fbpx
হোম জাতীয় উন্নত জীবনের আশায় ঝুঁকি নিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি: গবেষণা
উন্নত জীবনের আশায় ঝুঁকি নিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি: গবেষণা

উন্নত জীবনের আশায় ঝুঁকি নিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি: গবেষণা

0

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট হলে আজ রোববার সকালে আয়োজিত সেমিনারে ‘দ্য ডিসপ্লেসড রোহিঙ্গাস: আ টেল অব আ ভালনারেবল কমিউনিটি’ শীর্ষক একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিরা
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট হলে আজ রোববার সকালে আয়োজিত সেমিনারে ‘দ্য ডিসপ্লেসড রোহিঙ্গাস: আ টেল অব আ ভালনারেবল কমিউনিটি’ শীর্ষক একটি বইয়ের
ইউরোপের উন্নত দেশগুলোয় দারুণ ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা আছে বলে বিশ্বাস করেন তাঁরা। উন্নত জীবনযাপন, ভালো আয় ও উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগের সুবিধার হাতছানি আছে। এসব কারণেই অনিশ্চয়তা ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উন্নত জীবনের আশায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যেতে চান তরুণেরা।
আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ‘সমুদ্রের ওপারে স্বপ্ন: ইউরোপে অনিয়মিত বাংলাদেশি অভিবাসনের বাস্তবতা উন্মোচন’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে উপস্থাপন করা নিবন্ধে এসব তথ্য জানানো হয়। আজ রোববার সকালে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট হলে এ সেমিনারের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্সের (এসআইপিজি) সেন্টার ফর মাইগ্রেশন স্টাডিজ (সিএমএস)। এতে বলা হয়, অন্তত ২২ শতাংশের জন্য উন্নত জীবনের আশাই অভিবাসনের ক্ষেত্রে মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করেছে।
দেশে ফেরত আসা ১০০ অভিবাসীর সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে গবেষণার তথ্য তুলে আনা হয়। ২০২১ সালের আগস্ট থেকে ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত ঢাকার কেরানীগঞ্জ, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, নরসিংদী ও শরীয়তপুরে এসব ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। এর মধ্যে ৪৫ জন ইউরোপে প্রবেশের আগেই অন্য দেশ থেকে ফেরত এসেছেন। ৩০ জন ইউরোপে ঢুকলেও কোনো কাজ করার আগেই ধরা পড়ে দেশে ফিরেছেন। আর বাকি ২৫ জন কিছু সময় কাজ করার পর ধরা পড়ে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন।
২০০৯ থেকে শুরু করে ২০২১ সাল পর্যন্ত ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশ করেছে ৬২ হাজার ৫৮৩ জন বাংলাদেশি। কেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইউরোপ যেতে চেষ্টা করেছেন, ফেরত আসা কর্মীদের কাছ থেকে সেই উত্তর খুঁজেছে সিএমএস। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৬২ শতাংশের পরিবারের কোনো না কোনো সদস্য বিদেশে থাকেন।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভিবাসনপ্রত্যাশীরা যে বিপজ্জনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হন, তা প্রায়ই এজেন্ট, মধ্যস্বত্বভোগী (দালাল), মধ্যস্থতাকারী, পেশাদার চোরাচালানকারী এবং অপরাধী নেটওয়ার্কগুলোর মাধ্যমে পরিচালিত হয়। দেশে সুযোগ কমে যাওয়া, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনকে এই ঝুঁকিপূর্ণ অভিবাসন প্রচেষ্টার মূল চালিকা শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
অনিয়মিত উপায়ে ইউরোপে পাড়ির ক্ষেত্রে চারটি কারণ চিহ্নিত করেছে সিএমএস। এর মধ্যে প্রথমত, ইউরোপে আশ্রয় নেওয়ার আইনি সুবিধা কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতির আশা। যাঁরা ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করেন, তাঁদের কোনো না কোনো স্বজন ইউরোপে থাকেন। ফিরে আসা কর্মীরা সবাই বলেছেন, ইউরোপে প্রবেশের পর আশ্রয় ও আইনি সুবিধা পাওয়ার সুযোগ আছে। অভিবাসনের ক্ষেত্রে ইউরোপের উন্মুক্ত দুয়ারনীতি একটা সম্ভাবনার জায়গা হিসেবে অনিয়মিত অভিবাসনকে উদ্বুদ্ধ করে।
দ্বিতীয়ত পরিবারের প্রভাব ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা। এদের ৫২ শতাংশ বলেছে, তারা নিজেদের বর্তমান পরিস্থিতির ওপর সন্তুষ্ট ছিল না। আবার ৭ শতাংশের অসন্তুষ্টি ছিল রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে। লেখাপড়া করে জীবনে কী হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ছিল ৩৩ শতাংশ। তৃতীয়ত, নতুন অভিযাত্রার হাতছানি। উন্নত জীবনযাপন ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর ইউরোপ। বিশ্বভ্রমণের ইচ্ছা তাই তাঁদের ইউরোপের পথে নিয়ে গেছে। চতুর্থত, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাওয়া বিভিন্ন তথ্য তাঁদের প্রভাবিত করেছে।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, ভালো জীবন, অর্থনৈতিক নিশ্চয়তার স্বপ্নই তরুণদের ইউরোপে যেতে আকর্ষণ করে। অনিয়মিত উপায়ে অভিবাসনের ক্ষেত্রে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। এখন এর সমাধানে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। মানব পাচারের ক্ষেত্রে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি স্পষ্ট। এনএসইউর উপাচার্য আতিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলের ডেপুটি হেড অব মিশন বার্ন্ড স্প্যানিয়ার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক সৈয়দা রোজানা রশীদ, এনএসইউর এসআইপিজির সিনিয়র গভর্ন্যান্স স্পেশালিস্ট ও সাবেক পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক প্রমুখ। এনএসইউর শিক্ষক ও সিএমএস সদস্য মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন সিকদার ও সেলিম রেজা গবেষণাটি করেছেন। অনুষ্ঠানে নিবন্ধ উপস্থাপন করেন সেলিম রেজা এবং সঞ্চালনা করেন জালাল উদ্দিন। এ ছাড়া এস কে তৌফিক এম হক, বুলবুল সিদ্দিকী ও মাহমুদুর রহমান ভূঁইয়া সম্পাদিত ‘দ্য ডিসপ্লেসড রোহিঙ্গাস: আ টেল অব আ ভালনারেবল কমিউনিটি’ শীর্ষক একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয় সেমিনারে।
অভিবাসী অধিকারকর্মীদের অংশগ্রহণে এই বিপজ্জনক অভিবাসনপ্রক্রিয়ার কারণ, ঝুঁকি ও পরিণতি নিয়ে আলোচনা হয় সেমিনারে। এতে অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ে আরও বেশি তথ্য সংগ্রহ এবং গবেষণার গুরুত্বের ওপর জোর দেন বক্তারা। তাঁরা বলেন, অভিবাসীদের কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য তাঁদের আইনি অবস্থা ও তাঁদের অধিকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং রক্ষা করে এমন নীতিগুলোর পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরতে হবে। সেমিনারে মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত অপরাধী নেটওয়ার্কগুলো নির্মূলে সমন্বিত প্রচেষ্টার আহ্বান জানানো হয় এবং ঝুঁকিপূর্ণ অভিবাসীদের সুরক্ষায় তাঁদের সচেতনতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *