fbpx
হোম অনুসন্ধান অপরাধবার্তা কলেজছাত্র সিবলীকে হত্যার চার দিন পর মুক্তিপণ নেন খুনিরা
কলেজছাত্র সিবলীকে হত্যার চার দিন পর মুক্তিপণ নেন খুনিরা

কলেজছাত্র সিবলীকে হত্যার চার দিন পর মুক্তিপণ নেন খুনিরা

0

চট্টগ্রামের রাউজানে কলেজছাত্র ও মুরগির খামারের তত্ত্বাবধায়ক সিবলী সাদিককে (১৯) হত্যার চার দিন পর পরিবারের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ হাতিয়ে নেন খুনিরা। মুক্তিপণের টাকা নেওয়া আসামি অং ফ্রাই সিং মারমা (৪৬) গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রামের সিনিয়র সহকারী ম্যাজিস্ট্রেট জোনায়েদ আহমদের আদালতের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
এর আগে একই দিন সকালে নগরের চান্দগাও সনোয়ারা আবাসিক এলাকার এক আত্মীয়ের বাসা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার অং ফ্রাই সিং মারমা রাঙামাটি জেলার কাউখালীর মাঝের পাড়া গ্রামের বৌদ্ধ অং মারমার ছেলে। অং ফ্রাই সিং আদালতে বলেছেন, সিবলী সাদিককে হত্যার পর পাহাড়ে লাশের দেহাবশেষ গুম করেন তাঁরা। এরপর ছেলেকে ফিরিয়ে দেওয়ার নামে তাঁর স্বজনদের ফোন করে ডেকে নিয়ে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণও আদায় করেন।
আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে গ্রেপ্তার অং ফ্রাই সিং মারমা বলেন, গত ২৮ আগস্ট তিনিসহ সাত-আটজন যুবক সিবলীকে অপহরণ করে গহিন পাহাড়ে নিয়ে যান। পরদিন হত্যা করে লাশ টুকরা করে পাহাড়ে ছড়িয়ে রাখেন। পরে পরিবারের কাছে মুক্তিপণ চান। এরপর সিবলীর স্বজনেরা মুক্তিপণ দিতে রাজি হলে বান্দরবান চলে যান অং ফ্রাই সিং। সিবলীর বাবা ২ সেপ্টেম্বর দুজনকে সঙ্গে নিয়ে বান্দরবান জেলা সদরের একটি গহিন পাহাড়ে অং ফ্রাই সিংয়ের হাতে মুক্তিপণের দুই লাখ টাকা দিয়ে আসেন।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল হারুন আজ শুক্রবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, অং ফ্রাই সিং মুক্তিপণের দুই লাখ টাকা বুঝে নেন পরিবার থেকে। তিনিও পুরো ঘটনায় জড়িত ছিলেন বলে স্বীকার করেছেন।
রাউজানে কলেজছাত্র হত্যার আসামি পিটিয়ে মারার ঘটনায় পুরুষশূন্য পুরো গ্রাম
ওসি আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, গত ২৮ আগস্ট গভীর রাতে সিবলীকে খামার থেকে অপহরণ করেন তাঁর সহকর্মী পাঁচ শ্রমিকসহ আরও তিন–চারজন। এরপর তাঁকে আট কিলোমিটার দূরে গহিন পাহাড়ের জঙ্গলে নিয়ে আটকে রাখা হয়। পরদিন ২৯ আগস্ট তাঁকে সেই পাহাড়ে গলা কেটে করে হত্যা করে দেহের খণ্ডিত অংশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দিয়ে তাঁরা ফিরে আসেন খামারে। এর মধ্যে অপহরণের ঘটনা জানাজানি হলে সেদিনই খামার থেকে পালিয়ে যান ওই শ্রমিকেরা। পরে ৩১ আগস্ট চাওয়া হয় মুক্তিপণ। এরপর ২ সেপ্টেম্বর সিবলীর বাবা বান্দরবানে গিয়ে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ তুলে দেন অং ফ্রাই সিংয়ের হাতে।
মুরগির খামারে ঝগড়ার জেরে কলেজছাত্র সিবলিকে অপহরণ করে গলা কেটে হত্যা করেন শ্রমিকেরা
এর আগে গত মঙ্গলবার আরও দুই আসামি রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার বড়ইছড়ির সুইচিংমং মারমা (২৪) ও রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার অংথুইমং মারমা (২৫) জবানবন্দিতে আদালতে জানিয়েছিলেন, মাসখানেক আগে খামারের কাজ নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সিবলীর সঙ্গে পাঁচ-সাতজন শ্রমিকের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। এর পর থেকে সিবলীর ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন ওই শ্রমিকেরা। তবে এ ঝগড়ার মীমাংসা করে দিয়েছিলেন খামারের মালিকেরা। কিন্তু ভেতরে-ভেতরে এর ক্ষোভ রয়ে গিয়েছিল শ্রমিকদের মধ্যে। তাঁরা পরিকল্পনা করতে থাকেন, সিবলীকে শায়েস্তা করবেন। এই ক্ষোভ থেকে তাঁরা সিবলীকে হত্যা করেন।
আসামি অং ফ্রাই সিং মারমার জবানবন্দি থেকে জানা যায়, এ হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন মামলার প্রধান আসামি উমংসিং মারমা (২৬)। তাঁকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ গত সোমবার পাহাড় থেকে সিবলীর লাশের দেহাবশেষ নিয়ে ফেরার পথে বিক্ষুব্ধ জনতা উমংসিংকে ছিনিয়ে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন।
নির্মম হত্যাকাণ্ডের স্বীকার সিবলী সাদিক রাউজান উপজেলার কদলপুর ইউনিয়নের পঞ্চপাড়া গ্রামের মুহাম্মদ শফির ছেলে। তিনি স্থানীয় কদলপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার পাশাপাশি মুরগির খামারে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে চাকরি করতেন। পিকআপ ভ্যানের চালক শফির দুই ছেলের মধ্যে তিনি বড় ছিলেন।

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *