fbpx
হোম অন্যান্য একসঙ্গে ৪০০০ কুমির বেড়ে উঠছে ভালুকার হাতিবেড় গ্রামে !
একসঙ্গে ৪০০০ কুমির বেড়ে উঠছে ভালুকার হাতিবেড় গ্রামে !

একসঙ্গে ৪০০০ কুমির বেড়ে উঠছে ভালুকার হাতিবেড় গ্রামে !

0

ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশের প্রাচীন শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম ময়মনসিংহ শহর। বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল ময়মনসিংহ বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। এটি ছিল তৎকালীন ভারতীয় উপমহাদেশের বৃহত্তম জেলা। এখন অবশ্য ধীরে ধীরে এর পরিধি কিছুটা সংকীর্ণ হয়ে এসেছে। ময়মনসিংহকে লোকসংস্কৃতির তীর্থস্থান বলা হয়। ডক্টর দীনেশচন্দ্র সেনের ময়মনসিংহ গীতিকা বিশ্ব দরবারে বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সম্মানের সঙ্গে তুলে ধরেছে। মহুয়া, মলুয়া, কাজলরেখাসহ কালজয়ী পালাগুলো এখনো মানুষের হৃদয় জুড়িয়ে দেয়।

এই ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার হাতিবেড় গ্রামে গড়ে উঠেছে কুমিরের খামার। এই কুমিরের খামারে চাষাবাদ করা হয় অসংখ্য কুমির। ছোট ছোট পুকুরের মধ্যে রয়েছে হাজারো কুমিরা। কেউ রয়েছে ঘুমিয়ে কেউবা জেগে, কেউ ছুটাছুটি করছে দারুণ এক দৃশ্য সেখানে। বিপদে পড়লে অনেক সময় আমরা খাল কেটে কুমির আনার কথা বলি। তবে এখানে খাল নয় পুকুর কেটে কুমির আনা হয়েছে। আবার ভাববেন না যে, বিপদ ডেকে আনার জন্য কুমিরগুলোর চাষ করা হচ্ছে। আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য এই কুমিরের খামারটি গড়ে তোলা হয়। ২০০৩ সালে কুমিরের খামার করার পরিকল্পনা করেন মেজবাউসহ কয়েকজন উদ্যোক্তা। খামারের নাম দেন তারা রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেড।

২০০৪ সালে সরকারের অনুমতি পায় খামারটি। এরপর মালয়েশিয়া থেকে সোয়া কোটি টাকা ব্যয় করে কিনে আনা হয় ৭৫টি কুমির। এরপর বিশেষভাবে তৈরি পুকুরে ছেড়ে দেয়া হয় কুমিরগুলো। ২০০৬ সালের আগস্ট মাসে দুইটি কুমির প্রথম ডিম দেয়। প্রথম বছরের ডিম ও বাচ্চা কম হলেও ক্রমশ বাড়তে থাকে কুমিরের বাচ্চার সংখ্যা। ২০১৩ সালে আমদানি করা হয় আরো ২১টি কুমির। অবশ্য ২০১২ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন কারণে মারা যায় প্রায় ১০টি কুমির। বর্তমানে এই খামারের ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় চার হাজার কুমির রয়েছে। শুরুতে খামারের আয়তন ১৪ একর হলেও এখন তা গিয়ে ঠেকেছে ২১ একরে। এই খামারে বড় কুমিরের জন্য রয়েছে ৪০টি পুকুর, রফতানিযোগ্য কুমিরের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় তৈরি করা হয়েছে আরো অনেকগুলো পুকুর। এই খামার থেকে অর্ধ শতাধিক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। বাহ্যিকভাবে কুমির চাষের পাশাপাশি এই খামারে এলাকায় ৫০০০ ফলজ ও বনজ গাছ-গাছালি রয়েছে। যা খামার এলাকার পরিবেশকে করেছে নৈস্বর্গীক।

ডিম থেকে কুমিরের বাচ্চা ফোটার পর কিছু দিন পর্যন্ত হ্যাচারিতে রাখা হয়। কুমিরের প্রজননকাল এপ্রিল-মে মাসে অর্থাৎ বর্ষাকালে। এসময় কুমিরের ডিম সংগ্রহ করে রাখা হয় আন্তর্জাতিক মানের ইনকিউবেটরে। এক্ষেত্রে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হতে সময় লাগে ৮০ থেকে ৮৫ দিন। ডিম ফুটে স্ত্রী নাকি পুরুষ কুমির বের হবে তা নির্ভর করে তাপমাত্রার উপর। ইনকিউবেটরে তাপমাত্রা যদি ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হয় তাহলে কুমিরটি পুরুষ হয়। আর ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম তাপমাত্রা হলে ডিম ফুটে স্ত্রী কুমির জন্মে। ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হওয়ার পর তাদেরকে কিছুদিন ছোট ছোট হাউসে রাখা হয়। একটু বড় হওয়ার পর হ্যাচারি থেকে তাদেরকে নিয়ে আসা হয় একটি পুকুরে। সেখানেই কুমির ছানাদের শৈশব কাটে। সেখানে তারা একটু বড় হয়ে গেলে পৃথক পৃথক পুকুরে তাদেরকে স্থানান্তর করা হয়। নিয়মিত পরিচর্যায় থাকা এসব কুমির ছানাগুলোর চামড়া তিন থেকে চার বছর পর সংগ্রহ করার উপযুক্ত হয়।

২০১০ সালে জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় এক লাখ ডলারের হিমায়িতকরণ কুমির পাঠানোর মধ্য দিয়ে রফতানি কার্যক্রম শুরু করে খামারটি। গত চার বছরে প্রকল্প থেকে ১২৫৬টি কুমিরের চামড়া রফতানি করা হয়েছে। ২০২১-২২ সালের এই খামার থেকে প্রতিবছর ১০০০ কুমিরের চামড়া রফতানি করা সম্ভব বলে মনে করছে উদ্যোক্তারা। চামড়ার পাশাপাশি কুমির দাঁত, হাড়সহ অন্যান্য অংশ বিদেশে রফতানি করার পরিকল্পনা রয়েছে খামার কর্তৃপক্ষের।

রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেডের ব্যবস্থাপক ডঃ আবু মোহাম্মদ আরিফ বলেন, বাংলাদেশের সিলেট, ময়মনসিংহ, খুলনাসহ বেশ কিছু স্থানে কুমির চাষ করা যেতে পারে। মূলত লবণাক্ত পানিতে কুমির চাষ করা সম্ভব। সুন্দরবনে যে কুমির পাওয়া যায় আমাদের খামারেও সেই প্রজাতির কুমির চাষ করা হয়। লবণাক্ত পানির কুমিরের চামড়া চাহিদা অনেক বেশি। এর গুণগতমান অনেক ভালো এজন্য এর চাহিদাও বেশি।

কুমিরের রোগ বালাই নেই বললেই চলে। ছোট বাচ্চাদের প্রতিদিন খাবার হিসেবে দেয়া হয় মাংসের টুকরা। আর বড় কুমিরের খাবার দেয়া হয় সপ্তাহে একদিন। মুরগির মাংসের পাশাপাশি গরুর মাংস ও মাছ দেয়া হয় কুমিরদের খাবারে। কুমিরগুলো বেশি নড়াচড়া করলে ক্ষুধার্থ বেশি হয়। তাই অধিকাংশ সময়ই তারা চুপচাপ ঘুমিয়ে থাকে। আর কেউ ঘুরতে এসে যাতে কুমিরের ঘুম না ভাঙায় সেদিকেও খেয়াল রাখে খামার কর্তৃপক্ষ। খামারের কুমিরগুলো অনেকটা পোষা পশু-পাখির মতো। খাবার দেয়ার জন্য ডাক দিলেই কাছে চলে আসে। এই খামারটি পর্যটকদের জন্য একেবারেই উন্মুক্ত নয়। তবে দেখার জন্য আগে থেকে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হয়।

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *