fbpx
হোম অনুসন্ধান অপরাধবার্তা মিয়ানমার থেকে আসছে গবাদিপশু | গরু মোটাতাজাকরণের নামে সক্রিয় অসাধু চক্র
মিয়ানমার থেকে আসছে গবাদিপশু | গরু মোটাতাজাকরণের নামে সক্রিয় অসাধু চক্র

মিয়ানমার থেকে আসছে গবাদিপশু | গরু মোটাতাজাকরণের নামে সক্রিয় অসাধু চক্র

0

(চেঞ্জ টিভি.প্রেস এর চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ প্রতিনিধি ছৈয়দ আলমের বিশেষ প্রতিবেদন)

সামনে কোরবানির ঈদ। আর কোরবানির ঈদ মানেই কক্সবাজার জেলা জুড়ে পশু বেচাকেনার হিড়িক। এ ঈদ উপলক্ষে দু-এক সপ্তাহ আগে থেকেই চলে গরু, মহিষ, ছাগলসহ বিভিন্ন ধরনের পশু বেচাকেনা। বিশেষ করে কক্সবাজারে কোরবানির জন্য গরুকেই গুরুত্ব দেয়া হয় বেশি। পছন্দের তালিকায় গরু শীর্ষে বলেই এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী।

অধিক মুনাফা লাভের আশায় স্বল্প সময়ে জেলার বিভিন্ন এলাকায় বেশি মোটাতাজা করতে তারা গরুকে খাওয়ান নানা ধরনের ট্যাবলেট এবং মাংসপেশিতে প্রয়োগ করেন নিষিদ্ধ ইনজেকশন, যা গরু ও মানুষ উভয়ের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, কৃত্রিমভাবে গরুর মাংসপেশিতে ডেক্সামেথাসন ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয় এবং খাওয়ানো হয় স্টেরয়েড গ্রুপের বিভিন্ন ট্যাবলেট। গরুর প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যায় এ ট্যাবলেট খাওয়ালে। এর ফলে শরীরে পানি জমতে শুরু করে। ফলে গরু মোটাতাজা দেখায়। এ গরু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জবাই না করলে মারা যেতে পারে অথবা এর গোশত কমতে পারে। এমন গরুর গোশত খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এসব ওষুধ তীব্র তাপেও নষ্ট হয় না। ফলে মানবদেহে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে। এ ধরনের গরুর গোশত খেলে মানুষের কিডনি, লিভারসহ বিভিন্ন অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমনকি ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। অপরদিকে গরু বাজারে অন্যবারের মত কিছুটা ইয়াবা ব্যবসায়ীদের দখল থেকে মুক্ত থাকবে এবার। গেল বছরেও তাদের অবৈধ টাকার কাছে গরিব ও মধ্যবিত্তরা অধিক মূল্যে চাহিদামত পবিত্র কোরবানী ঈদের জন্য গরু ক্রয় করতে হয়েছিল। ঠিক এ বছর বাঘা বাঘা ইয়াবা কারবারী ক্রসফায়ারে নিহত, কারাগারে রয়েছে অধিকাংশ তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারী। তাই তাদের প্রভাব এখন অনেকটা কমে গেছে বলে জানা গেছে।

ঈদুল আযহা তথা কোরবানীর বাজারকে সামনে রেখে গরু মোটাতাজাকরণের হিড়িক পড়েছে কক্সবাজারে। এক্ষেত্রে প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের নজরদারীর অভাবে অসাধু ব্যবসায়ীরা সহজে গরু মোটাতাজাকরণ আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মিয়ানমার ও ভারত থেকে এবারে গরু রপ্তানি কম হওয়ায় এবং মায়ানমার থেকে সীমান্ত বাণিজ্যের আওতায় চাহিদা মতো গরু-মহিষ না আসার কারণে স্থানীয়ভাবে গরুর সংকট তীব্র আকার ধারন করতে পারে। যার প্রভাব পড়বে স্থানীয় হাট-বাজারগুলোতে।

গরু সংকট দেখিয়ে কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলায় মাংস বিক্রি হচ্ছে ৪শ থেকে ৬শ টাকা পর্যন্ত। মাংস বিক্রেতাদের অভিমত, কোরবানীর বাজারে এবার গরু সংকট দেখা দেবে। গরু সংকটের এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গরু মোটাতাজাকরণের সাথে জড়িত বেশ কিছু অসাধু ব্যবসায়ী গৃহপালিত গরু কম দামে ক্রয় করে ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে গরু মোটাতাজাকরণ করছে। বিশেষ করে রামু, সদর, টেকনাফ, উখিয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে এ প্রবণতা প্রকট আকার ধারণ করেছে।

কক্সবাজার প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে প্রতিটি উপজেলায় মনিটরিং করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কোরবানির বাজারে বিক্রি করে বেশি টাকা মুনাফা লাভের জন্য কক্সবাজারের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী গরু মোটাতাজাকরণ করে থাকে।
বিষাক্ত রাসায়নিক ব্যবহারে গরু মোটাতাজাকরণ প্রসঙ্গে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্মকর্তা জানান, কোরবানির গরু দ্রুত মোটাতাজা করতে কিছু অসৎ খামারি বিষাক্ত হরমোন ব্যবহার করছে। খামারিদের বিষাক্ত রাসায়নিক ব্যবহার না করতে সচেতন করা হচ্ছে। কাউকে এসবের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে, টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ করিডোর দিয়ে মিয়ানমার থেকে ট্রলারযোগে ঝাঁকে ঝাঁকে গবাধীপশু আমদানি হচ্ছে, স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই। ২০০৩ সালে শাহপরীরদ্বীপে করিডোরটি স্থাপিত হয়। পশুর খাত থেকে প্রতি অর্থ বছরে কোটি কোটি টাকা সরকারী কোষাগারে জমা হলেও করিডোরে এ পর্যন্ত উন্নয়নের কোন ধরনের ছোঁয়া লাগেনি। মিয়ানমার থেকে আমদানি হয়ে আসা গবাদীপশু শাহপরীরদ্বীপের করিডোরে রোধ বৃষ্টিতে ভিজছে। নেই কোন পশুর আস্তানা । পশুর উপর চলছে অমানবিক আচরণ। টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে জাতীয় পণ্য কোয়ারেন্টাইনের মাধ্যমে গুণগতমান পরীক্ষার মাধ্যমে আমদানি হলেও এখানে গবাদীপশু আমদানি হচ্ছে পরীক্ষা ছাড়াই।

জানা গেছে, টানা ২০ দিন বন্ধ থাকার পর ঈদ-উল আজহাকে সামনে রেখে মিয়ানমার থেকে সাগরপথে কাঠের ট্রলারে করে গবাদিপশু আসা শুরু হয়েছে। গত দুই দিনে ১৬টি ট্রলারে করে মোট ২ হাজার ১২৯টি গবাদিপশু এসেছে।

টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ ক্যাডল করিডোরটি শুল্ক স্টেশনের আওতাধীন একটি পয়েন্ট। মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে গবাদিপশু আসা রোধ করতে ২০০৩ সালের ২৫ মে শাহপরীরদ্বীপে বিজিবির চৌকি সংলগ্ন এলাকায় এই ক্যাডল করিডোরটি চালু করা হয়। আমদানি করা গবাদিপশু প্রথমে বিজিবির তত্ত্বাবধানে রাখা হয়। পরে সোনালী ব্যাংকে চালানের মাধ্যমে রাজস্ব জমা এবং স্থলবন্দরের শুল্ক স্টেশনের অনুমতি নিয়ে করিডোর থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। পাশাপাশি টেকনাফ উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তারও ছাড়পত্র প্রয়োজন হয়।

শাহপরীরদ্বীপ ক্যাডল করিডোরসহ গবাদিপশুর আড়তের বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা বলছেন, চলতি জুলাই মাসে বৈরী আবহাওয়া ও মিয়ানমারের চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে প্রায় ২০ দিন পশু আমদানি বন্ধ ছিল। এতে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির শিকার হন পশু ব্যবসায়ীরা। বৈরী আবহাওয়া কিছুটা কেটে যাওয়ার পর ফের গবাদি পশু আমদানি শুরু হওয়ায় স্বস্তি মিলেছে। বর্তমানে দামও সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। আগামীতে দাম উঠানামা করতে পারে। তবে এভাবে আমদানী অব্যাহত থাকলে আসন্ন কুরবানীর ঈদে পশুর সংকট হবেনা।

টেকনাফ শুল্ক স্টেশন সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার ৩০ জুলাই সকালে করিডোরে ৯টি ট্রলারে ১ হাজার ২৪৪টি গবাদিপশু এসেছে। এতে রাজস্ব আদায় হয় ৬ লক্ষ ২২ হাজার টাকা। এছাড়া সোমবার ২৯ জুলাই এসেছে ৮৮৫টি গবাদি পশু। এ দুই দিনে মিয়ানমার থেকে মোট ২ হাজার ১২৯টি গবাদিপশু আসে। এর আগে চলতি জুলাই মাসে মিয়ানমার থেকে পশু আমদানি হয়েছে ৫ হাজার ৯৬৬টি। এর মধ্যে ৩ হাজার ৪৭০টি গরু এবং ২ হাজার ৪৯৬টি মহিষ।

মিয়ানমার থেকে গবাদিপশু আমদানিকারক সমিতির সভাপতি টেকনাফ পৌর মেয়র আবদুল্লাহ মনির বলেন, বৈরী আবহাওয়ার মাঝেও মিয়ানমার থেকে পশু আসা শুরু হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে কোরবানির ঈদে রেকর্ড সংখ্যক পশু আমদানি হবে। আর আমদানি স্বাভাবিক থাকলে পশুর হাটের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রাজস্ব আয়ও বাড়বে। গবাদিপশু আমদানি এবং কেনা-বেচায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরনের সহযোগিতা পাচ্ছেন সবাই এবং কোথাও কোনও ধরনের সমস্যা হচ্ছেনা। তবে টেকনাফ থেকে শাহপরীরদ্বীপে যাতায়াতে সমস্যা আছে। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে করিডোর সংলগ্ন এলাকায় ব্যাংক এবং শুল্ক স্টেশনের অস্থায়ী বুথ স্থাপন করা গেলে গবাদিপশু আমদানীকারক ও ব্যবসায়ীদের জন্য সুবিধা হতো।

আরেকটি অসমর্থিত সূত্র বলেছে, পশুর বাজারে কোন মনিটরিং নেই। সুতরাং এ সুযোগকে কসাইরা কাজে লাগাচ্ছে। এখনো টেকনাফ স্থল বন্দর নিয়ন্ত্রণাধীন করিডোর দিয়ে আসা গবাদীপশু ও ছাগল হন্ডি ও ইয়াবার টাকা দিয়ে আমদানি হচ্ছে। করিডোরের যে ক’জন গবাদিপশু আমদানিকারক রয়েছেন, তার মধ্যে বেশ কয়েকজন ইয়াবা, হুন্ডি ও কালো ব্যবসার সাথে জড়িত। ওদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগে উঠেছে, এখনো গবাদী পশুর আড়ালে ইয়াবা ব্যবসা চলছে নীরবে।

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry
1

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *