fbpx
হোম জাতীয় কিছু স্মৃতিকথা
কিছু স্মৃতিকথা

কিছু স্মৃতিকথা

0

১৩ আগস্ট আমাদের এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হলে দেরি না করে সকালবেলা কিছু মুখে দিয়েই ঢাকা কলেজের দিকে রওনা দিই। কলেজের মাইনরিটি হোস্টেলে আমাদের সাভার অধর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে এক বছরের সিনিয়র বড় ভাই নিখিল সরকার থাকেন, তার রুমে হাজির হই। তিনি আমাকে দেখে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞাসা করেন রেজাল্ট কী? উত্তরে বললাম, বাণিজ্য শাখা থেকে দ্বিতীয় বিভাগ পেয়েছি। উনি বললেন, ‘বেশ! কোনো সমস্যা নেই, চান্স পেয়ে যাবি। এক-দুই দিন আমার সাথে থাক।’ আমিও রাজি হলাম। নিউ মার্কেট, নীলক্ষেত, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ঘুরে ঘুরে দেখলাম দুই দিন। ১৪ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গেলাম। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসবেন বলে এলাকায় নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলা হয়েছে। কেমন যেন থমথমে অবস্থা। ভয় ভয় করছে, এমনি পরিস্থিতিতে রাত ৮টার দিকে হোস্টেলে চলে আসি। অনেক গল্পগুজব করে রাতে ঘুমিয়ে পড়ি। ভোররাতে গোলাগুলির আওয়াজ ভেসে আসে। ভোর ৬টা ৩০ মিনিটে ঘুম থেকে উঠে নিখিলদাসহ কয়েক জন শিক্ষার্থী কলেজের মেইন গেটে এসে দেখি দুটি সেনাবিহিনীর জিপ বন্দুক তাক করে আছে কলেজের দিকে। আমরা মেইন সড়কে হাঁটতে উদ্যত হলে সেনাবাহিনীর জোয়ানরা হাত ঈশারা করে ভেতরে যেতে বলেন। আমরা হোস্টেলে ফিরে আসি। কলেজ ক্যাম্পাসের মাঠে একদল শিক্ষার্থী ফুটবল খেলছে। এটা নিত্যদিনের দৃশ্য। যা হোক, হোস্টেলে আসার সঙ্গে সঙ্গে সহকারী হোস্টেল সুপার ফণীভূষণ রায় (ঢাকা কলেজের প্রধান হিসাবরক্ষক) সব শিক্ষার্থীকে একসঙ্গে জড়ো করে ভয়ার্ত কণ্ঠে বলছেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে, তোমার কেউ রুম থেকে বের হবে না। কার্ফ্যু জারি করা হয়েছে!’ খবর শুনে আমরা হতবাক! চিন্তায় অস্থির! ভাবছি, আর বোধ হয় বাড়ি যেতে পারব না। বাবা-মা, ভাইবোন কারো সঙ্গে দেখা হবে না। মৃত্যু ঘনিয়ে আসছে এমনি পরিস্থিতিতে ফণি স্যারের বাসায় কয়েক জন প্রবেশ করি। উনি থাকতেন হোস্টেলের দ্বিতীয় তলায়। স্যারের বাসায় সাদাকালো একটি টেলিভিশন ও একটি তিন ব্যান্ডের রেডিও ছিল। আমরা রেডিওতে মেজর ডালিমের ঘোষণা শুনতে পাই। ডালিম একজন বরখাস্তকৃত সেনা অফিসার।
তিনি রেডিওতে ঘোষণা করে বলছেন, ‘আমি মেজর ডালিম বলছি, শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হইয়াছে এবং তার সরকারকে উত্খাত করা হইয়াছে।’ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কার্ফ্যু জারি করা হয়। নতুন প্রেসিডেন্টের নির্দেশক্রমে ১৫ আগস্ট শুক্রবার থাকায় জুমার নামাজের জন্য ২ ঘণ্টা কার্ফ্যু শিথিল করা হয়। ১৮ তারিখে আমি বাড়িতে যাই। ঢাকা থেকে সাভারে নেমে নৌকায় তিন মাইল পথ পশ্চিম দিকে ধামরাই থানার আড়ালিয়া গ্রামে আমাদের বাড়ি। তখন বর্ষাকাল, চারদিকে থইথই জল। নৌকায় উঠতেই কয়েক জন সহযাত্রী আমার দিকে আঙুল তুলে অশ্লীল গালিগালাজ করে।বলতে থাকে, কীরে তোদের নেতা গেল কই?’ বাড়ির ঘাটে নেমেই বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকলে বাবাও কান্না চেপে রাখতে পারেন না। ’৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের পরবর্তী কয়েক মাস আমাদের এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা চরম নির্যাতনের শিকার হয়েছে। চিহ্নিত আওয়ামী লীগ নেতারা অনেকেই দেশছাড়া। উল্লেখ্য, যারা আমাকে, বঙ্গবন্ধুকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেছিল, তারা এখন আওয়ামী লীগের নেতা প্রচণ্ড দাপটের সঙ্গে রাজনীতি করছে। আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তিও তারা নষ্ট করে চলেছে।

ইত্তেফাক

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *