুকে।

পাটগ্রাম থানার কর্মকর্তা সুমন কুমার মোহন্ত এ বিষয়ে চেঞ্জ টিভিকে জানান, গতকাল (২৯ অক্টোবর) আসরের পর লালমনিরহাট পাটগ্রাম বুড়িমারী ইউনিয়ন জামে মসজিদে নামাজ আদায় করে জুয়েল নামে একজন মসজিদের খাদেমকে গোয়েন্দার লোক পরিচয় দিয়ে কোরআন শরীফ রাখার তাকগুলো দেখতে থাকে। নিচের তাকগুলো দেখা শেষ হলে ওপরের তাক দেখার জন্য নিচের তাকে পা দিয়ে জুয়েল উঠতে চাইলে সেখানে থাকা কোরআন শরীফে পা লাগে। এর পর পা লাগা বিষয়কে ইচ্ছাকৃতভাবে লাগিয়েছে বলে গুজব উঠলে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করে এবং উত্তেজিত জনগণকে আমাদের নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। এক পর্যায়ে জুয়েল নামে ব্যক্তিকে পিটিয়ে মেরে আগুনে দেয় দুর্বৃত্তরা। আমরা চেষ্টা করেও তাকে আটকিয়ে রাখতে পারিনি। তবে তার সঙ্গে থাকা বন্ধু সুমনকে আমরা সরিয়ে রেখেছি।

এ বিষয়ে মসজিদের খাদেম জানান, ইচ্ছাকৃত পা দেয়নি কিন্তু পাশে এক ডেকোরেটর দোকান মালিক হুসেন অতি উৎসাহী হয়ে তাকে ও তার সঙ্গে আসা বন্ধু সুমনকে মারধর করে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন দু’জনকে বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদে নিরাপত্তায় রাখলেও  এক পর্যায়ে প্রশাসনের উপস্থিতিতিতে জুয়েলকে পিটিয়ে মেরে ফেলার পর আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয় বলে বিভিন্ন সূত্রে তা নিশ্চিত হওয়া যায়।

তবে এ ঘটনায় ইনচার্জ সুমন কুমার মোহন্ত আরও জানান, দোষীদের গ্রেফতারের জন্য কাজ করছে প্রশাসন। আমরা নিশ্চিত হয়েছি কারা কারা জড়িত। আর লাশ ময়না তদন্ত শেষে ঘটনার বিস্তারিত জানা যাবে।

পরিবার থেকে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকালে সুমন নামের এক বন্ধুর সাথে মোটরসাইকেল যোগে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন জুয়েল। বড় বোন লিপি জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৮ টার দিকে জুয়েলের বউ আমাকে ফোন দিয়ে জানায় তোমার ভাই আবারো সারারাত ঘুমাচ্ছে না। সকাল সাড়ে সাতটার দিকে বাইরে গেছে। তখন আমি জুয়েলকে ফোন দেই। তিনবার ফোন দেয়ার পর অন্য একজন ফোন ধরে বলে আমার নাম সুমন, ওর বন্ধু, জুয়েল বাথরুমে গেছে।

পরে জুয়েল আমাকে ফোন করে বলে, আপা তুই চিন্তা করিস না। আমি একটা দুর্নীতি ধরেছি। ডিসির মোড়ে আছি। ডিসিকে বিষয়টি জানাবো। আমার সাথে র‌্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট আছে। তুই চিন্তা করিস না। তারা আমাকে প্রোটেকশন দেবে। আমাদের পরিবারকে প্রোটেকশন দেবে। তখন আমি ওকে বলি, তোর ছেলেটা অসুস্থ। তুই তাড়াতাড়ি বাড়ি আয়। ওকে ওষুধ খাওয়াবি। তখন সে বলে আমার জন্য চিন্তা করিস না, আমি আসতেছি। এই বলে ফোন কেটে দেয়। পরে বহুবার ফোন দিয়েছি কিন্তু আর ধরে নি। আমার ভাইকে যারা এভাবে মারল আমি তাদের ফাঁসি চাই।

জুয়েল ১৯৮৬ সালে রংপুর জেলা স্কুল থেকে মেট্রিক পাশের পর কারমাইকেল কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সায়েন্স থেকে স্নাতক ও মাস্টার্স পাশের পর ১৯৯৬ সালে রংপুর ক্যান্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে সহকারী লাইব্রেরিয়ান পদে যোগ দেন। ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ২০১৯ সালে তাকে সেখান থেকে বরখাস্ত করা হলে তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন।

দুইদিন আগেও ফজরের নামাজের পর হাটতে বেরিয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি মিলাতে সুরা বাকারার তরজমা শুদ্ধভাবে শুনিয়ে ছিলেন। তার এমন মৃত্যুর জন্য দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান তিনি।

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *